গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
আজ ২৭ সেপ্টেম্বর । বিশ্ব পর্যটন দিবস । ১৯৮০ সাল থেকে জাতিসংঘের অধীনস্থ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার ইউএনডব্লিউটিও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সকল সদস্য দেশে দিবসটি পালন করা হচ্ছে । বাংলাদেশও যার বাইরে নয় । ২০২২ সালে পর্যন্ত দিবস উপলক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিনব্যাপি বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডসহ বিভিন্ন সংস্থা দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ আদম তমিজী হক এক নিবন্ধে এসব কথা লিখেন। তার লেখাটি তুলে ধরা হল :
২০২২ সালে বিশেষ দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো- ‘পর্যটনে নতুন ভাবনা’। এবারের প্রতিপাদ্য নিয়ে কিছু কথা বলার আছে । এটা ঠিক , সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের অনেকটাই বিকাশ ঘটছে । এখন যে কোন ছুটির দিন সমুদ্র সৈকত কিংবা পাহাড়ে লক্ষ্য করা যায় বেড়াতে আসা মানুষের উপচে পড়া ভিড় । একটা সময় বাংলাদেশে পর্যটন এলাকা বলতে শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত , সিলেট আর রাঙ্গামটি এলাকাকেই চিনত মানুষ । কিন্তু বর্তমানে বান্দরবনের সাজেক , কুয়াকাটা , সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চল , সুন্দরবন ব্যাপক জনপ্রিয় । সাথে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন অনেক দুর্গম এলাকা । যা আরও বিস্তৃত করছে বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনা।
কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে , আমরা এখনও বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারছি না । অথচ পর্যটন দিবসের উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তোলা।সেটা আমরা আমরা পারছি না । ইউরোপ-আমেরিকার কথা বাদ দিলেও মালদ্বীপ , থাইল্যান্ড , সিঙ্গাপুর , মালয়েশিয়া এখন সারা বছর বিদেশী পর্যটকে মুখর থাকে । এমনকি , পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বার্ষিক আয়ের একটা উল্লেখযোগ্য উৎস বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমণ । সেই তুলনায় আমরা অনেকটাই পিছিয়ে । বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় যে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায় , তার মধ্যে বিদেশী পর্যটক খুঁজে পাওয়া যায় হাতেগোনা ।
দেশের পর্যটক অবশ্যই প্রয়োজন । পর্যটক খাতের আয় বাড়াতে দেশীয় পর্যটকদের অবদান অনস্বীকার্য । কিন্তু এটাও ঠিক , বিদেশী পর্যটক যত বাড়বে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ তত বৃদ্ধি পাবে । তবে বিদেশী পর্যটকদের আগ্রহ বাড়াতে দিতে হবে বাড়তি কিছু সুবিধাও । বিদেশী পর্যটকদের বিশাল অংশ মুক্তচিন্তা আর পোশাকের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী মানুষ । ধরা যাক , কোন পর্যটক সে নারী কিংবা পুরুষ , কক্সবাজার সমুদ্র-সৈকতে বেড়াতে এসেছে । তারা স্বাভাবিকভাবেই সমুদ্র জলে অবগাহনে নামবে তাদের সাচ্ছন্দ্যের পোশাকে । এটা মেনে নেয়ার মতো সমাজ আমাদের আছে কিনা সেটা নিয়ে থাকছে প্রশ্ন । স্বল্প-বসনের পর্যটকদের 'হাঁ' করে দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় বিচিত্র না । এমনকি , তারা আমাদের তথাকথিত শালীন-পোশাকের সমর্থকদের রোষের মুখে পড়তে পারেন , এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না ।
এছাড়া আছে হারাম-হালাল পানীয় নিয়ে সমস্যা । মুসলিম দেশ হিসেবে এই দেশে মদ-বিয়ার নিষিদ্ধ । কেউ তা প্রকাশ্যে পান করতে পারেন না । কিন্তু প্রমোদ ভ্রমণে আসা বিদেশী পর্যটকরা এই সুবিধা চাইবে । তাহলে কি করা যায় ? সেই ক্ষেত্রে প্রতিটা পর্যটন এলাকায় বিদেশী টুরিস্টদের জন্য আলাদা 'জোন' ভাগ করে দেয়া সবচেয়ে সহজ সমাধান । যেখানে আমাদের সাধারণের প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ থাকবে । বিদেশী পর্যটকরা তাদের ইচ্ছেমত স্বাধীনভাবে বিচরণ করবে । আবার পাহাড় কিংবা হাওর এলাকাতেও একই পন্থা অনুসরণ করা যায় । তাতে বিদেশীরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে । তাদের উৎসাহ বাড়বে বাংলাদেশের পর্যটনে ।
এইক্ষেত্রে দুবাই কিংবা সৌদি আরবের কথা উদাহরণ হিসেবে বলা যায় । মুসলিম দেশ হয়েও তারা পর্যটকদের বিষয়ে অনেক উদার । সৌদি আরবের জেদ্দায় হালাল নাইট-ক্লাব পর্যন্ত খোলা হয়েছে ।
এবার আমাদের দেশের মানুষের কথায় আসা যাক । আমরা কি আদৌ পর্যটক হতে পেরেছি ? মনে হয় না । হ্যাঁ , এখন আমাদের ঘুরে বেড়াবার প্রবণতা বেড়েছে । খানিক অবসর পেলেই আমরা ছুটে যাচ্ছি বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় । কিন্তু সেই তুলনায় পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা আমাদের নেই বললেই চলে । আমরা সমুদ্রের পাড় ভরে ফেলছি আবর্জনায় । পলিথিনসহ আমাদের নানা ব্যবহার্য সামগ্রী ফেলে আসছি পর্যটন এলাকায় । এতে ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ । ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ।
মালদ্বীপেসহ এশিয়ার অনেক দেশের সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ব্যবহার্য সামগ্রী ফেলে আসা নিষিদ্ধ । তাদের নিজেদের খাবারের প্যাকেট কিংবা অন্যান্ বর্জ্য নিয়ে ফিরতে হয় সাথে করে । তারপরেও যা রয়ে যায় , প্রতিদিন বেলাশেষে তা পরিচ্ছনতাকর্মীদের নিয়ে অপসারণ করা হয় । আসলে পর্যটনের মুল ভিত্তি হচ্ছে পরিবেশ । সেটা রক্ষা করতে না পারলে এক সময় মুখ থুবড়ে পড়বে আমাদের পর্যটনশিল্প ।
পরিশেষে বলতে চাই , বর্তমান সরকার পর্যটন শিল্পের বিকাশে নতুন নতুন অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে । আর স্বপ্নের পদ্মাসেতু তো পর্যটন শিল্পে খুলে দিয়েছে অপার সম্ভাবনার দ্বার । এখন বরিশাল , খুলনার সাথে সড়কপথে যোগাযোগ হয়েছে অনেক সহজ । এখন দুইদিনে কুয়াকাটা , সুন্দরবন দেখে ঘুরে আসা যায় । কিছু আগেও আসা-যাওয়ায় যে সময় লাগত । পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে পর্যটন আরও সমৃদ্ধ হবে । এখন শুধু প্রয়োজন কিছু সাহসী সিদ্ধান্ত । যা দেশী পর্যটকদের সাথে সাথে আকৃষ্ট করবে বিদেশীদের । তাদের বিদেশী মুদ্রার প্রবাহ বাড়বে । আমরাও নিজেদের দাবী করতে পারব সতিকারের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ।
সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে যেয়ে মুসলিম অধ্যুষিত আমাদের মানুষগুলো যেন আঘাতপ্রাপ্ত না হন। তাঁদেরকে বোঝাতে হবে যে, ফরেন জোন করে আমরা আমাদের মত থাকি, তাঁরা তাঁদের সংস্কৃতি নিয়ে চলুক। তাহলেই কেবল আমরা শুধুমাত্র পর্যটন শিল্প দিয়েই যে রাজস্ব আদায় করতে পারব, তা দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের তিন বেলা আহারের ব্যবস্থা করা যাবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নামক সংস্থার মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েছে। এক যুগ পর কক্সবাজার পুরোটাই বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে বলে অনুমিত হয়। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও জোন করা হয়েছে। সুফল আসবেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই পর্যটন শিল্পের পরিপূর্ণ বিকাশ হবে বলে মনে করার সুযোগ আছে। রাত পেরুলেই মহান এই নেত্রীর জন্মদিন। বাংলাদেশের মা তিনি। একজন সন্তান হয়ে আমি শুধু তাঁর শারীরিক সুস্থতা কামনা করি। তিনি বেঁচে থাকলেই পথ হারাবে না বাংলাদেশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।