Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নাটকে অশ্লীলতাঃ হুমকির মুখে দেশীয় সংস্কৃতি

রিয়েল তন্ময় | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

সুস্থ ধারার বিনোদন চর্চা বলতে বাংলা নাটকের কথা আগে আসে। একটা সময় পারিবারিক বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল টেলিভিশন নাটক। টেলিভিশনকে বলা হয় ড্রয়িং রুম মিডিয়া। পরিবারের সকলে একসঙ্গে বসে টিভি দেখেন। আজও দর্শকের মনে রয়েছে সকাল সন্ধ্যা, এইসব দিনরাত্রি, বহুব্রীহি, সংশপ্তক, অয়োময়,কোন কাননের ফুল, কোথাও কেউ নেই, রূপনগর, নক্ষত্রের রাত, আজ রবিবার, রঙ্গের মানুষ, উড়ে যায় বকপক্ষী, নুরুল হুদা একদা ভালবেসেছিল, কাছের মানুষ, ভবের হাট, রমিজের আয়না, সাকিন সারিসুরি, হাড় কিপ্টে, আলতা সুন্দরীসহ আরও অনেক শিক্ষণীয় ও মার্জিত নাটক। সময়ের পরিক্রমায় ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে নাটক এখন ড্রয়িং রুমে সীমাবদ্ধ নেই। ইউটিউবসহ বিভিন্ন অ্যাপে এখন নাটক দেখছে দর্শকরা। সেসময় ছিল না ইন্টারনেট ও ইউটিউবের আধিপত্য। ফলে নাটক নির্মাণের সংখ্যা বেড়েছে। তবে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ইউটিউব ভিউ’র পিছনে ছুটতে গিয়ে নাটকে বাড়ছে অশ্লীলতা। অশ্লীল সংলাপ, পোশাক ও বিভিন্ন ধরনের সুড়সুড়ি দৃশ্য দিয়ে দর্শক আকৃষ্ট করার প্রতিযোগিতা চলছে। এগুলো এখন যেন ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। গল্প ও শিল্পীদের চরিত্রের চেয়ে বেশিরভাগ নির্মাতার টার্গেট এখন ইউটিউব ভিউয়ার্স। ভিউয়ার্স বাড়ানোর ্রতিযোগিতায় মেতে তারা যা-তা নির্মাণ করছে। কিছু নাটকের নাম শুনলে মনে হবে না এগুলো কোনো সুস্থ চিন্তার ফসল। যেমন এক্স গার্লফ্রেন্ড, এক্স যখন শালি, এক্স এখন ভাবি, শালী যখন বউ, এক্স এর হাতে অপারেশন, ক্রাশ যখন বেয়াইন, গার্লফ্রেন্ড শুধু খেতে চায়, জামাই আদর, আমি সিঙ্গেল, আইটেম বয়, পেইনফুল গার্লফ্রেন্ড, ছাত্রী যখন বউ, এক্স ওয়াইফ যখন আপন শাশুড়ি, গার্লফ্রেন্ড যখন অজ্ঞান, বান্ধবী যখন শাশুড়ি, প্লেবয়, ফাউ গার্ল গার্লফ্রেন্ডের চাপ, বউ তো নয় যেন সিসি ক্যামেরা, বেড সিন, সেন্ড মি নুডস প্রভৃতি। নাটকগুলোর এমন নাম শুনে রীতিমতো বিস্ময় ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন নাট্যজনেরা। এ সময়ের কয়েকজন পরিচালকও এ ধরনের নামের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অনেকে নাটকের এমন উদ্ভট ও অরুচিকর নামকরণকে পরিচালকদের সৃজনশীলতা ও শিক্ষার অভাবকে দায়ী করছেন। এ ছাড়া এসব নাটকে অনেক দর্শকপ্রিয় শিল্পীদেরও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি দেখা যায়। স¤প্রতি ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নামে একটি নাটকের কয়েকটি পর্ব নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় তুমুল সমালোচনা হয়। বিতর্কের মধ্যে পড়ে কর্তৃপক্ষ ইউটিউব থেকে নাটকটির চার পর্ব সড়িয়ে নিতে বাধ্য হয়। দর্শকদের চাহিদা ও রুচির প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান রেখে পরবর্তীতে দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী নাটক উপহার দিবেন বলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতেই কি সমাধান হবে? বর্তমানে টিভি নাটকের চেয়ে ইউটিউবের জন্য যেসব নাটক নির্মাণ হচ্ছে সেগুলোতেই অশ্লীলতা বেশি দেখা যায়। ইউটিউব মুক্তবাজার। যে কারো স্বাধীনতা আছে এ মাধ্যমে কনটেন্ট নির্মাণ করার। এ মাধ্যমে নেই কোনো সেন্সরশিপ। ফলে নতুন নির্মাতারা এই সুযোগ নিচ্ছে বলে মনে করছেন নাট্যবোদ্ধারা। তারা মনে করেন, শুধু অভিনয় ও নির্মাণ করলেই চলবে না। শিল্পী ও নির্মাতাদেরও সমাজ এবং দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। সমাজ ও তরুণদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এই ধরনের নাটকে অভিনয় থেকে শিল্পীদের দূরে থাকা উচিত। নির্মাতাদেরও ভালো নাটক নির্মাণের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, তরুণ নির্মাতাদের মধ্যে এখন ভিউয়ের প্রতিযোগিতা চলছে। ভিউয়ের দিক থেকে এগিয়ে থাকতে হবে, এই মানসিকতা থেকে নির্মাতাদের বের হয়ে আসতে হবে। দর্শক অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট খায়, এমন ভাবনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ভালো কন্টেন্টে ভিউ কম হলেও তৃপ্তি থাকে একজন নির্মাতার। তাহলে নাটকে স্থিতিশীলতা আসবে। ক্রাউন এন্টারটেইনমেন্টের কর্ণধার বলেন, নাটক হচ্ছে সুস্থ বিনোদনের একটা শক্তিশালী মাধ্যম। আমরা এটাকে নিজেদের ইচ্ছে মতো কিংবা অতি মুনাফার লোভে অ্যাডাল্ট কনটেন্ট-এর তকমা জুড়ে দিতে পারিনা। যে নির্মাতারা নাটকে অ্যাডাল্ট কনটেন্ট জুড়ে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এ নিয়ে বিবেকস¤পন্ন মানুষেদের প্রতিবাদী হয়ে উঠা দরকার। তারা বলছেন, আমরা নাটক নির্মাণ করি মানুষকে সুস্থ বিনোদন দেয়ার প্রত্যাশায়। পরিবারের সদস্যদের, বিশেষ করে শিশুদের গালাগাল শেখাতে নয়। যারা নাটকের নামে স্বঘোষিত অ্যাডাল্ট কনটেন্ট নির্মাণ করে সমাজে অনৈতিকতা ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে। নাটকে অশ্লীল সংলাপ দিয়ে ভাইরাল হয়ে যাওয়া শিল্পীদের প্রসঙ্গ টেনে নাট্যনির্মাতা আকাশ রঞ্জন বলেন, যে নাটক করার পর মা-বাবার পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠে, এর চেয়ে লজ্জা আর কি হতে পারে? একসময় সিনেমায় অশ্লীলতা ঢুকেছিল, এখন নাটকে ঢুকে গেছে। এর প্রতিকার হওয়া দরকার। আমি আমার জায়গা থেকে বলতে পারি, যারা অশ্লীল সংলাপ দিয়ে ভাইরাল অভিনেতা-অভিনেত্রী হতে চায় তাদের কখনো আমার নাটকে নিবো না। অনেক নির্মাতা বলছেন, শুধু শুধু অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য কিছু বলার মধ্যে সাহসিকতার কিছু নেই। নাটক আমাদের সমাজের কথা বলে। এখানে সমাজের অনেক কিছু তুলে ধরার সুযোগ আছে। তবে সেটির উপস্থাপনায় অবশ্যই শৈল্পিক ব্যাপারটা থাকতে হবে। সমাজের কথা বলতে গিয়ে নিজের খেয়াল-খুশিমতো কিছু করার কোনো মানে হয় না। সুস্থ উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে নাটকে সমাজের অনেক অসঙ্গতি নির্মাতারা দর্শকের সামনে নিয়ে আসতে পারেন। এই সময়ে আমাদের নাটকের মান কমে গেছে। নাটক সংশ্লিষ্ট অনেকের অভিমত, প্রতিযোগিতার নামে কোনো কোনো নির্মাতা কিংবা অভিনয়শিল্পী অকারণে এত বেশি খোলামেলা হচ্ছে যে, তা চোখে লাগার মতো। তারা খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। দেশের নাটক সুস্থভাবে তুলে ধরতে হলে এগুলো থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

 



 

Show all comments
  • আকিব ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৮:১৮ এএম says : 0
    এদের সবাইকে আইনের আওতায় আবা দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • আকিব ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৮:১৮ এএম says : 0
    সব কয়েকটি ফালতু এক্টর, এদের কারণে সমাজ নষ্ট হচ্ছে, এখনি সময় এদের কে আইনের আওতায় আনার।
    Total Reply(0) Reply
  • আকিব ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৮:১৮ এএম says : 0
    যারা চায় যে, ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতা প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। সূরাঃ আন-নূর, আয়াতঃ ১৯
    Total Reply(0) Reply
  • আকিব ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৮:১৯ এএম says : 0
    ধন্যবাদ ইনকিলাব কে সত্য রিপোর্ট প্রকাশিত করার জন্য
    Total Reply(0) Reply
  • MOSTAFIZUR ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১০:৩১ এএম says : 0
    bortoman sorkar ar jonno daye
    Total Reply(0) Reply
  • আকিব ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৮:১৭ এএম says : 0
    কাবিলা,মারজুক রাসেল,সাবিলা নূর, পরিচালক অমি সহ গংদের বিচারের আওতাভুক্ত আনা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • আকিব ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৮:১৮ এএম says : 0
    এই সকল নাটক বয়কট করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • আকিব ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৮:১৪ এএম says : 0
    আমরা সবাই হিরো আলমকে দোষারপ করি কিন্তু এসব অভিনেতা, অভিনেত্রী, পরিচালকেরা দিনের পর দিন বিনোদনের আড়ালে দেশের ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিকে নষ্ট করছে তার ব্যপারে বেখবর।
    Total Reply(0) Reply
  • Habibullah ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৩:০১ এএম says : 0
    ফেসবুক, ইমো, টিক -টকের মতো সব সোশ্যাল মিডিয়া বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা উচিত। 99% পারিবারিক কলহ এবং বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে। এছাড়াও অনেক ভারতীয় চ্যানেল সর্বদা অনৈতিক জিনিস দেখায় যা মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ