বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
মহিউদ্দিন খান মোহন : কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বহুল প্রচলিত গানের প্রথম দু’টি পংক্তি-‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে/নইলে মোরা রাজার সনে মিলব কী শর্তে।’ রবীন্দ্র নাথের অন্যসব গান আর কবিতার মতো এটিও দ্ব্যর্থবোধক। তাঁর অধিকাংশ গান কবিতারই একাধিক ভাবার্থ করা যায়। একটি ইহজাগতিক অপরটি আধ্যাত্মিক। এ গানটিও হয়তো তেমনি। তবে, কবিগুরুর কবিতার পর্যালোচনা বা তার ভাবার্থ অন্বেষণ আমার মতো ক্ষুদ্র জ্ঞানের মানুষের কম্ম নয়। আমি রবীন্দ্র সঙ্গীতের একজন ভক্ত। আর ওপরের গানটি আমার অত্যন্ত প্রিয়। সে গানটি আজ ক’দিন থেকে বার বার মনের মধ্যে বেজে উঠছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের একটি উক্তি পত্রিকায় পাঠ করে।
গত ২৬ নভেম্বর রাজধানীর একটি কলেজে ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন- ‘দেশে এখন কর্মী নেই, সবাই নেতা। বাংলাদেশ মনে হয় নেতা উৎপাদনের কারখানা। এখন কর্মী উৎপাদন সংকুচিত হয়ে গেছে। নেতা বেশি হওয়ায় দুর্ভোগও বেশি। নেতা বেশি হওয়ায় বক্তৃতাও বেশি। কিন্তু তাদের সে বক্তৃতা অনেকে শুনতে চায় না।’ একই বক্তৃতায় ওবায়দুল কাদের আরো বলেছেনÑ ‘রাজনীতিতে শুদ্ধাচার প্রয়োজন। আমি যদি শুদ্ধ না হই, তবে আরেকজনকে শুদ্ধ হতে বলব কীভাবে। নিজে শুদ্ধ হয়ে পরে অন্যকে শুদ্ধ হতে বলতে হয়।’
ওবায়দুল কাদের যে বর্তমান বাস্তবতায় অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত এবং যথার্থ বলেছেন তা নিয়ে বোধ করি বির্তকের অবকাশ নেই। কেননা, রাজনৈতিক নেতার আধিক্যের বিষয়টি টের পেতে এখন খুব বেশি বেগ পেতে হয় না। চোখ-কান একটু খোলা রেখে পথ-ঘাটে চলাফেরা করলেই বিষয়টি উপলব্ধি করা সম্ভব। অবস্থাটা এমনই যে, কাঁচাবাজারে যান, আর ফুটপাত দিয়ে হাঁটুন, দু’চারজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে আপনাকে ধাক্কা খেতেই হবে। পাড়া-মহল্লায় দেখবেন নেতার ছড়াছড়ি। রাস্তার ল্যাম্প পোস্ট কিংবা গাছের ডালে ঝুলতে দেখা যায় নেতাদের পোস্টার-ফেস্টুুন। আর সেসব পোস্টার-ফেস্টুনে নেতাদের আদর্শিক নেতা-নেত্রীর ছবি অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজে বের করা সাইজের থাকলেও স্বঘোষিত ওই নেতার ছবি থাকে বিশাল আকৃতির। এ জন্য অবশ্য এই পোস্টার-ফেস্টুন লাগানো নেতাকে দোষ দেয়া যায় না। নিজের টাকার ফেস্টুুন বানাবেন, নিজের ছবিইতো বড়ো করে দেবেন!
এক সময় রাজনৈতিক দলগুলোতে নেতার সংখ্যা ছিল নেহায়েতই অল্প। সবাই ছিল কর্মী। এমনকি যারা নেতৃস্থানীয় ছিলেন তাদের মধ্যে অনেকে আবার বিনয়ের সাথে নিজেকে কর্মী হিসেবেই পরিচয় দিতেন। আর এখন কর্মী পরিচয় দেয়াটা অনেকের কাছেই যেনো লজ্জার বিষয়। চলনে-বলনে, আচার-আচরণে, ভাব-ভঙ্গি আর কথাবার্তায় এটা জাহির করতে চান যে, তিনি অমুক দলের একজন নেতা। এরা আবার সংগঠনের পরিচয়সহ ভিজিটিং কার্ডও ছেপে থাকেন। আর তাতে সংযুক্ত থাকে নিজের ছবি। নেতা পরিচয়ে সমাজে পরিচিত হতে কী আগ্রহ!
কিন্তু এর কারণ কী? কেন সবাই নেতা হতে চায়? কেন আর কর্মী থাকতে চায় না কেউ? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে হলে একটু গভীরে তো নামতেই হবে। নেতা পদবিটি বড়ই আকর্ষণীয়, বড়ই ফলদায়ক। এ বিশেষণটি যদি একবার লাগানো যায় তাহলে জীবনে উন্নতির সিঁড়ি খুঁজে পেতে যেমন সমস্যা হয় না, তেমনি সে সিঁড়ির সোপানগুলো টপাটপ টপকে উচ্চতর আসনটি বাগানো সহজ হয়ে যায়।
একটা সময় ছিল, এই আমাদেরই দেশে, নেতা মানেই অতি সম্মানীয়জন। যিনি একবার নেতা হিসেবে পরিচিত হতেন, সমাজে তিনি সম্মানের আসনটি পেয়ে যেতেন। স্বদল কি ভিন্ন দল সবাই নেতাকে সম্মান করত। এখন সে অবস্থা নেই। ভিন্ন দলের নেতাকে সম্মান তো দূরের কথা, একই দলের নেতারাও একে অপরকে সম্মান করেন না। বরং কে কাকে ল্যাং মেরে উপরে উঠবেন সে কসরতে লিপ্ত সবাই। আর কার চেয়ে কে বড় নেতা, এটা জাহির করতে এমন কোনো হীনকাজ নেই যা তারা করতে পারেন না।
রাজনীতি ছিল এক সময় দেশ ও মানুষের সেবা করার সবচেয়ে উত্তম পন্থা। যারা রাজনীতির খাতায় নাম লেখাতেন তারা আত্মস্বার্থ কখনো বিবেচনায় রাখতেন না। দেশ-জাতি, মানুষের কল্যাণই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। তারা জাতির কল্যাণ সাধনায় ব্রতী হয়ে নিজেদের দিকে তাকানোর সময় পেতেন না। জনগণের স্বার্থকে সর্বোচ্চে তুলে ধরে সত্য ও ন্যায়ের পথে আগুয়ান হতেন সব ধরনের ভয়-ভীতি, লোভ-লালসাকে উপেক্ষা করে। আর এখন? সব কথা খুলে বললে চারদিকে হৈ চৈ পড়ে যেতে পারে! দেশ-জাতি এসব শব্দ আজকের রাজনৈতিক নেতাদের ক’জনের মস্তিষ্কে বাসা বাঁধতে পেরেছে তা গবেষণার বিষয় হতে পারে। শীর্ষ পর্যায় থেকে নি¤œ পর্যায় পর্যন্ত একই ধারা চলছে ধারাবাহিকভাবে। দলগুলো ব্যস্ত রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রাখতে, কিংবা দখল করতে। আর নি¤œপর্যায়ে ‘নেতারা’ ব্যস্ত হাতের কাছে যা পাওয়া যায় তার সবটা উদরস্থ করে ফুলে-ফেঁপে পাটখড়ি থেকে কলাগছ হতে। আর যারা রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে, তারা অপেক্ষায় থাকে কবে সে সোনার হরিণ হস্তগত হবে, যা তাদের ভাগ্য খুলে দেবে।
দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের দিকে যদি দৃষ্টিপাত করা যায় তাহলে বিষয়টি বুঝতে আরো সহজ হবে। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার নিজ দলকে উদ্দেশ করে কথাগুলো বললেও অন্যান্য দল, বিশেষ করে বিএনপির বেলায়ও কি তা প্রয়োজ্য নয়? আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। ফলে এ মৌচাকটিকে ঘিরে হাজারো মৌমাছির আনাগোনা চলছে। কত যে সহযোগী সংগঠন তৈরি হয়েছে এ দলটির তার হিসাব করাই মুশকিল। তালিকাভুক্ত সহযোগী আর ভ্রাতৃত্বপ্রতীম সংগঠন ছাড়াও অর্ধশতাধিক সংগঠন রয়েছে ‘আওয়ামী’ কিংবা ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দ দু’টি ব্যবহার করে রাখা নামে। যেমন আওয়ামী সৈনিক লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, আওয়ামী সোনার বাংলা লীগ ইত্যাদি। তাদের যে কত নেতা তার কোনো হিসাব নেই। আপনি হয়তো কোথাও বসে আছেন। পাশে একজন এসে বসলেন। আলাপ পরিচয় হলো। একপর্যায়ে তিনি আপনার হাতে একটি ‘নেম কার্ড’ ধরিয়ে দিয়ে হয়তো বললেন, প্রয়োজনে যোগাযোগ করবেন। দেখলেন তিনি কোনো এক লীগের সম্পাদক বা সহ-সম্পাদক! এভাবে আপনি প্রতিদিন প্রতি প্রহরে অসংখ্য নেতার দেখা পাবেন। কিন্তু একজন লোকও পাবেন না, যে আপনাকে বলবেÑ ‘ভাই আমি অমুক সংগঠনের কর্মী।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির উপ-সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল প্রচ-। শোনা যায় উপ-সম্পাদক, সহ-সম্পাদকের সংখ্যা সাড়ে চারশ’ থেকে পাঁচশ’। কী সাংঘাতিক ব্যাপার! যে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা সাকুল্যে ৮৩ জন। সে দলের উপ আর সহ-সম্পাদক (কেন্দ্রীয়) পাঁচশ’! ‘এ যেন বারো হাত কাঁকুরের তেরো হাত বীচি!’ এসব উপ আর সহ-সম্পাদকদের যে প্রচ- দাপট, আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা বা মন্ত্রীরও তা নেই। এরা যে ভাষায় ওসি, এসপি, ইউএনও, ডিসিদেরকে হুকুম তামিল করতে বলে, অনেক মন্ত্রী এমপিও সে ভাষায় কথা বলেন না। এদের মধ্যে দু’চার জনের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় আছে। সে সুবাদে কিছুটা অভিজ্ঞতাও হয়েছে। মজার বিষয় হলোÑ প্রশাসনের কর্তারাও এদেরকে ঘাঁটাতে চান না। কেউ কেউ একটু আধটু ত্যাড়ামো করে এমন শিক্ষা পেয়েছেন যে, এখন উপ আর সহ-সম্পাদকদের নাম শুনলেই দু’হাত তুলে নমষ্কার করেনÑ এমন অবস্থা। শোনা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব এর লাগাম টেনে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত অক্টোবরে সমাপ্ত কাউন্সিলের পর দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে উপ বা সহ-সম্পাদক খুব বেশি হলে একশ’ জনকে করা হবে। বলা হয়েছে, কিন্তু কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ আছে। কেননা, বিগত দিনগুলোতে উপ-সম্পাদক আর সহ-সম্পাদকের পরিচয় দিয়ে সমাজে-প্রশাসনে কল্কে পাওয়া ব্যক্তিরা কী সহজে তা হারাতে চাইবে? এর ওপর রয়েছে পূর্বোল্লিখিত নানা নামের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলার নেতাদের সমারোহ। তারাও কী ওইসব সংগঠনের ‘নেতা’ পরিচয় বাদ দিয়ে দলের কর্মী পরিচয় দিতে আগ্রহী হবে?
একই অবস্থা আরেক বৃহৎ দল বিএনপিতেও! সেখানে সমস্যা আরো প্রকট! কোনো কর্মী নেই। সবাই নেতা। খোদ মূল দলটির অর্থাৎ বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা ৫৯২ জন! কেন্দ্রীয় কমিটিতে যারা ঠঁঁাঁই পান তারা তো আসলেই নেতা। তবে, দুর্মুখেরা বলে থাকেন, ওখানে এমন অনেকের জায়গা হয়েছে, যারা ইউনিয়ন-উপজেলা কমিটিতেও ঠাঁই পাওয়ার যোগ্য নয়। অথচ এখন তারা কেন্দ্রীয় নেতা! তারপর আছে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। সেখানেও নেতার ছড়াছড়ি।
ক’মাস আগে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা হলো। সদস্য সংখ্যা ৭৩৮ জন! মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়! একটি ছাত্র সংগঠনে প্রায় সাড়ে সাতশ’ নেতা! এরপরও নাকি বহুজন বঞ্চিত রয়ে গেছে। যারা কমিটিতে জায়গা না পেয়ে বিক্ষোভ করেছে, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে। সাড়ে সাতশ’ নেতা যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছে, সে সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মিছিল করতে পারে না, সমাবেশ করতে পারে না। কেন এমন অবস্থা? এরও একটা ব্যাখা অনেকে দিয়ে থাকেন। বলেনÑ ছাত্রদল কীভাবে মিছিল করবে? মিছিল তো করে কর্মীরা। এরা তো সবাই নেতা! কর্মীদের মিছিলের সামনে তো তারা থাকবেন। এখন কর্মী যদি খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে নেতারা কি মিছিল করবেন ? সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএনপির আন্দোলনে রাজপথে মিছিল না হওয়ার এটাও একটা কারণ বলে অনেকে মনে করেন। তারা বলেন, বিএনপি কর্মীর অভাবে মিছিল করতে পারে না। কারণ এ দলে এখন সবাই নেতা। কেউ কেন্দ্রীয় কমিটির, কেউ অঙ্গসংগঠনের। আবার বিএনপিরও রয়েছে নানা নামের শাখা-প্রশাখা সংগঠন। সেদিন ফেসবুকে দেখলাম, একটি সংগঠনের নামÑ ‘জাতীয়তাবাদী বন্ধু দল’ আরেকটির নাম জাতীয়তাবাদী সাইবার দল। প্রশ্ন করলামÑ তাহলে জাতীয়তাবাদী শত্রু দল কোনটা, অন্যটা সাইবার দল, না সাইফার দল? উত্তরে যা শুনলাম তাতে চোখ কপালে তুলে কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থাকলাম! আর আফসোস করলাম রাজনীতির এত অধঃপতন?
বিএনপি প্রসঙ্গ যখন আলোচনায় এসেই গেল তাহলে তো বর্তমানে এ দলের নেতা তৈরির প্রক্রিয়া-পদ্ধতি নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করতেই হয়। নাহলে আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে বলেই মনে হচ্ছে। ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’ কথাটি আমাদের দেশে এখন বহুল প্রচলিত। বড় বড় দলগুলোর কতিপয় নেতা, যারা মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় প্রভাব রাখতে সক্ষম তারা নাকি অর্থের বিনিময়ে মনোনয়ন দিয়ে থাকেন। এটা আগে শুধু ছিল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে। বর্তমান সরকারের বদান্যতায় এখন তা সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিস্তার লাভ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। দলীয় প্রতীকে এসব স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পদ্ধতিই এ সুযোগ এনে দিয়েছে। এ বছর গোড়ার দিকে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলের বিরুদ্ধেই মনোনায়ন বাণিজ্যের ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
যা হোক, রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনায়ন বাণিজ্য এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। অনেকে এটাকে স্বাভাবিক বলেই এখন মনে করেন। স্বাধীনতা পূর্বকালে এদেশের বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর একটি স্লোগান ছিলÑ ‘লাঙ্গল যার, জমি তার।’। এখন সব দলের গোপন স্লেøাগান হলোÑ ‘টাকা যার, মনোনয়ন তার।’ অধুনা রাজনৈতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন সংযোজন ঘটেছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলে এখন ‘পদ বাণিজ্য’ ‘কমিটি বাণিজ্য’ এতটাই ব্যাপকতা লাভ করেছে যে, দলের নেতাকর্মীরা এ নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দ্বিধা বোধ করছে না। ক্ষমতার বাইরে থাকা দল বিএনপির বিরুদ্ধেই এ অভিযোগটি বেশি উচ্চারিত। কেন্দ্রীয় কমিটি হোক, কিংবা জেলা-উপজেলা কমিটি হোক, যে কোনো কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ার একটি সহজ উপায় হলো দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদেরকে খুশি করা। এর ফলে কোনো ধরনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও অনেকে বিভিন্ন স্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদ দখলে সমর্থ হয়ছেন। পদ কিনে নেতা বনে যাওয়া এসব ব্যক্তি দলের প্রতি কমিটেড হতে পারে না। এদেরকে দলের প্রয়োজনে মাঠে পাওয়া যায় না। বিএনপির বিগত আন্দোলনগুলোতে এর প্রমান পাওয়া গেছে। অর্থকড়ির বিনিময়ে পদ বাগিয়ে নেয়া কথিত নেতাদের টিকিটিও দেখা যায়নি আন্দোলনের মাঠে। এসবই এখন ওপেন সিক্রেট। সবাই জানেন, সবাই বলেন। কিন্তু দলটির কোনো বিকার নেই। পদবাণিজ্য এখনো চলছে। আর কতটা সর্বনাশ হলে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের সম্বিৎ ফিরবে সেটা একটা বিরাট প্রশ্ন।
কথা শুরু করেছিলাম দেশে নেতার আধিক্য নিয়ে। নেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় দেশের রাজনীতিও আর ঠিকঠাক চলছে না। তবে তা নিয়ে কারো মাথাব্যথাও নেই। রাজনীতি ঠিকঠাক চলল কি চলল না সেটা দেখার ফুরসৎ ওইসব হাইব্রিড নেতাদের নেই। রাজনীতি থাক বা না থাক তাতে কি? তারা ‘নেতা’ থাকলেই হলো। আর রাজনীতি? সেটাতো এসব নেতা যেভাবে করবেন, যে পথে চালাবেন সেভাবে সেপথেই চলবে। আর সেজন্যই কবিগুরুর অনুকরণে বলা যায়Ñ ‘আমরা সবাই নেতা, আমাদের এই নেতার রাজত্বে/নইলে মোরা রাজনীতিটা ক্যান যাব করতে?’
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।