Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইঞ্জিনে ত্রুটি নিয়েই যাত্রা করেছিল পাকিস্তানে বিধ্বস্ত বিমানটি

| প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : দুর্ঘটনায় পড়ে বিধ্বস্ত হওয়া পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের বিমানটির ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল। আর তা নিয়েই চিত্রল থেকে ইসলামাবাদে যাত্রী নিয়ে উড্ডয়ন করে বিমানটি। ইঞ্জিনে ত্রুটি থাকার বিষয়টি জানতেন  পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (পিসিএএ) কর্মকর্তারাও।  ইঞ্জিনের ত্রুটি থাকার কথা স্বীকার করেছেন পিসিএএ-এর এক শীর্ষ কর্মকর্তা। এদিকে, বিমানটির যাত্রীদের তালিকা প্রকাশ করেছে পিআইএ। তালিকা অনুসারে বিমানটিতে ৩১ জন পুরুষ, ৯ জন নারী ও ২ শিশু ছিলেন। দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও টিভির খবরে এ কথা বলা হয়েছে। গত বুধবার ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে পিসিএএ-এর সচিব ইরফান ইলাহি সাংবাদিকদের জানান, এটিআর-৪২ টার্বোপ্রব বিমানটির ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল। তিনি বলেন, ‘এখনি নির্দিষ্ট করে কিছু বলা মুশকিল। তবে আমরা জানি যে বিমানটির ইঞ্জিনে সমস্যা ছিল।’ বুধবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ৪২ মিনিটে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের হাভেলিয়ান শহরের কাছে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর চিত্রল থেকে ইসলামাবাদের পথে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই বিমানটি নিখোঁজ হয়। প্রাথমিকভাবে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের তরফে ফ্লাইটটি নিখোঁজের কথা বলা হয়। পরে পুলিশ জানায়, বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ বিধ্বস্ত পাকিস্তানি বিমানের কোনও আরোহী বেঁচে নেই বলে নিশ্চিত করেছে। ৪৮টি লাশ উদ্ধারের কথাও জানানো হয়েছে। তবে পুড়ে যাওয়াতে লাশের পরিচয় শনাক্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। বায়োমেট্রিক পরীক্ষা করে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম। বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর বিমানটির পাইলট জরুরি সহযোগিতার সংকেত পাঠিয়েছিলেন বলে পাকিস্তান সিভিল অ্যাভিয়েশন সূত্র নিশ্চিত করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাইলট জিও টিভিকে জানান, ইঞ্জিনে আগুন লাগার বিষয়ে দুর্ঘটনায় পড়া বিমানটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল। পিসিএএ-এর মহাপরিচালক দুর্ঘটনা তদন্তে একটি কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন বলে সংস্থাটির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন। বিমানের ইঞ্জিনের ত্রুটি থাকার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি জানান, তদন্ত কমিটিই সবকিছু খতিয়ে দেখবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেবে। এর আগে পিআইএ-এর মুখপাত্র ড্যানিয়েল গিলানি জানিয়েছেন, ওই বিমানের ৪৮ আরোহীর মধ্যে বিদেশিসহ ৪২ জন যাত্রী, পাঁচজন ক্রু এবং একজন গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার  ছিলেন। এদের মধ্যে দেশটির জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী জুনাইদ জামশেদ ও তার স্ত্রী এবং চিত্রলের ডেপুটি কমিশনার ওসামা ওয়ারিখ ছিলেন। বিমানটি বিধ্বস্তের পরপরই দুর্ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও হেলিকপ্টার পাঠানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত কাউকেই বাঁচানো সম্ভব হয়নি। বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ থেকে এ পর্যন্ত ৩৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদের উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। পিকে-৬৬১ নামের ওই বিমানটি স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে চিত্রল থেকে উড্ডয়ন করে। ৪টা ৪০ মিনিটে ফ্লাইটটি ইসলামাবাদে বেনজির ভুট্টো বিমানবন্দরে অবতরণের কথা ছিল। তবে এর আগেই যাত্রাপথে বিমানটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সালে একটি সামরিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নরওয়ে, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশীয় রাষ্ট্রদূত এবং মালয়েশীয় ও ইন্দোনেশীয় রাষ্ট্রদূতের স্ত্রীসহ আট জনের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালে ভোজা এয়ারলাইনের বোয়িং ৭৩৭ বিমান ১২১ যাত্রী ও ৬ ক্রু নিয়ে অবতরণের পূর্ব মুহূর্তে বিধ্বস্ত হয়। সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে ২০১০ সালের জুলাই মাসে। ওই সময় বেসরকারি বিমান সংস্থা এয়ারলাইন এয়ার ব্লু-এর একটি বিমান ইসলামাবাদের একটি পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা ১৫২ জনের মৃত্যু হয়। পাকিস্তানের এয়ারলাইন্সের বিমানও এর আগে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় পড়েছে। ১৯৯২ সালে পিআইএ-এর এয়ারবাস এ৩০০ কাঠমা-ুতে বিধ্বস্ত হলে ১৬৭ জনের মৃত্যু হয়। তারও আগে ১৯৬৫ সালে পিআইএ-র বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কায়রোতে ১২৪ জন, ১৯৭০ সালে ইসলামাবাদে ঝড়ের কবলে বিধ্বস্ত হয়ে ৩০ জন, ১৯৭২ সালে রাওয়ালপি-িতে ২৬ জন, ১৯৭৯ সালে পাকিস্তানি হাজিদের নিয়ে সৌদি আরবে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৫৬ জন, ১৯৮৬ সালে পেশাওয়ারে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়ে ৫৪ যাত্রীর ১৩ জন নিহত হন। এছাড়া ১৯৮৯ সালে গিলগিট থেকে ৫৪ জন আরোহী নিয়ে একটি বিমান নিখোঁজ হয়। বিমানটির কোনও ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়নি। সূত্র: জিও টিভি, ডন, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, দ্য নেশন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ