পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কোনোভাবেই এ মুহূর্তে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যাবে না। দাম বাড়লে অর্থনীতিতে বড় রকমের ক্ষতি হবে। নিত্যপণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে। বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিসিআই) সংবাদ সম্মেলনে এমন মত দেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। বাজারে হু হু করে বাড়ছে ভোগ্যপণ্যসহ সব পণ্যের দাম। আমদানি ব্যয় মেটাতে ডলার বেশি খরচ করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে ডলারের দাম। অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থায় টিকে থাকতেই হিমশিম অবস্থা।
এমন অবস্থায় গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আত্মঘাতী বলে মনে করছে এফবিসিসিআই। সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, প্রস্তাবিত দাম বর্তমানের দামের দ্বিগুণের বেশি। এটি কার্যকর হলে বাড়বে উৎপাদন খরচ। এতে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতি হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন এই মুহুর্তে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য না বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা যদি ১৩ টাকার গ্যাসকে ২৮ টাকা করে দেই, তাহলে গ্যাস হয়তো থাকবে। তবে ইন্ডাস্ট্রি থাকবে না। দাম বাড়ালে উৎপাদন খরচও বাড়ানো হবে, এতে আমরা দুর্বল পরিস্থিতির শিকার হব। আমাদের ব্যবসায়ের ব্যয় ও উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে চরম অসময় যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সময় এটা নয়। যে চেষ্টা হচ্ছে, সেটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার শামিল। জসিম উদ্দিন বলেন, সময় থাকতে সরকারকে তা বুঝতে হবে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়লে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়বে। এর প্রভাব পড়বে জনজীবনের ওপর। এটা চলতে থাকলে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তার দায়ভার তখন সরকারকে নিতে হবে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এরপরও যদি দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেটি ব্যবসায়ীদের ওপর না চাপিয়ে বিদ্যুৎ খাতের তহবিল থেকে ভর্তুকির মাধ্যমে সমন্বয় করা হোক।
তিনি বলেন, এই দুঃসময়ে পাইকারি পর্যায়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে বহুমাত্রিক মূল্যস্ফীতি উস্কে দিয়ে এর বহুমুখী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার উদ্ভব হবে দেশে। ফলে কৃষি শিল্প সেবা এবং সার্বিকভাবে সাধারণের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি করবে। সর্বোপরি অর্থনৈতিক উন্নয়নের চলমান ধারা মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, দেশ এখন স্বল্প উন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করেছে। ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নিয়ে কাজ করছে সরকার। এই উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ এবং এসডিজির লক্ষ্য বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীদের সর্বাগ্রে ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, এসডিজি ৭ অনুযায়ী ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ এবং জনগণের জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে সবার জন্য সুলভ উন্নত নিরবিচ্ছিন্ন এবং টেকসই জ্বালানি ও বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। কিন্তু জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বার্ক) আইনের বিধান অনুযায়ী স্বচ্ছতা, মানসম্মত দক্ষতা ও জবাবদিহিতা সহকারে সুচারুভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। বরং এই খাতে সর্বত্র অদক্ষতা, যথেচ্ছ অনিয়ম, অস্বচ্ছতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং আইনের বিপরীতে পরিচালিত হচ্ছে।
এ অবস্থায় সমগ্র বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবস্থার আমূল সংস্কার না করে এ খাতে বিরাজমান অব্যবস্থাপনার অহেতুক দায়ভার জাতীয় অর্থনীতি এবং জনগণের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের সকল ক্ষেত্রে সংক্রমিত করা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না। তবে করোনার সঙ্কটময় পরিস্থিতি প্রশমিত হলে এবং ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি বন্ধ হওয়ার পর দাম বাড়ানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ব্যবসায়ীদের সেক্ষেত্রে আপত্তি থাকবে না বলেও দাবি করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
জসিম উদ্দিন বলেন, কুইক রেন্টালের এক সময় প্রয়োজনীতা ছিল। এখন আর তার প্রয়োজনীয়তা নেই। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করা উচিত। অদক্ষ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা উচিত। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলো অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। সরকার সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। সরকারের ভুল পরিকল্পনার খেসারত শিল্প খাত বহন করতে পারে না।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি না করে এখন সরকারের উচিত হবে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের আমূল সংস্কার আনা। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। বিদ্যুতের অতিরিক্ত উৎপাদন বন্ধ করে অহেতুক খরচ কমিয়ে আনা। এর জন্য ব্যবসায়ীরা সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।
এ সময় বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি মো. হাতেম বলেন, করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে আমরা রফতানিতে বেশ ভালো করতে ছিলাম। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে রফতানিকারকদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এতে বিশ্ববাজারে রফতানি প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়বে দেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। একই সঙ্গে যে হারে দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, তাহলে আর চেষ্টা করার কোনো সুযোগ থাকবে না। এতে বিদ্যুৎ লাইনও কাটবে এবং গ্যাস লাইনও কাটবে। ইন্ডাস্ট্রি এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।
সম্মেলনে ব্যবসায়ী সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন তিতাসের আয়-ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরে বলেন, কোনোভাবেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, পেট্রোবাংলা তিতাসের কাছে গ্যাস বিক্রি করে টাকা খাচ্ছে। আবার তিতাস তিন বছরের নিট মুনাফা নিয়ে গেছে। যার পরিমাণ ৫৪৯ কোটি টাকা। তিন বছরে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা যেটি এনবিআর সমন্বয় করেনি তিতাস থেকে। ইতোমধ্যে তাদের কাছে গ্রাহকের ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যাংক ডিপোজিট রয়েছে।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ চেম্বার অফ ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, দেশে এখন ডলার সঙ্কট চলছে। ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। এখন যদি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়, উৎপাদন খরচ বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে ভোক্তার ওপর।
রিহাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, বিশ্ববাজারে ঝড় চলছে। এ অবস্থায় ইচ্ছামত দাম বাড়িয়ে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য কে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবেন না। গ্যাস-বিদ্যুৎতের দাম বাড়ানোর চেয়ে অপচয় রোধ করার ওপর জোর দেন ব্যবসায়ীরা। অর্থনীতির এমন অবস্থায় দাম সমন্বয় করতে আমলাতান্ত্রিক নয়, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত চান ব্যবসায়ীরা।
সংবাদ সম্মেলনে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি সংসদ সদস্য মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, এমসিসিআই’র সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, বিএসএমএর সভাপতি মনোয়ার হোসেন, বিসিএমএর সভাপতি মো. আলমগীর কবিরসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।