Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ব্রিটিশ রাজবংশের শোকের পোশাক

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৯:৫৯ পিএম

রাজপরিবারের সদস্যরা শোকানুষ্ঠানে বরাবরই কালো রঙের পোশাক পরে আসছেন। ব্রিটিশ রাজবংশের পোশাক এমনকি শোকের পোশাক নিয়ে হয়েছে নানা গবেষণা। রাজবংশের শতবছরের ঐতিহ্যে পোশাকে পরিবর্তন এলেও রানির শেষকৃত্যে তারা কোন রঙের পোশাক পরবেন সেদিকে নজর রয়েছে সবার।

রাজকীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আড়ম্বরপূর্ণ শোকানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আজ সোমবার রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে শেষ বিদায় জানাচ্ছে বিশ্ব। মায়ের শেষকৃত্যে নতুন রাজা চার্লস মেডেলসহ সামরিক পোশাক পরেছেন এবং সোনার ফিল্ড মার্শাল ছড়ি বহন করবেন। ২০১২ সালে ফিল্ড মার্শাল পদবি লাভ করার পর, রানি তাকে এটি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। রানির অন্য দুই সন্তান প্রিন্স এডওয়ার্ড, প্রিন্সেস অ্যান এবং নাতি প্রিন্স অব ওয়েলস উইলিয়াম সামরিক পোশাক পরবেন।

তবে সামরিক পোশাক পরতে পারবেন না রানির আরেক ছেলে প্রিন্স এ্যান্ড্রু ও নাতি প্রিন্স হ্যারি। রাজকীয় দায়িত্ব পালন থেকে স্থায়ীভাবে সরে যাওয়ায় সাধারণ পোশাকেই দেখা যাবে তাদের। রাজপরিবারের নারীরা কালো পোশাক ও কালো রঙের হ্যাট পরবেন আর অন্য পুরুষ সদস্যরা পরবেন কালো কোট- এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।

১৯৮২ সালে মোনাকোর প্রিন্সেস গ্রেস কেলির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় নববিবাহিতা প্রিন্সেস ডায়ানার পোশাক আলোচনায় উঠে এসেছিল। ডায়ানার পরনের লম্বা-হাতা কালো পোশাক, স্ট্র হ্যাটের সামনে লাগানো সিল্কের বিশেষ ধরনের কাপড়ে তার মুখ ঢাকা ছিল আর গলায় পরা মালা সবার নজর কেড়েছিল। ডায়ানার ওই পোশাক তার ফ্যাশন সেন্সের পরিচয় বহন করে, ২০২১ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন ব্রিটিশ ফ্যাশন ইতিহাসবিদ এবং সংগ্রাহক কেট স্ট্রাসডিন।

১৯৯৭ সালে ডায়ানার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রিন্স ফিলিপ, প্রিন্স উইলিয়াম, প্রিন্স হ্যারি, প্রিন্স চার্লস ও ডায়ানার ভাই চার্লস স্পেন্সারের কালো রঙের স্যুট পরে কফিনের পেছনে হাঁটার দৃশ্যটি রাজকীয় ইতিহাসের অন্যতম হৃদয়বিদারক ছবি এবং আধুনিক রাজকীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পোশাকের প্রতীক।

১৯৩৮ সালে কালোর পরিবর্তে শোকের পোশাক সাদা পরেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মা। মায়ের শেষকৃত্যে সাদা পোশাকে দেখা যায় রানি প্রথম এলিজাবেথকে। ১৬ শতকে স্কটসের রানি মেরি পরিবারের একাধিক সদস্যকে হারানোর পর সাদা পোশাকে শোক পালন করেন। তার একটি ছবি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মা তার নিজের মায়ের শেষকৃত্যে সাদা পোশাক পরেছিলেন।

কালো শোকের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। শেষকৃত্যে অংশ নিতে বরাবরই কালো বা ধূসর রঙের পোশাক বেছে নেন ইউরোপ বা পশ্চিমা দেশের মানুষরা। কালো পোশাক পরে শোক জানানোর এ রীতিটি মধ্য যুগে শুরু হয়। সে সময় মূলত বিত্তশালী পরিবারগুলো এ রীতি মেনে চলত। তবে ১৯ শতকে কালো শোকের প্রতীক হিসেবে সার্বজনীন হয়ে ওঠে। ইউরোপ ও আমেরিকাতে ওই সময়েই শোকের পোশাক হিসেবে বিশেষ করে নারীরা কালো পরতেন। ভিক্টোরিয়া যুগে শোকের স্তর প্রকাশ পেত পোশাক দিয়ে। শোকের পোশাকের সঙ্গে অর্থ ও মর্যাদা যুক্ত ছিল।

শোকের পোশাকের রং হবে কালো- এ ধারণাটিতে সম্ভবত রানি ভিক্টোরিয়া বিশেষভাবে প্রভাব ফেলতে পেরেছিলেন। ১৮৬১ সালে তার স্বামী প্রিন্স অ্যালবার্টের মৃত্যুর পর থেকে ৪০ বছর অর্থাৎ তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন কালো পোশাক পরতেন।

ভিক্টোরিয়া যুগে শোকের স্তর প্রকাশ পেত পোশাক দিয়ে। সে যুগে শোকের পোশাকের সঙ্গে অর্থ ও মর্যাদা যুক্ত ছিল। বিধবা নারীদের বিশেষ পোশাক পরার যে চল শুরু হয়, যেটা ‘উইডোস উইডস’ নামে পরিচিত ছিল। বিধবা নারীরা আড়াই বছর শোকের পোশাক পরতেন। পর্যায়ক্রমে পোশাকের রং পরিবর্তন হতো। শেষ ছয় মাস তারা সাদা, ধূসর, বিবর্ণ হলুদ, হালকা বেগুনি বা ল্যাভেন্ডার কালারের পোশাক পরতেন। অর্থাৎ শোক পালনের সময়সীমা পরিবর্তনের সঙ্গে পোশাকের রং পরিবর্তন হতো।

তবে এই কালো পোশাক ক্রমেই অজনপ্রিয় হতে শুরু করে। পোশাকে এই রং মেনে চলা অনেকের কাছেই কঠিন মনে হতে শুরু করে। এ কঠোর নিয়ম ভঙ্গ করেন তার পুত্রবধূ রানি আলেকজান্দ্রা। আলেকজান্দ্রা তার নিজের বড় ছেলে এবং রানি ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পর বিধিনিষেধ শিথিল করে পরিবর্তন এনেছিলেন।

কয়েক দশক ধরে শোকের পোশাকের পরিবর্তন এসেছে। এখনো পর্যন্ত পোশাকে ১৯ শতকের প্রভাব বিশেষ লক্ষণীয়। তবে ‘কালো’ শোকের পোশাক; রানি ভিক্টোরিয়ার ভাবনার প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। এমনটাই জানালেন ১৯ ও ২০ শতকের গোড়ার দিকের পোশাকের ইতিহাস, সংস্কৃতি, রাজকীয় পোশাক, রাজপরিবারের নারীদের পোশাক নিয়ে গবেষণা করা কেট স্ট্রাসডিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ