Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

গণতন্ত্র সুশাসন মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে

বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পরামর্শ

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:০৮ পিএম | আপডেট : ৮:৩৭ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ সম্পর্কে সচেতন নয় 

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কোম্পানি বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে ব্যবসা প্রসারিত করতে চায়। কিন্তু তারা বিনিয়োগের আগে দেশে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ আছে কি না, তা জানতে চায়। পাশাপাশি শ্রমের মানোন্নয়ন, পরিবেশ, গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা, সহনশীলতা, সুশাসন ও মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো নিয়েও এই বিনিয়োগকারীরা চিন্তিত। তাই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে নীতিনির্ধারকদের এসব বিষয় নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে এমন একটি ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করতে চাই, যা বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই আরও ভালোভাবে জানতে হবে, তাদের জন্য বাংলাদেশে কী ধরনের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশকে অবশ্যই আমেরিকান ব্যবসাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত থাকতে হবে। কেননা মার্কিন ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ সম্পর্কে একদমই সচেতন নয়।

মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পিটার হাস এসব কথা বলেন। আইবিএফবির সভাপতি হুমায়ুন রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার।

অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকারী। পাশাপাশি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি গন্তব্যও যুক্তরাষ্ট্র। তাই দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

অনেক মার্কিন কোম্পানি এ অঞ্চলে ব্যবসা প্রসারিত করতে চায় জানিয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, এ ক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশকে একটি ভালো ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করে যাচ্ছি।

খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ থেকে প্রথমবারের মতো একজন পূর্ণকালীন অ্যাটাশেকে অচিরেই স্বাগত জানাবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি প্রত্যক্ষ যোগাযোগ গড়ে উঠবে। সত্যি বলতে যা আরেও আগেই হওয়া দরকার ছিল।

পিটার হাস বলেন, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ও অর্থনৈতিক শাসনকে শক্তিশালী করার আইবিএফবির লক্ষ্যগুলোকে জোরালোভাবে সমর্থন করি। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনের এ সময়ে আমরা দূতাবাসের পক্ষ থেকে পাঁচটি মূল উদ্দেশের প্রতি দৃষ্টিপাত করছি।

রাষ্ট্রদূত বলেন, এগুলোর মধ্যে প্রথমত একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র; দ্বিতীয়ত, এমন একটি বাংলাদেশ যা গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা, বহুত্ববাদ, সহনশীলতা, সুশাসন ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল; তৃতীয়ত, সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে সহনশীল বাংলাদেশ নিশ্চিত করার কথাও বলেন তিনি। চতুর্থত, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। যতক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন সম্ভব না হয়, ততক্ষণ এ সমর্থন থাকবে। প্রথম চারটি লক্ষ্যের প্রতিটি লক্ষ্য আমাদের পঞ্চম লক্ষ্যের ভিত্তি, টেকসই ও বিস্তৃত পরিসরে পারস্পরিক সমৃদ্ধি অর্জন, শ্রম মানের উন্নয়ন, অর্থনীতির সম্প্রসারণ ও বৈচিত্রময়করণের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করছে। পাশাপাশি এটিকে বৃহত্তর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাণিজ্য ও সংযোগের পরিসর বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করছে বলে জানান মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

পিটার হাস বলেন, বেশির ভাগ আমেরিকান কোম্পানির প্রধানরা সকালে একথা ভেবে ঘুম থেকে উঠেন না, ‘হুমÑ আমার বোধহয় বাংলাদেশে ব্যবসা করা উচিত’। তারা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যবসা করার মাধ্যমে নিজেদের ব্যস্ত রাখেন। তারা যদি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে চান তাহলে বলা যায় তারা সেখানেই ব্যবসা করতে যাবেন যেখানকার বাজার তারা বোঝেন। তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে একদমই সচেতন নয়। তবে এই গ্রুপের সদস্যরা জানেন, বাজার খুঁজে পাওয়ার সুযোগ নিতে বাংলাদেশের দিকে তাকানোর জোরালো কারণ রয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ তাদের মনোযোগ আকর্ষণের যোগ্য।

পিটার হাস বলেন, আমাদের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সকল ক্ষেত্রে আমি নিশ্চিত যে, আমরা অর্থনৈতিক বিষয়গুলোতে আরও দ্রুততার সাথে বহুদূর যেতে পারি। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশ। আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি গন্তব্য। ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল বাংলাদেশে ব্যবসার সুযোগগুলো খুঁজে দেখার জন্য গত মে মাসে ঢাকায় একটি উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধি দল নিয়ে এসেছিল। এছাড়াও আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলকে গত জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত উচ্চ-স্তরের অর্থনৈতিক ফোরামে স্বাগত জানিয়েছিলাম।

রাষ্ট্রদূত বলেন, চলতি বছরের শেষের দিকে একটি ইউএস বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরামের বৈঠকের অপেক্ষায় আছি। এক কথায় বলতে পারি, আমরা একত্রিতভাবে যে ভিত্তি গড়ে তুলেছি সেখানে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে।

পিটার হাস বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এ দেশের জিডিপি এমনকি করোনালকডাউনের সময়েও বেড়েছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মতে অর্থনীতি আগামী বছর ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, দেশের আর্থিকখাতের নেতারা ভালভাবে ঋণ ব্যবস্থাপনা করতে পারছেন। তারা ইউক্রেনে রাশিয়ার বিনা প্ররোচনায় আক্রমণের ফলে সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতির চাপ সামলানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছেন। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক যেমনটা উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরও সংস্কারের দরকার রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

পিটার হাস বলেন, সংগঠন হিসেবে আইবিএফবি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও অর্থনৈতিক শাসনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। এসব কাজে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আছে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইবিএফবির সাবেক সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, হাফিজুর রহমান খান, সহ-সভাপতি এম এস সিদ্দিকী, আইবিএফবি চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ