Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তিন দিন নয়, ইন্টারনেট ১৫ দিন না থাকলে অর্ধেক বিল

বিটিআরসির নতুন নির্দেশনা গ্রাহকের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় এমন নির্দেশনা কমিশন দিতে পারে না : মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

এক দেশ এক রেট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা ঘোষণার পর টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) পক্ষ থেকে বলা হয়, এক দিন অব্যাহতভাবে ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন থাকলে মোট বিলের ৫০ ভাগ নিতে পারবে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। দুই দিন অব্যাহতভাবে ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন থাকলে মোট বিলের ২৫ ভাগ নেওয়া যাবে। আর টানা তিন দিন অব্যাহতভাবে ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন থাকলে ওই মাসের কোনও মাসিক বিল গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া যাবে না। গত ৫ অক্টোবর এই ঘোষণা দেয়ার পর গত ১১ নভেম্বর আগের সেই নিয়ম সংশোধন করে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি। নতুন নিয়মে তিনদিন নয়, টানা ১৫দিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকলে গ্রাহককে বিল দিতে হবে না।

পুরনো নিয়ম সংশোধন করে নতুন নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, টানা পাঁচ দিন অব্যাহতভাবে ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন থাকলে মোট বিলের ৫০ ভাগ নিতে পারবে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। আর টানা ১০ দিন ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন থাকলে মোট বিলের ২৫ ভাগ নেওয়া যাবে। নতুন নির্দেশনা পাওয়ার কথা স্বীকার করে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এর সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক বলেন, আমাদের সাথে কোন রকম আলোচনা ছাড়াই প্রথমে সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল, এছাড়া আগের নির্দেশনায় কিছু গ্যাপ ছিল। পরবর্তীতে আমরা বিটিআরসিতে আবেদন করেছিলাম, অনুরোধ করেছিলাম সংশোধনের জন্য। সেই প্রেক্ষিতে বিটিআরসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে এক দেশ এক রেট বাস্তবায়ন আরও সহজ হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেদিন চিঠি ইস্যু হয়েছে সেদিন থেকেই এই নিয়ম কার্যকর হবে।

তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, আমাদের দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের যে অবকাঠামো তাতে করে একটানা নিরবছিন্ন ইন্টারনেট সেবাদান কঠিন কাজ। অনেক সময় এমন অনেক কাজের জন্য ক্যাবল কাটা যায় যে মেরামত শেষে পুনরায় সংযোগ দিতে অনেক সময় লাগে। ফলে আমি মনে করি নতুন নির্ধারিত সময়টা সেবাদাতা ও সেবাগ্রহীতা দুই পক্ষের জন্যই ভালো হয়েছে।

এদিকে সংশোধিত নির্দেশনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। গ্রাহকের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় এমন নির্দেশনা বিটিআরসি দিতে পারেনা বলেও মনে করেন তিনি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, কমিশনের কাজ সবার আগে গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা করা এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কাজ করা। কিন্তু বিটিআরসি এ নির্দেশনার মাধ্যমে কেবলমাত্র আইএসপি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করেছে। এমনকি ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯এর ৪৫ধারা অমান্য করেছে। এই আইনে বলা আছে প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করিলে এক বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দণ্ডিত করার বিধান আছে। বিটিআরসির এই নির্দেশনায় দীর্ঘদিন ইন্টারনেট-সেবা না থাকলে গ্রাহক যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হলো তার বিপরীতে গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ কিংবা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কারণ দর্শানো জরিমানা করার কোন নির্দেশনা নেই। এ সকল নির্দেশনা কেবলমাত্র লোক দেখানো এবং হাস্যকর বটে।

তিনি বলেন, মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে বা কল ড্রপ হলে সে ক্ষেত্রে আইটিইউ (ইন্টার ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন) এমনকি বিটিআরসির গাইডলাইনে বলা আছে, দুই শতাংশের বেশি কল ড্রপ করা যাবে না। এর অতিরিক্ত হলে গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ২০১৮ সালে আমাদের রিটের ভিত্তিতে মহামান্য হাইকোর্ট নির্দেশনা প্রদান করেছেন কল ড্রপ বা সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে তার ক্ষতিপূরণ গ্রাহককে দিতে হবে। এ সকল আইন ও নির্দেশনা থাকা সত্ত্বে ও কমিশনের এসকল নির্দেশনা টেলিকম সেক্টরে আরও বিশৃংখলা সৃষ্টি করবে।

মুঠোফোন গ্রাহক এসেসিয়েশনের পক্ষ থেকে তিনি বলেন, আমাদের দাবী বিটিআরসির এ সকল নির্দেশনা প্রত্যাহার করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার কোয়ালিটি অফ সার্ভিস নির্ধারণ করে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। যে নীতিমালায় গ্রাহকস্বার্থ রক্ষা হবে পাশাপাশি অপারেটররা জবাবদিহিতামূলক সেবা প্রদান করতে বাধ্য থাকবে।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিটিআরসি

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ