Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসরাইলের সাথে আমিরাতের বাণিজ্য দ্রæত বাড়ছে যে কারণে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০২ এএম

ফিলিস্তিন ইস্যুকে উপেক্ষা করে ইহুদিবাদি ইসরাইলের সাথে দিন দিন বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়িয়ে চলেছে সংযুক্ত মুসলিম প্রধান দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ দুই দেশের মধ্যে দু’বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এক ঐতিহাসিক আব্রাহাম চুক্তি সই হয়েছিল, যাতে যোগ দিয়েছিল আরেকটি উপসাগরীয় দেশ বাহরাইনও। এ চুক্তি অনুযায়ী ইউএই এবং বাহরাইন ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে রাজী হয়েছিল এবং দু’দেশের মধ্যে ক‚টনৈতিক সম্পর্কে স্থাপিত হয়েছিল। বহু দশক ধরে ইসরাইলকে বয়কটের যে নীতি এই উপসাগরীয় দেশগুলো অনুসরণ করতো, এই চুক্তির মাধ্যমে তার অবসান ঘটলো। ইসরাইল সফরে যাওয়া ইউএই›র প্রতিনিধিদলের একজন ছিলেন আমিরাতি বিনিয়োগকারী সাবাহ আল-বিনালি। তেল আবিবে যখন তিনি এই অনুষ্ঠান দেখছিলেন, তখন তার মুখ হাসিতে উজ্জ্বল। তিনি একটি ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ‹আওয়ারক্রাউড আরাবিয়ার› নির্বাহী চেয়ারম্যান। ্রআমরা এখন যা দেখছি, তা ইতিহাস হয়ে থাকবে, মধ্যপ্রাচ্যের দুটি প্রাকৃতিক প্রতিবেশী দেশের মধ্যে আমরা এক দীর্ঘ, গভীর এবং ফলপ্রসূ সম্পর্ক গড়ে উঠতে দেখছিগ্ধ বলছিলেন তিনি। আল-বিনালি মনে করেন, ইসরাইল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে এই ক্রমবর্ধমান ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে সবাই লাভবান হবে। ইসরাইলি এবং আমিরাতি ব্যবসা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার মধ্যে এক ধরণের স্বাভাবিক সমন্বয় আছে। আমাদের এই সহযোগিতা থেকে যে ধরণের ফল আশা করা হচ্ছে, তার চেয়েও অনেক বেশি হবে বলে আমি মনে করি। এখন আমরা লজিস্টিকস, চিকিৎসা প্রযুক্তি, কৃষি প্রযুক্তি এবং সাইবার সিকিউরিটির মতো ক্ষেত্রে যৌথ প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি। এরকম কিছু বিষয়ে কাজ এরই মধ্যে বেশ এগিয়ে গেছে।গ্ধ আল-বিনালি আরও বলছেন, গত মাসের সফরের পর আরও কিছু ব্যবসায়িক চুক্তির ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আব্রাহাম চুক্তির কারণে ইসরাইল এবং ইউএই›র মধ্যে বাণিজ্য যে বহুগুণ বাড়বে, সে বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা একমত। ইসরাইলের প্রযুক্তি খাত খুবই শক্তিশালী, এর পাশাপাশি সামরিক প্রযুক্তিতেও তারা এগিয়ে। ইউএই আবার উপসাগরীয় অঞ্চলে সউদী আরবের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। তাদের অর্থনীতির মূল শক্তি এখনো তেল বেচা অর্থ, কিন্তু তারা এখন অর্থনীতির বহুমুখীকরণের চেষ্টা করছে। আব্রাহাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ইসরাইল অস্ত্র বিক্রির নতুন রেকর্ড করেছে, এমন কথাও শোনা যায়। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, ২০২১ সালে তাদের অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ ১১৩০ কোটি ডলারে পৌঁছায়, আর এর ৭ শতাংশই ছিল ইউএই এবং বাহরাইনে। ইসরাইলের সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোশে ইয়ালোন (২০১৩-২০১৬) বিবিসিকে বলেন, এর কারণ দুই দেশই তাদের অঞ্চলে একই নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে আছে। বিশেষ করে ইরানের কথা উল্লেখ করছেন তিনি। গত দশকে ইসরাইল এবং উপসাগরীয় দেশগুলো এক অভিন্ন শত্রæর মুখোমুখি হয়েছে, বিশেষ করে ইরান এবং তাদের সমর্থনপুষ্ট শক্তির। ফিলিস্তিনি ইস্যুটি যদিও এখনো আছে, এখন আর কোন আরব-ইসরাইলি সংঘাত নেইগ্ধ, বলছেন তিনি। তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের তীব্র নিন্দা করেছে। তারা অভিযোগ করছে, আরব দেশগুলো ফিলিস্তিন ইস্যুতে আসলে ইসরাইলের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। উপসাগরীয় অঞ্চলের বাইরে আরেকটি দেশ মরক্কো ইসরাইলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য একই ধরণের চুক্তি করে। চুক্তি করেছে সুদানও, তবে তাদের চুক্তির অগ্রগতি থমকে আছে। জ্বালানি খাতেও ইসরাইল এবং ইউএই›র মধ্যে অনেক চুক্তি সই হচ্ছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইসরাইলি কোম্পানি নিউমেড এনার্জি (তখন নাম ছিল ডেলেক ড্রিলিং) ঘোষণা করলো যে, তারা ইসরাইলি উপকুলের তামার গ্যাস ক্ষেত্রের ২২ শতাংশ শেয়ার ইউএই›র কোম্পানি মুবাদালা এনার্জির কাছে একশো কোটি ডলারে বিক্রি করে দেবে। নিউমেড এনার্জির এমন এক ক্রেতা খুঁজে পাওয়া দরকার ছিল, যারা সরকারের ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ্রমুবাদালার সঙ্গে যে চুক্তি সই হয় সেটি আমাদের আঞ্চলিক ব্যবসাকে আরও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার যে লক্ষ্য নিয়েছি, এটি তারই অংশ,গ্ধ বলছেন নিউমেড এর প্রধান নির্বাহী ইউসি আবু। মাস ওয়াতাদ একজন ফিলিস্তিনি, তবে ইসরাইলি নাগরিক। তিনি আরবি ভাষার একটি ডায়েটিং অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট ডসাটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রেসিডেন্ট। তিনি তার ব্যবসায়িক অংশীদার টালি জিঙ্গারের সঙ্গে মিলে তাদের ব্যবসা উপসাগরীয় অঞ্চলে স¤প্রসারণ করেছেন, আর এটি সম্ভব হয়েছে আব্রাহাম চুক্তির কারণে। তিনি দাবি করছেন, এই চুক্তিটি পরিস্থিতি একদম বদলে দিয়েছে, কারণ এখন তিনি এবং তার টিম নিয়মিত ইসরাইল এবং ইউএই›র মধ্যে ভ্রমণ করতে পারেন। মিস ওয়াতাদ তার পরিবারকে এখন আবু ধাবিতে নিয়ে এসে সেখানেই বসবাস করছেন। বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ