পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : ‘আমরা কি ইবলিসের রাজত্বে বাস করছি?’ দেশবাসীর প্রতি এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি এ কে এম সেলিম ওসমান বলেছেন, শ্যামল কান্তি ভক্ত ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন। জনতা তাকে ঘেরাও করেছে। আমি সংসদ সদস্য হয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি। এখানে আমার কোনো দোষ নেই। গতকাল নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডে তৃতীয় তলায় কনভেনশন হলে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনার এভাবে ব্যাখ্যা দেন তিনি। সেলিম ওসমান বলেন, আমি কোনো শিক্ষকের বিচার করি নাই। আমি একজন ইসলামের কটূক্তিকারীর বিচার করেছি। ধর্ম অবমাননার দায়ে এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে শিক্ষককে শাস্তি দিয়েছেন। এটি যদি অন্যায় হয়ে থাকে, সাজার যোগ্য অপরাধ হয়ে থাকে, এতে যদি ফাঁসিও হয় আমি মাথা পেতে নেবো। আমি ক্ষমা চাইব না। বন্দরে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামলকান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত উল্লেখ করে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, ফেসবুকে ওই ঘটনাস্থলের যে ভিডিও ফুটেজ দেখা গেছে সেখানে আমি ছাড়া আরো হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান উপস্থিত ছিলেন। সেখানে নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার শ্লোগান ছিল। কিন্তু ফুটেজে জয় বাংলা শ্লোগান কি ভাবে এলো, কেনই বা ভিডিওতে আমাদের তিনজনকেই শুধু ফোকাস করা হলো? এ থেকে বোঝা যায় ব্যাপারটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পাটির যুগ্মমহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা, বিকেএমইএ’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মঞ্জুরুল হক, সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ ইয়ার্ণ মার্চেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা, বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল, নারায়ণগঞ্জ নিউজ পেপারস ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আরিফ আলম দিপু।
সেলিম ওসমান বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা নিজেরাই শিক্ষকের শাস্তি দিতে চাইলে আমি তাদের নিবৃত্ত করি। এ সময় আমি শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলি এবং ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, সে বলে আমার একবার ব্রেন ষ্ট্রোক হয়েছে। আমার মাথা ঠিক থাকেনা। তাই ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে থাকতেও পারি। আর এজন্য সে যে কোনো শাস্তি মাথা পেতে নিতে রাজি হয়ে প্রাণে বাঁচানোর জন্যে আকুতি জানান। সে আরো বলে, আমি তিন কন্যা সন্তানের জনক। আমার মেয়েদের বিয়ে দিতে হবে। আমি যা করেছি ভুল করেছি। পরিস্থিতি উপলব্ধি করে আমি তাকে জনতার সামনে নিয়ে এলে তিনি স্বেচ্ছায় কান ধরে ওঠা বসা করেন। এরপর উত্তেজিত জনতা শান্ত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার সাথে সাথেই শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে পুলিশ প্রহরায় হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই। কারণ সে সময় গুরুতর আহত অবস্থায় ছিল।
সেলিম ওসমান বলেন, শিক্ষক শ্যামল কান্তির সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই। ঐ ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে যাচ্ছি। প্রাণ বাঁচানোর জন্য শ্যামল কান্তিসহ তার পরিবার আমার কাছে লিখিতভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। তার চিকিৎসার যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে সেই জন্য সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছি। কিন্তু আমি প্রশ্ন করতে চাই সেসব ভাই-বোনদেরকে যার কষ্ট করে বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করছেন তারা কি কখনো ঐ শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করেছেন ? তার চিকিৎসা ভালভাবে হচ্ছে কি না ? যারা আগে পরে কিছু দেখেননি। আমি তাদের দোষারোপ করছিনা। আপনাদের জায়গায় আমি থাকলেও একই কাজ করতাম। আমার দুঃখ সংসদ সদস্যরা আমার কাছে পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছুই জানতে চাননি, কোনো পরামর্শ দেননি। ঘটনার সম্পর্কে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, হাইকোর্টে রুল জারী হয়েছে। তদন্ত কমিটি কিংবা আদালত যে শাস্তি দিবে তা মাথা পেতে মেনে নিব। কিন্তু সবার কাছে অনুরোধ এই ঘটনার জন্য আমার এলাকাবাসীকে দায়ী করবেন না। এবং কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমি বিকেএমইএ, চেম্বার অব কমার্সসহ সকল প্রকার দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকবো।
তিনি আরো বলেন, আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। অকারণে আমাদের বাড়িতে একসময় গুলি করা হয়। রাতের অন্ধকারে আমার পরিবারসহ আমাকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হয়। একসময় আমাকে অনেক হেনস্থার সম্মুখীন হতে হয়, কিন্তু ক্ষমতায় এসে আমি কখনো প্রতিশোধ নেই নি। আমি সবসময় মানুষের সেবা করে যেতে চেষ্টা করেছি। শত্রুকে আলিঙ্গন করে তাদের জনগণের কল্যাণে কাজে লাগিয়েছি।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে গত ১৩ মে শুক্রবার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে নিয়ে যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাটি ঘটেছে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে জিজ্ঞাসা তৈরি হয়েছে, বিভিন্ন বক্তব্য প্রদান করা হচ্ছে, কোথাও বা আমার বক্তব্য জানতে চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই পর্যন্ত আমি কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য উপস্থাপন করিনি। তাই বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে ও হচ্ছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে- বিশেষ করে প্রকৃত ঘটনার প্রেক্ষাপট কী, কী ঘটেছিল, আমার উদ্দেশ্য কী ছিল এবং ঘটনার পরবর্তী প্রেক্ষাপটে আমার বক্তব্য সকলকে অবহিত করার জন্য এই ‘সংবাদ সম্মেলন’-এর আয়োজন করেছি।
এর আগে ঘটনার পর থেকে সেলিম ওসমান বিচ্ছিন্নভাবে বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন। এর মধ্যে বুধবার নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে ৮টি জাতীয় ও ৩৫টি জেলাভিত্তিক সংগঠন সংবাদ সম্মেলন করে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।