পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অখ্যাত প্রতিষ্ঠানকে ‘বিখ্যাত’ দাবি করে আমদানি-রফতানির আড়ালে চলছে অর্থ পাচার। এমন দু’চারটি ঘটনা ধরাও পড়ে। ঘটনার তদন্ত হয়। চিহ্নিতও হয় পাচারকারীরা। কিন্তু রহস্যজনভাবে তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হয় নি কোনো ব্যবস্থা। মামলা রুজুর পরিবর্তে বাৎলে দেয়া হয়েছে বাঁচার কৌশল। এভাবেই মিডিয়ার আড়ালে রাখা হয়েছে অর্থ পাচারকারীদের। অন্তরালে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বৃহৎ ঘটনা। এমন ঘটনা ঘটেছে খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনেই (দুদক)।
সংস্থাটির একাধিক সূত্র জানায়, একাধিক কাগুজে প্রতিষ্ঠান ঋণপত্র খুলেছে চায়না থেকে পলেস্টার সূতা আমদানির জন্য। ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে ডলারে। বিপরীতে আনা হয়েছে বস্তাভর্তি বালু। অর্থ পাচারের এমন অভিনব ও গুরুতর অভিযোগ অনুসন্ধান শেষে দায়মুক্তির সুপারিশ করেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক এদিপ বিল্লাহ। কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাটের উপ-কমিশনার এই কর্মকর্তা দুদকে প্রেষণে দায়িত্বপালনকালে অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করেন। এই কর্মকর্তা পদোন্নতি নিয়ে এখন শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক। তবে কমিশন প্রতিবেদনটি অনুমোদন না দিয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন পুনঃঅনুসন্ধানের। অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন কি-না কমিশন সেটি খতিয়ে দেখারও নির্দেশনা দিয়েছে। পুনঃঅনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের কয়েকজনকে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দুদক সূত্র জানায়, ‘এনজেড এক্সেসরিজ লি.’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান পলিস্টার সূতা আমদানির কথা বলে এলসি করে। ৩২ হাজারের বেশি ডলার লিয়েন ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ পাঠায়। বিপরীতে আসে ৯৩২ব্যাগ বালু। ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন আহমেদ। অনুসন্ধান পর্যায়ে নাসির উদ্দিন আহমেদ তার ‘এনজেড এক্সেসরিজ লি:কে দেশের একটি ‘নামকরা প্রতিষ্ঠান’ বলে দাবি করেন। আমদানি-রফতানির আড়ালে বিদেশে অর্থ পাচারে প্রতিষ্ঠানটির নাম ব্যবহার করা হয়। রেকর্ডপত্রে ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে, রাজধানীর বারিধারা ডিওএইচএস, লেন-১৩, অনন্য শপিং কমপ্লেক্স (৫তলা)। ফ্যাক্টরি উল্লেখ করা হয়েছে, ৫, কুড়িবাড়ি, মির্জাপুর, গাজীপুর। একই সঙ্গে ৩১ হাজার৭৬৫ ডলার ফেরত এনেছেন বলে দাবি করেন। নাসির উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমাদের অন্য একজন ব্যক্তি ডিল করছেন। তিনি ভালো বলতে পারবেন।
‘আরএসবি এন্টারপ্রাইজ’ নামক প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. মাসুদ রানা। রেকর্ডপত্র অনুযায়ী ঠিকানা: বাড়ি-৬৭/বি, রোড-১২এ, প্লট বি-১ ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা। এই প্রতিষ্ঠানের নামে পণ্য আমদানি-রফতানির আড়ালে ৭০ হাজার ৩৮০ ডলার পাঠায়।
অনুসন্ধানকালে গত বছর ৩ নভেম্বর প্রেষণে দুদকে আসা উপ-পরিচালক এদিপ বিল্লাহ প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. মাসুদ রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পুনঃঅনুসন্ধানের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ঘটনা ধরা পড়ে। অথচ আমাকেই এখন সাফার করতে হচ্ছে। র ম্যাটারিয়াল ইমপোর্টের জন্য যে টাকা পাঠানো হয়েছিলো তা ফেরত আনা হয়েছে। সব রেকর্ডপত্র দিয়েছি। তবু কেন পুনঃঅনুসন্ধান-আমি জানি না।
আমদানি-রফতানির আড়ালে অর্থ পাচারের অভিযোগ শোয়ারা ফ্যাশন’ নামক আরেকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এটির মালিক মো. ইকবাল হোসেন। ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে মফিজ টাওয়ার, প্লট-২, মাসদাইর, নারায়ণগঞ্জ। প্রতিষ্ঠানটি পলিস্টার সূতা আমদানির নামে ৪৯, ৬৯৭.২৮ ডলার পাঠায়। বিপরীতে আসে ব্যাগ ভর্তি বালু।
‘সৈয়দ ট্রেডার্স’ নামক প্রতিষ্ঠান পলেস্টার সূতা আমদানির নামে ২৫ হাজার ১৭০ ডলার পাঠায়। বিপরীতে আসে বালু। এদিপ বিল্লাহ অনুসন্ধান পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক সৈয়দ জাকিরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় তিনি ‘সৈয়দ ট্রেডার্স’কে ‘খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান’ বলে দাবি করেন। প্রতিষ্ঠানটির লিয়েন ব্যাংক ইউসিবি এনায়েত বাজার শাখা। তাকেও দায়মুক্তির সুপারিশ করেন কাস্টমস থেকে প্রেষণে দুদকে আসা এই কর্মকর্তা।
পলিস্টার সূতা আমদানির নামে বালু আমদানির অভিযোগ প্রমাণের সপক্ষে যথাযথ দলিলাদি নেই Ñমর্মে সাফাই গাওয়া হয় প্রথম অনুসন্ধানে। নথিভুক্তির পক্ষে সাফাই গেয়ে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানগুলোর অসৎ উদ্দেশ্য সরাসরি প্রমাণিত হয় নি। পলিস্টার সূতার পরিবর্তে বস্তাভর্তি বালুর বিষয়টি ‘মালামালের অদল বদল হওয়া’ যৌক্তিক মনে করেন ওই কর্মকর্তা। প্রতিবেদনের সুপারিশে ২০১২ সনের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ধারা অনুযায়ী আরএসবি এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ প্রমাণের সপক্ষে দলিলাদি নেই Ñমর্মে উল্লেখ করা হয়। সপক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরে নথিভুক্তির সুপারিশ করা হয় ১২ হাজার ৪শ’ ডলার পাচারের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ‘প্রোগ্রেস ইমপেক্স লি:’কেও।
দুদকের লিগ্যাল উইংয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রতিবেদন দাখিলের আগে অনুসন্ধান কর্মকর্তা কোনো আইনি মতামত নেন নি। ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ট্রান্সফার, বিদেশি ব্যাংক ড্রাফট, ট্রাভেলারস চেক, একটি ব্যাংক একাউন্ট হতে বিভিন্ন ব্যাংক শাখায় স্থানান্তর, হস্তান্তর, জমা এবং রূপান্তরকে ‘অর্থ পাচার’র আওতাভুক্ত। আইনে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর, হস্তান্তরও মানিলন্ডারিং শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ। যার শাস্তি ৪ থেকে ১২ বছর কারাদন্ড। পাচারকৃত অর্থের দ্বিগুণ মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানার বিধানও রয়েছে। চুরিকৃত মালামাল উদ্ধার হলে যেমন চুরির ঘটনা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় না Ñতেমনি পাচার করা অর্থ সমন্বয় করা হলেও যে অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে সেটি থেকে যায়। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গ নির্দোষ প্রমাণিত হলে বিচারিক প্রক্রিয়ায়ই তারা খালাস পেতে পারেন। অপরাধী চিহ্নিত হলে তার বিচারার্থে আদালতে সোপর্দ করাই আইনসিদ্ধ।
এদিকে অভিযোগটির পুনঃঅনুসন্ধান কোন পর্যায়ে রয়েছে দুদকের উপ-পরিচালক মো. রফিকুজ্জামানের কাছে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।