Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘‌মানারাত ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড দখলমুক্ত না করলে জনগণ রাস্তায় নামবে’

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:৩৮ পিএম

‘আগে শুনেছি গুন্ডারা চর দখল করত। একজনের জমি আরেকজন দখল করত। কিন্তু এখন দেখছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তাও বিশ্ববিদ্যালয় দখল হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় মানারাত ইউনিভার্সিটি দখল করা হয়েছে। অবিলম্বে মানারাত ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড দখলমুক্ত না করলে জনগণ রাস্তায় নামবে।’

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সচেতন নাগরিক সমাজ আয়োজিত অবৈধভাবে মানারাত ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড দখলের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে দৈনিক নয়াদিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, আজ মানারাত বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আরেকটি অন্যায় আমাদের সামনে এসেছে। আগে শুনেছি গুন্ডারা চর দখল করতো। একজনের জমি আরেকজন দখল করতো। কিন্তু এখন দেখছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তাও বিশ্ববিদ্যালয় দখল হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় মানারাত দখল করা হয়েছে। অন্যায়কে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে হবে। মানারাত দখলকারীদের বলবো এমন দিন আসবে যেদিন আপনারা ডুবে যাবেন।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানারাত ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টিবোর্ড অবৈধভাবে দখল ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা বন্ধ করুন। দেশের মানুষ বুঝতে পারছে, ক্ষমতাসীন সরকারের বিদায় খুবই নিকটে। অন্ধকারের পরে আলো আসে এটাই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম, রাতের আঁধার শেষে নতুন সূর্য উদিত হয়। তিনি দেশের জনগণকে এই জাতির ক্লান্তিলগ্নে, জাতির ভাগ্য পরিবর্তনে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল অপতৎপরতা রুখে দিতে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

অধ্যাপক কবি আবদুল হাই শিকদার বলেছেন, আজকের এই মানববন্ধন দেশের শিক্ষা বাঁচানোর আন্দোলন। মানারাতের অপরাধ মানারাত জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ চায়। তারা চোর উৎপাদন না করে দেশপ্রেমিক সমাজ চায়। আজ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর হস্তক্ষেপ হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ ছিলনা। সেই ট্রাস্টি ভেঙে সরকারের দালালদের প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন বিড়ালও পালাবার পথ রাখে। আপনারা কি করতেছেন। অনেক করেছেন। এবার পালাবার পথ খুজেন। এভাবে দখল করে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল, মনিপুর স্কুলকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীকে বলেন, বিকারগ্রস্ত না হয়ে স্বাভাবিক হন। মানারাত ধ্বংস করে আপনার কি লাভ হবে।এই দিন দিন না আরো দিন আছে।

বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজেটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া বলেন, সমাজের অপাংক্তেয় ব্যক্তিদের হাতে শিক্ষা ব্যবস্থা চলে যাওয়ার কারণে আজ গোটা দেশের শিক্ষার উপরে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোকে লুটপাট করছে। তারা মনে করে এখানে নৈরাজ্য করলে ছাত্রছাত্রী কেউ-ই কৈফিয়ত চাইতে আসবে না। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য শিক্ষক, অভিভাবক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতিরোধের বিকল্প কিছু নেই।

নুরুল আমিন রোকন বলেন, যদি আমরা প্রতিরোধ করতে না পারি, যদি আমরা জেগে না উঠি তাহলে একটার পর একটা আমাদের প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাবে। মানারাতের যে ট্রাস্টি বোর্ড ছিল তাদের বিরুদ্ধে কখনো কি কোনো অভিযোগ কেউ করেছে? যে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সামান্যতম কোনো অভিযোগ কখনো কেউ করে নাই, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙ্গে কেন সরকারের পছন্দমতো দালালদের বসানো হয়েছে। সরকারকে অনুরোধ করবো এসব অপতৎপরতা বন্ধ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল মুক্ত রেখে লেখাপড়ার পরিবেশ সুন্দর রাখুন।

ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, অন্যদের তৈরী করা বিশ্ববিদ্যালয় দখলের পরিবর্তে আপনাদের ক্ষমতা থাকলে আরো ১০ টি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে জনগণকে দেখিয়ে দেন। জনতার বিক্ষোভ ও রাস্তায় নামার আগেই পুর্বের ট্রাস্টিবোর্ডের কাছে দায়িত্ব ফিরিয়ে দিয়ে চলে যান। আমরা চর দখলের মতো বিশ্ববিদ্যালয় দখল যেন না হয় বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে দেখার অনুরোধ করছি।

ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক নেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানুষ গড়া হয় সেখানে আজ হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। সব সেক্টর খাওয়ার পর সরকার এখন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ গুলো ধ্বংসে হাত দিয়েছে। আপনাদের দখলে ইডেনে কি অবস্থা তা জাতি দেখেছে। আপামর জনতা এই ষড়যন্ত্র রুখবে। ৪০০০ শিক্ষক কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের জীবন হুমকিতে ফেলে দিয়ে আপনারা শান্তিতে গুমাইতে পারবেন না। নতুন ট্রাস্টি বোর্ড বাতিল করুন। এসব প্রতিষ্ঠান মানুষের রক্তে গড়া। সরকারি টাকায় নয়৷

ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল আমিন বলেছেন, মানারাতের উদ্যোক্তারা রক্ত পানি করে প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন সত্যিকার মানুষ তৈরির জন্য। আজ সেই বিশ্ববিদ্যালয় দখল করা হচ্ছে। এটি লজ্জাজনক। বিশ্বে এমন ইতিহাস নেই। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে এবং মানারাতকে বাঁচানোর স্বার্থে যেকোনো কর্মসূচিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে আজকের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন শেষ হয়।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক, সঞ্চালনা করেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুস সবুর মাতুব্বর। বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সেক্রেটারি সহ দেশের শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ, প্রকৌশলী, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের সাধারণ জনতা অংশ গ্রহণ করেন।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ, প্রকৌশলী, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের সাধারণ জনতা অংশ গ্রহণ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ