Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কট্টর ডানপন্থী মেলোনিকে নিয়ে কেন এত শঙ্কিত পশ্চিমারা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৮:১০ পিএম

ইতালির মানুষ আজ এমন এক নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে যার ফলাফল দেশটিতে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। এই ভোটের আগে পরিচালিত জনমত জরিপ বলছে, কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিক জর্জিয়া মেলোনি এবং তার দল 'ব্রাদার্স অব ইতালি' বড় জয় পেতে পারে, এবং মিজ মেলোনি ইতালির ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।

এ বিষয়ে ব্রিটিম বার্তা সংস্থা বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালিতে এত কট্টর ডানপন্থী কোন দল এর আগে ক্ষমতার এত কাছাকাছি আসেনি। 'ব্রাদার্স অব ইতালি' খুবই ডানপন্থী এবং বিতর্কিত এক দল, যাদের সঙ্গে ইতালির নব্য নাৎসীবাদী আন্দোলনের সম্পর্ক রয়েছে। প্রায় পাঁচ কোটি ভোটার নির্বাচনে ভোট দেয়ার উপযুক্ত। নির্বাচনের ভোট নেয়া হবে সন্ধ্যা পর্যন্ত, তবে এই ভোটের চূড়ান্ত ফল জানতে বেশ সময় লাগবে, কারণ ইতালিতে প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে দলগুলোর মধ্যে আসন বণ্টনের পদ্ধতিটি বেশ জটিল। নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ইস্যু হচ্ছে অভিবাসন এবং জীবনযাত্রার ব্যয়, তবে এর পাশাপাশি গর্ভপাত, এলজিবিটি অধিকার এবং ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বিষয় নিয়েও প্রচারণার সময় বিতর্ক হয়েছে।

জর্জিয়া মেলোনির উত্থান যেভাবে: মাত্র চার বছর আগেও ইতালির নির্বাচনে ব্রাদার্স অব ইতালি দলের ভোটের শেয়ার ছিল মাত্র চার শতাংশ। কিন্তু এখন এই দল জরিপে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে, বলা হচ্ছে দলটি প্রায় ২৫ শতাংশ ভোট পেতে পারে। জর্জিয়া মেলোনির বয়স ৪৫ বছর। মাত্র দশ বছর আগে ২০১২ সালে তিনি ব্রাদার্স অব ইতালি দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে তিনি সিলভিও বারলুসকোনির সরকারে সবচেয়ে কম বয়সে মন্ত্রী হয়েছিলেন।

তরুণ বয়সে তিনি ইতালির নব্য নাৎসীবাদী আন্দোলনের যুব শাখায় যোগ দেন। বেনিতো মুসোলিনির সমর্থকরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিল। গত বছর তিনি নিজের এক বইতে দাবি করেন, তিনি ফ্যাসিস্ট নন। তবে নিজেকে তিনি মুসোলিনির উত্তরসূরিদের সঙ্গেই চিহ্নিত করেছেন। তিনি বার বার ইতালিতে মুসলিম অভিবাসীদের আগমনের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

জর্জিয়া মেলোনি যে ডানপন্থী জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাতে আরও আছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনির দল 'ফরজা ইতালিয়া' এবং আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাতিও সালভিনির দল 'লিগ পার্টি'। মেলোনি সাম্প্রতিক সময়ে তার অনলবর্ষী কট্টর ডানপন্থী ভাবমূর্তি কিছুটা নরম করে এনেছেন। ইতালির ফ্যাসিবাদী অতীত ইতিহাসের সঙ্গে তার দলের সম্পর্ক নিয়ে ইঙ্গিত করা হলে তিনি বেশ ক্ষুব্ধ হন।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, মেলোনি তা সমর্থন করেন। একই সঙ্গে ইউরোপের ব্যাপারে তার কড়া কথাবার্তা তিনি সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা কমিয়েছেন। কিন্তু তিনি এরপরও এমন এক পুরোনো শ্লোগান বেছে নিয়েছেন, যা ছিল ফ্যাসিবাদীদের শ্লোগান- "ঈশ্বর, পিতৃভূমি এবং পরিবার।" তিনি 'এলজিবিটি লবি'র বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং লিবিয়ার বিরুদ্ধে এক নৌ-অবরোধ আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন যাতে সেই পথে ইউরোপে কোন অভিবাসী আসতে না পারে।

ইতালির এই নির্বাচনের দিকে ইউরোপের অনেক দেশই শঙ্কিত নজর রাখছে। অর্থ এবং শেয়ার বাজারেও বিরাজ করছে নানা ধরনের শঙ্কা। ইতালি হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। কিন্তু দেশটি ঋণের ভারে জর্জরিত। ইউরোপীয় নেতারা এখনো পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপারে একটা ঐক্যবদ্ধ অবস্থান বজায় রাখতে পেরেছেন। কিন্তু নির্বাচনে যদি জর্জিয়া মেলোনির দল জেতে, তাহলে ইতালি কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে অনেকের মনে আশংকা আছে। সূত্র: বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ