পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টাকার বিনিময়ে সেবা কিনে ঠকছেন মোবাইল ফোন গ্রাহকরা। ভয়েস কল কিংবা ইন্টারনেট কোনটিতেই মানসম্পন্ন সেবা দিতে পারছে না মোবাইল কোম্পানিগুলো। তাদের বাজে নেটওয়ার্কের কারণে মিউট কল (কথা শোনা যায় না) কিংবা কলড্রপের (কথা বলতে বলে কেটে যাওয়া) শিকার হয়ে একই কলের জন্য একাধিকবার টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে গ্রাহককে। শুধু কলড্রপের কারণেই বছরে ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে গ্রাহকদের। অপারেটরগুলোর এমন সেবায় সাধারণ গ্রাহকদের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ খোদ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। গতকাল সোমবার টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা- বিটিআরসিতে মোবাইল ফোনে কলড্রপ, কলড্রপ সংক্রান্ত তথ্যাদি এবং গ্রাহককে টকটাইম ফেরত প্রদানের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ প্রদানের নিমিত্ত অপারেটরদের জন্য নতুন নির্দেশিকা চালু করতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ক্ষোভের কথা বলেন তিনি।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, আমি ক্ষতিপূরণ চাচ্ছি না, আমি চাই যে সেবার জন্য টাকা দিচ্ছি সেই কাক্সিক্ষত, মানসম্পন্ন সেবা। কিন্তু সেই সেবা না দিয়ে অপারেটররা গ্রাহকদের ঠকাচ্ছে। এমনকি তারা এক সময় ক্ষতিপূরণ দিত এখন সেটাও বন্ধ করে দিয়েছে।
ক্ষতিপূরণ কোন সমাধান নয় জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, কলড্রপ বা নি¤œমানের সেবা পেলে যে মানসিক অশান্তি হয়, সময় অপচয়, সেবা পাচ্ছি না সেই ক্ষতি টাকা দিয়ে পোষানো যাবে না। তিনি বলেন, অপারেটরদের হাজার হাজার সাইট (টাওয়ার) আছে যেখানে সক্ষমতার চেয়ে বেশি গ্রাহক রয়েছে। সেখানে তো সেবার মান খারাপ হবেই। এই সক্ষমতা বাড়ানোর দায়িত্ব অপারেটরদের। কিন্তু তারা সেটি না করে নি¤œমানের সেবা দিয়ে গ্রাহকের সাথে প্রতারণা করছে। মানন্নোয়ন না করলে ব্যবসা থাকবে না বলেও তাদেরকে সতর্ক করে দেন মন্ত্রী।
বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, কলড্রপের কারণে বছরে গ্রাহকের ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) মানদÐ অনুযায়ী প্রতি মেগাহার্টজে ৫ লাখ গ্রাহককে সেবা দিতে হবে। কিন্তু দেশে গ্রামীণফোন প্রতি মেগাহার্টজে সেবা দিচ্ছে ১৭ লাখ গ্রাহক, রবি ১২ লাখ ও বাংলালিংক ৯ লাখ গ্রাহক।
কমিশনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, কলড্রপের কারণে একদিকে যেমন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, সাথে সাথে নি¤œমানের সেবার অভিজ্ঞতা, কথা বলার সময় গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত মিস করা, সময় নষ্ট এবং পুনরায় কল করার মতো বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা।
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে গ্রামীণফোনের ৪ কোটি ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৪১টি। এর মধ্যে অন নেট কলড্রপ ৯৬ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং অফ নেট ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। একই মাসে রবি আজিয়াটার মোট কলড্রপ হয়েছে ৫ কোটি ৮০ লাখ ৩৬ হাজার ৭০৯টি। এর মধ্যে অন নেট ড্রপ ৫৭ দশমিক ১১ শতাংশ এবং অফ নেট ৪২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। জুন মাসে বাংলালিংকের কলড্রপ হয়েছে ১ কোটি ৮৩ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৫টি। অন নেট ৩৮ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং অফ নেট ৬১ দশমিক ০৯ শতাংশ।
বিটিআরসির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, মে মাসে গ্রামীণফোনের একজন গ্রাহকের অন নেট কলের একটি করে কলড্রপ হয়েছে ৬৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ, দ্বিতীয়বার হয়েছে ১৮ দশমিক ০৬ শতাংশ, ৩বার হয়েছে ২ দশমিক ৮২ শতাংশ, ৪টি কলড্রপ ২ দশমিক ৮২ শতাংশ, ৫টি ড্রপ হয়েছে ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ৬টি হয়েছে দশমিক ৮৭ শতাংশ, ৭টি হয়েছে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অর্থ্যাৎ ১ থেকে ৭টি কলড্রপ হয়েছে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। রবির একটি ড্রপ ৫৮ দশমিক ৬১ শতাংশ, ২টি ১৯ দশমিক ২৫ শতাংশ, ৩টি ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ, ৪টি ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ, ৫টি কলড্রপ ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ৬টি ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, ৭টি ১ দশমিক ১৫ শতাংশ। অর্থ্যাৎ ১ থেকে ৭টি কলড্রপ হয়েছে ৯৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। বাংলালিংকের ১টি কলড্রপ ৭১ দশমিক ২০ শতাংশ, ২টি ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ৩টি ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ, ৪টি ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ৫টি ১ দশমিক ৩০ শতাংশ, ৬টি দশমিক ৭৬ শতাংশ, ৭টি দশমিক ৪৬ শতাংশ। অর্থ্যাৎ ১ থেকে ৭টি কলড্রপ হয় ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। মে মাসে সর্বমোট অন নেট কলড্রপ হয় ৭ কোটি ৯৯ লাখ ৬৬ হাজার ৩৩২টি। সিঙ্গেল ড্রপ হয়েছে ৫ কোটি ১৮লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৭টি।
কলড্রপের নতুন নির্দেশনা : কলড্রপের ক্ষতিপূরণ নির্দেশনা উপস্থাপন করে বিটিআরসি’র সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ জানান, এখন গ্রাহকরা (*১২১*৭৬৫#) কোডের মাধ্যমে একজন গ্রাহক পূর্ববর্তী দিন/ সপ্তাহ/মাসিক অন-নেট কলড্রপের পরিমাণ জানতে পারবে। অন-নেট কলড্রপের ক্ষেত্রে গ্রাহকের আর্থিক এবং মানসিক ক্ষতি বিবেচনায় ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতকরণ ও সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্ত ক্ষতিপূরণ হিসেবে দৈনিক ১ম ও ২য় কল ড্রপের ক্ষেত্রে প্রতি কল ড্রপের জন্য ৩টি পালস (৩০ সেকেন্ড) এবং পরবর্তী ৩য় থেকে ৭ম কল ড্রপের ক্ষেত্রে প্রতিটি কলড্রপের জন্য ৪টি পালস (৪০ সেকেন্ড ) গ্রাহককে টকটাইম ফেরত প্রদান করবে এবং একই সাথে নিমোক্ত শর্তাদিও অনুসরণ করতে হবে। ফেরতপ্রাপ্ত টকটাইম পরবর্তী দিনের প্রথম কল থেকেই ব্যবহারযোগ্য হবে অর্থাৎ ফেরতপ্রাপ্ত টকটাইমসমূহ সর্ম্পণূরূপে ব্যবহার হওয়ার পূর্বে গ্রাহকের একাউন্ট হতে কল বাবদ কোনো টাকা কর্তন করা যাবেনা। কল ড্রপের ফলে ফেরতকৃত টকটাইমের বিষয়ে গ্রাহককে এসএসএম এর মাধ্যমে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে অবহিত করতে হবে। কল ড্রপের ফেরত প্রাপ্ত টকটাইম ব্যবহারের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ দিন মেয়াদ প্রযোজ্য হবে।
মোবাইল ফোনে কলড্রপ কখনো কাম্য নয় মন্তব্য করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. খলিলুর রহমান বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে মানসম্পন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য অপারেটরদেরকে নজর দিতে হবে। ভয়েস কলের উন্নতির পাশপাাশি ডাটা স্পিড এর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অপারেটরদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, মোবাইল অপারটেররা ব্যবসায়ে যতটা আগ্রহী, কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিতে ততটা আগ্রহী নয়।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ২০২১ এবং ২০২২ সালে তরঙ্গ নিলাম ও টাওয়ার শেয়ারিং গাইডলাইন চালুর পাশাপাশি মোবাইল অপারেটর এবং এনটিটিএন অপারেটদের মধ্যে সাথে দূরত্ব কমানোর কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিটিএস সাইট এর সক্ষমতার তুলনায় কোনো কোনো এলাকায় গ্রাহক বেশি হওয়ায় কলড্রপ বেশি হচ্ছে উল্লেখ করে সেসব জায়গায় সক্ষমতা বাড়াতে অপারেটরদের প্রতি আহবান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগের মহাপরিচালক, কমিশনারবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া অপারেটরদের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।