পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ার পর এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসছে। চলতি মাসেই বাড়ানো না হলে আগামী মাসে বাড়বে বিদ্যুতের দাম। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানিকালে বিইআরসির টেকনিক্যাল কমিটি পাইকারি বিদ্যুতে ২ দশমিক ৯৯ টাকা বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল। অর্থাৎ প্রায় ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে ওই কমিটি। ওই কমিটির সুপারিশকেই গুরুত্ব দিয়ে চূড়ান্ত করা হচ্ছে বিদ্যুতের নয়া দাম। বিদ্যুতের পাইকারি দর প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তুতি শেষ করেছে বিইআরসি। গ্যাস সঙ্কটের কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ। আবার প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। সারা দেশে বেড়ে গেছে লোডশেডিং। রাজধানী ঢাকার বাইরে গ্রামাঞ্চলের চিত্র আরো খারাপ। সেখানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকে না। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দিনে ৫ থেকে ৬ বার এবং গ্রামাঞ্চলে ১০ থেকে ১২ বার লোডশেডিং হচ্ছে। আর আবাসিক এলাকায় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত রান্নার চুলা জ্বলছে না। শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুতের কারণেই। আগামী ১৪ অক্টোবরের মধ্যে আসতে পারে নতুন ঘোষণা।
ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম ইনকিলাকে বলেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা দেখছি না। ব্যয়বহুল বলে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে, একই কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ। এখন তো বিদ্যুতের দাম কমানো উচিত। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেন, সম্প্রতি গ্যাসের দাম বেড়েছে। এরপর জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপক পরিমাণে বাড়ানো হয়েছে। সেই ধাক্কা এখনও সামাল দিতে পারছে না জনগণ। এসব দাম বৃদ্ধির কারণে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। পাইকারি দাম বৃদ্ধি হলে সরাসরি ভোক্তাদের ওপর প্রভাব পড়বে না। তবে পাইকারি দাম বাড়লেই খুচরা দাম বৃদ্ধি আবশ্যক হয়ে পড়বে। তাতে বাজার পরিস্থিতি নাজুক পড়ে পড়বে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল ইনকিলাবকে বলেন, বিইআরসি আইন অনুযায়ী গণশুনানির পর ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে আদেশ দেয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা একটি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে এনেছি। সরকারের কিছু নীতি সিদ্ধান্তের বিষয় রয়েছে, বিশেষ করে ভর্তুকি ইস্যু। দাম না বৃদ্ধি করেও কোনো উপায় করা যায় কি না চিন্তা করা হচ্ছে। তবে দাম বৃদ্ধি হলেও সামান্য পরিমাণে হবে। সরকার যদি আরেকটু ভর্তুকি বাড়াতে রাজি হয় তাহলে দাম নাও বাড়তে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, দামের বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাই না। যাই হোক আইনি সময়সীমার মধ্যেই আদেশ দেয়া হবে।
বিইআরসির সদস্য (বিদ্যুৎ) বজলুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, আইন অনুযায়ী গণশুনানির পর ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে আদেশ দেয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গত ১৮ মে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়, সে হিসেবে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত হাতে সময় রয়েছে। এ মাসে ঘোষণা না হলে আগামী মাসে করতে হবে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বর্তমান দর ইউনিটপ্রতি ৫.১৭ টাকা থেকে ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮.৫৮ টাকা করার আবেদন করে। বিপিডিবির এই প্রস্তাব গ্যাসের আগের দর ইউনিটপ্রতি ৪.৪৫ টাকা বিবেচনায়। ওই প্রস্তাবের পর ইউনিটপ্রতি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হয়েছে ৫৭ পয়সা করে। বিইআরসি টেকনিক্যাল কমিটি ভর্তুকি ছাড়া ৮.১৬ টাকা করার মতামত দেয়। অতীতে কখনও এত বেশি পরিমাণে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়ার নজির নেই। ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি হলেও তাও হবে নজিরবিহীন। সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিটপ্রতি ৫.১৭ টাকা নির্ধারণ করে।
বিপিডিবির পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২.১৩ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.১৬ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, কয়লার মূসক বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ৪.২৪ টাকায়। পাইকারি দাম না বাড়লে ২০২২ সালে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান হবে। বিপিডিবি বিদ্যুতের একক পাইকারি বিক্রেতা। ৫টি বিতরণ কোম্পানির কাছে পাইকারি দরে বিক্রির পাশাপাশি নিজে ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের শহরাঞ্চলে বিতরণ করে যাচ্ছে।
অন্যদিকে পাইকারি দাম বৃদ্ধিকে কোম্পানিগুলো ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। সাধারণত সরবরাহকৃত বিদ্যুতের পরিমাণকে বিবেচনায় নিয়ে বিতরণ কোম্পানির রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়। সরবরাহকৃত বিদ্যুতের দামের সঙ্গে বিতরণ কোম্পানির পরিচালন ব্যয় যোগ-বিয়োগ করে খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দেয়ায় বিতরণ কোম্পানিগুলোর রাজস্ব কমে গেছে। পাইকারি দাম বৃদ্ধি পেলে সেই সুযোগে কম উৎপাদনকে সামনে এনে বেশি করে দাম বৃদ্ধি চাইবে, যা কৌশলগতভাবে উপেক্ষা করার সুযোগ থাকবে না।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ২৭। এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫২টিতে। আগে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৫ হাজার মেগাওয়াটের কম এখন উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্যসহ)। এত বিদ্যুতের চাহিদা দেশে নেই। কিন্তু শত ভাগ বিদ্যুতের দেশে বিদ্যুতের অভাবে সবকিছু মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।