বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সৃষ্টি জগতের সর্বত্রই ‘খালেক’ বা স্রষ্টার প্রভাব প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান। মানুষ তার সীমিত জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিচার-বিবেচনায় অনেক সময় তার অসীম সত্তার অনেক কিছুই অনুধাবন-উপলব্ধি করতে অক্ষম। যেমন: দ্রব্যের গুণাগুণ সম্পর্কে অনেকেই কিছু অবগত নয়, পক্ষান্তরে একজন দ্রব্য বিশেষজ্ঞ তা সহজেই বলে দিতে পারেন। অনুরূপভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে এই কথা প্রযোজ্য। অর্থাৎ দ্রব্যগুলোর প্রভাব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সকলেই অভিজ্ঞ-একথা যেমন ঠিক নয়, তেমনি সববস্তুই প্রভাব প্রতিক্রিয়াহীন একথাও যথার্থ নয়।
আর যিনি সবকিছুরই খালেক-স্রষ্টা , তাঁর পবিত্র নাম গুণাবলিরও প্রভাব প্রতিক্রিয়া থাকবে, এটাই স্বাভাবিক ও চিরস্বীকৃত অকাট্ট সত্য। যে স্রষ্টার ‘জাত-সত্তা ‘আল্লাহ’ নামে সকলের কাছে সুপরিচিত, তাঁর এই মহাপবিত্র মর্যাদাপূর্ণ নামই সর্বসম্মতভাবে ‘ইসমে আজম’ সর্বশ্রেষ্ঠ সুমহান। তাঁর আরো যে সব নাম ও গুণবাচক শব্দ রয়েছে, পবিত্র কোরআনের পরিভাষায় সেগুলোকে ‘আসমায়ে হোসনা’ বা ‘আল্লাহর উত্তম নামসমূহ’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই আসমায়ে হোসনা পবিত্র কোরআনে চারটি স্থানে বর্ণিত হলেও এসব নামের সংখ্যা কত, কোথাও তার উল্লেখ নেই।
অর্থাৎ পবিত্র কোরআনে আল্লাহর পবিত্র নামসমূহের সংখ্যা বলা হয়নি। তবে এগুলোর প্রভাব-প্রতিক্রিয়া সর্বকালেই স্বীকৃত হয়ে আসছে, যার অজস্র প্রমাণ সর্বত্র বিদ্যমান এবং চিরকাল তাৎপর্য, বৈশিষ্ট্য ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। আল্লাহর নাম ইসমে আজম এবং এই নামের ব্যাপক প্রভাব-প্রতিক্রিয়া যেমন রয়েছে, অনুরূপভাবে আসমায়ে হোসনার অর্ন্তভুক্ত অন্যান্য নামেরও বহুমুখী প্রভাব বিদ্যমান।
আল্লাহর একত্ব, অস্তিত্ব, সৃষ্টি, জাত-সত্তা ইত্যাদি তার অস্যংখ্য সিফাত বা গুণবাচক নামসমূহের সাথে মানবকূল আদিকাল থেকে পরিচিত। প্রাচীন মুসলিম দার্শনিকদের এক বিরাট দল যুগে যুগে এ বিষয়ে প্রচুর চিন্তা-ভাবনা ও তাদের অনুসন্ধান-গবেষণার বহু নিদর্শন রেখে গেছেন। পবিত্র কোরআনে প্রায় হাজার বার আল্লাহ শব্দ (ইসমে আজম) ব্যবহৃত হয়েছে এবং আসমায়ে হোসনার পরিচিতির পূর্বে অবতীর্ণ আরো যেসব আসমানী গ্রন্থের কথা জানা যায় , সেগুলোতেও ‘আল্লাহ’ ও তাঁর উত্তম নামসমূহের বর্ণনা এসেছে সেগুলোর প্রভাব যুগে যুগে মানুষের মনে রেখাপাত করেছে এবং নানা বিষয়ের উদ্রেক করেছে।
সেই প্রাচীন আদি ইতিহাস-কাহিনী দুষ্প্রাপ্য হলেও তার বাস্তবতার বহু প্রমাণ রয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে কোনো কোনো আসমানী গ্রন্থে আল্লাহর নামের সংখ্যার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এ তথ্য পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন তফসীরী ভাষ্য হতে জ্ঞাত হওয়া যায়। এসব প্রাচীন গ্রন্থের বরাত দিয়ে বলা হয়ে থাকে যে, আল্লাহর নামের সংখ্যা পাঁচ হাজার। এ সম্পর্কে বিশ্ব-বিখ্যাত তফসীরকার শায়খুল ইসলাম ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী, তাঁর সুবিখ্যাত ‘তফসীর কবীর’ গ্রন্থে আল্লাহর পাঁচ হাজার নাম রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তফসীর ইবনে কাসীরের সূত্রে তিনি বর্ণনা করেছেন, যার অর্থ এই : ‘আল্লাহর কোরআন ও সহি হাদীসে তাঁর পাঁচ হাজার নাম রয়েছে। এক হাজার নাম তওরাতে, এক হাজার ইঞ্জিলে (বাইবেল) এবং এক হাজার লৌহ মাহফুজে সংরক্ষিত।’ (১ম খণ্ড)
খোদ পবিত্র কোরআনে আল্লাহর পাঁচ হাজার নাম রয়েছে বলে ইবনে কাসীর এর বর্ণনা হতে জানা যায়, যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এই সংখ্যার সাথে তাওরাতের এক হাজার, ইঞ্জিলের এক হাজার এবং লৌহ মাহফুজে সংরক্ষিত এক হাজার যোগ করা হলে আল্লাহর নামের সংখ্যা দাঁড়ায় আট হাজার। এসব নামের যে বহুমূখি প্রভা-প্রতিক্রিয়া রয়েছে তা অবগত হওয়া সবার পক্ষে সম্ভব নয় (আল্লাহ জাল্লা-জালালুহু, আম্মা নাওয়ালুহু) ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।