পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টেন্ডারের ব্যাংক গ্যারান্টির পে-অর্ডারটি দেয়া হয়েছে ঋণ নিয়ে। কোনো মর্টগেজ নেই। ‘কো-লেটারাল‘ বলতে দেয়া হয়েছে কিছু ‘ওয়ার্ক অর্ডার’। এভাবে শুধু সরকারি কার্যাদেশের বিপরীতে ৭৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ‘ডলি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব তিনটি ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় এ অর্থ। সরকারি কার্যাদেশের বিপরীতে ঋণ নেয়া হলেও অসম্পন্ন রয়ে গেছে কাজগুলো। ফলে ঋণের নামে হাতিয়ে নেয়া এ অর্থ ফেরত পাওয়া এখন অনিশ্চিত। ব্যাংকগুলোর এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় বিশেষ শ্রেণির ঠিকাদার, আমদানি ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘ডলি কনস্ট্রাকশন লি:’ বিপুল এই অর্থ হাতিয়ে নেয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টির ওপর অনুসন্ধান চালালেও রহস্যজনক কারণে দেয়া হয় দায়মুক্তি।
এ বিষয়ে হাইকোর্টে দায়ের এক আবেদনে বলা হয়, ডলি কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলাকালে ‘গাইড লাইন‘ বা ম্যানুয়াল অনুসরণ করা হয়নি। এ কারণে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কৌশলে দায়মুক্তি পেয়ে যান। শুনানি শেষে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের ডিভিশন বেঞ্চ গত ১ সেপ্টেম্বর দুদকের অনুসন্ধানের রেকর্ডপত্র তলব করেন। সেইসঙ্গে দুদক থেকে এ সংক্রান্ত নথি (নং-০০.০১.০০০০.৫০৩.২৬.৫৩৬.১৯) তলব করা হয়েছে। আগামী ৩ নভেম্বরের মধ্যে নথি দাখিল করতে হবে। আবেদনের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ২০১৯ সালের ১ আগস্ট প্রকাশিত অভিযোগের বিষয়ে পুনরায় তদন্ত করার কেন নির্দেশ দেয়া হবে নাÑ এই মর্মে ৪ সপ্তাহের রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৬ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে।
এদিকে দুদক সূত্র জানায়, অভিযোগে উল্লেখিত অপরাধ দুদকের তফসিলভুক্ত হলে দায়মুক্তি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ম্যানুয়াল অনুসরণ না করে অনুসন্ধান হয়ে না থাকলে সেটির পুনঃঅনুসন্ধান হতে পারে।
দুদকের আরেকটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)ও একটি প্রতিবেদন ধরে ডলি কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে দুদক নতুন একটি অনুসন্ধান শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অনুসন্ধান কর্মকর্তা। অনুসন্ধান প্রক্রিয়া এখন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ চলছে।
সূত্রটি জানায়, ‘মেমার্স ডলি কনস্ট্রাকশন ’ (ট্রেড লাইসেন্স নং-০৩৯৬৫২) রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ৩টি ব্যাংকের মাধ্যমে নির্মাণ ব্যবসা পরিচালনা করছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছেÑ অগ্রণী, জনতা এবং রূপালী ব্যাংক লি:। রূপালী ব্যাংক, মতিঝিল শাখা, অগ্রণী ব্যাংক আমিনকোর্ট শাখা, জনতা ব্যাংক, স্থানীয় কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসায়িক লেনদেন করে। অ্যাকাউন্টগুলোর মালিকানায় রয়েছে ‘মেসার্স হৃদয় ট্রেডার্স’, ‘হৃদয় এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লি:’ ‘ডলি অটো স্পিনিং মিলস লি:’ এবং ‘উদয় ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’সহ কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। ‘মেসার্স ডলি কনস্ট্রাকশন লি:’র চেয়ারম্যান ডলি আক্তার। ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন। তার ভাই মো. জহিরুল ইসলামের মালিকানাধীন ‘মেসার্স উদয় ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’।
রেকর্ডপত্রে দেখা যায়, এ প্রতিষ্ঠানটির নামে ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর একটি অ্যাকাউন্ট (নং-২০০০৮০৬৭৬) খোলা হয়। এসএমই খাতে চলতি মূলধন বাবদ গ্রাহকের অনুকূলে ২০ কোটি টাকার ঋণসীমা মঞ্জুর করা হয়। এই ঋণ অ্যাকাউন্টে (নং-৫৫০০০০৪৪৭)র ঋণ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৪ সালের ৬ মে ৭০ লাখ টাকা ঋণের অর্থ আসে। ২০১৪ সালের ৭ মে ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণের অর্থ জমা হয়। ঋণ অ্যাকাউন্ট থেকে বড় অংকের অর্থ ডলি কনস্ট্রাকশনের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর হয়েছে। একটি বড় অংশ নগদে উত্তোলনও করা হয়। যেমন: ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল ১.২০ কোটি টাকা নগদ ওঠানো হয়েছে। একই বছর ৪ জুন ৩.৫০ কোটি টাকা ও ১.৫০ কোটি টাকা ০৭/০৬/২০১৫,০৯/০৬/২০১৫ ও ১৪/০৬/২০১৫ তারিখে যথাক্রমে ১ কোটি টাকা, ১.২০ কোটি টাকা, ১ কোটি টাকা ডলি কনস্ট্রাকশনের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়।
এছাড়া ‘মেসার্স উদয় ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল‘ মালিক মো. জহিরুল ইসলাম ২০১৬ সালের ২০ এপ্রিল নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে হলফনামার মাধ্যমে ঋণ অ্যাকাউন্ট পরিচালনার দায়িত্ব তার ভাই ডলি কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করেন। এত ‘মেসার্স উদয় ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল‘র নামে এসএমই ঋণটি অনুমোদন করা হলেও অর্থের সুবিধাভোগী ডলি কনস্ট্রাকশনের মালিক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন। ব্যাংকের এসএমই বিভাগের ২৯/০৫/২০১৬ তারিখের চিঠি অনুযায়ী, মেসার্স উদয় ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিকানা ও ঋণস্থিতি মেমার্স ডলি কনস্ট্রাকশনের মালিক নাসিরউদ্দিনের নামে স্থানান্তরের অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু ঋণ অ্যাকাউন্টটির বিষয়ে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সিআইবিতে রিপোর্ট করেনি। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা অর্থের বিনিময়ে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের তথ্য গোপন করেন। এতে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্র্যন্ত ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ১৮.২৪ কোটি টাকা।
২০১৯ সালের ২৭ মে অগ্রণী ব্যাংকের আমিন কোর্ট শাখা থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ‘ডলি কনস্ট্রাকশন লি:’কে ১১৫ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। নিয়ম লঙ্ঘন করে একই প্রক্রিয়ায় রূপালী ব্যাংক লি:’র মতিঝিল করপোরেট শাখা থেকে ঋণ নেয় ৪৩০ কোটি টাকা।
ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অতিমূল্যায়ণ করা হয় ডলি কনস্ট্রাকশনের আর্থিক প্রতিবেদনে। নির্ধারিত ঋণসীমার অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের লক্ষ্যেই প্রতিবেদনে অতিমূল্যায়ন করা হয়। বিভিন্ন সরকারি কার্যাদেশের (ওয়ার্ক অর্ডার) বিপরীতে ঋণ দেয়া হয় বিপুল অংকের ঋণ। অথচ যে ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে ঋণ দেয়া হয় সেগুলো ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট শাখায় সংরক্ষণও করা হয়নি। এভাবে দুই ব্যাংক থেকে ডলি কনস্ট্রাকশন জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় ৫৪৫ কোটি টাকা।
রেকর্ডপত্রে আরও দেখা যায়, ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি রূপালী ব্যাংকের ৯৯০তম পর্ষদসভায় ডলি কনস্ট্রাকশনের অনুকূলে ৫০ কোটি টাকার এসওডি (ওয়ার্ক অর্ডার এর বিপরীতে) এবং ৫ কোটি টাকা ব্যাংক গ্যারান্টি অনুমোদন করা হয়েছে। আবার গ্রাহকের আবেদন এবং রূপালী ব্যাংক শাখার প্রস্তাবের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি গ্রাহকের অনুকূলে ১০০ কোটি টাকার এসওডি এবং ২৫ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি সুবিধা দেয়া হয়। একইভাবে ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট ডলি কনস্ট্রাকশনের অনুকূলে নতুনভাবে ২২৫ কোটি টাকা এসওডি এবং ৭৫ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি সুবিধা দেয়া হয়। ২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ‘একক গ্রাহকের ঋণসীমা’ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অনাপত্তি দেয়। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই ৩৫০ কোটি টাকার এসওডি এবং ১২৫ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি সুবিধা দেয়া হয়। গ্রাহকের ফান্ডেড দায় অবিলম্বে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ২৬(খ)(১) অনুযায়ী নির্ধারিত সীমা (২৫%)র মধ্যে নামিয়ে আনার শর্তে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ‘একক গ্রাহকের ঋণ সীমা’র বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনাপত্তি দেয়।
আবার গ্রাহকের অনুকূলে নতুন ৩০ কোটি টাকার ফান্ডেড ও ২০ কোটি টাকা ‘নন-ফান্ডেড‘ ঋণ সুবিধা বিতরণ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি অনুযায়ী ডলি কনস্ট্রাকশনের অনুমোদিত ঋণসীমা হওয়ার কথা ফান্ডেড ২৫৫ কোটি টাকা এবং নন-ফান্ডেড ৯৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বরের চিঠি অনুযায়ী, ঋণসীমা এসওডি ২৮০ কোটি টাকা এবং ব্যাংক গ্যারান্টি ৭০ কোটি টাকা। তথাপি তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ একক সিদ্ধান্তে ডলি কনস্ট্রাকশনকে নতুনভাবে ‘ফান্ডেড‘ ঋণ দেন। এমনকি নন-ফান্ডেড সুবিধাকে ফান্ডেড দায়ে রূপান্তর করে ডলি কনস্ট্রাকশনকে আরও অর্থ হাতিয়ে নিতে সহায়তা করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের [(১৯৪৭ সনের ২ নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন আইনের ৫(২) ধারা] এবং ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুদক সূত্রটি আরও জানায়, নির্দিষ্ট সময়ে ঋণের অর্থ ডলি কনস্ট্রাকশন সমন্বয় না করায় বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্ত ভঙ্গ হয়েছে। ‘একক গ্রাহকের ঋণসীমা’ সম্পর্কিত অনাপত্তি কার্যকর করার সুযোগ নেই। ফলে গ্রাহকের অনুকূলে মঞ্জুরিকৃত নতুন সীমা বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘটনাত্তোর অনুমোদনটিতে দেয়া শর্ত অ-প্রতিপালিত থেকে যায়। এ কারণে ঋণগুলো রূপালি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের একক অনুমোদন তথা অননুমোদিত ঋণ হিসেবে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক গ্রাহকের অনুকূলে ফান্ডেড সুবিধা প্রদান এবং পরবর্তীতে নন-ফান্ডেড সীমাকে ফান্ডেড ঋণে রূপান্তর ও ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে ‘একক গ্রাহক ঋণসীমা’ সংক্রান্ত বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকটিতে আমানতকারীদেও স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে।
ব্যাংকের অনুকূলে লিয়েনকৃত ১১৫টি কার্যাদেশ’র চুক্তি মূল্য ৭২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু গ্রাহকের অনুকূলে মোট উত্তোলনে সুবিধা দেয়া হয়েছে প্রায় ৫৯৬ কোটি ২৬ লাখ টাকার। মঞ্জুরিপত্রের শর্ত অনুযায়ী কার্যাদেশ চুক্তি মূল্যের সর্বোচ্চ ৮০ভাগ ঋণ বিতরণ করার সুযোগ থাকলেও এ শর্ত লঙ্ঘন করে গ্রাহককে কার্যাদেশ চুক্তি মূল্যের প্রায় ৮২.১৯% টাকা উত্তোলনের বাড়তি সুবিধা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ২০১৯ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ঋণের সম্পূর্ণ অংশই উত্তোলন করা হয়। অনেকগুলো কার্যাদেশের চুক্তির মেয়াদ শেষের দিকে হলেও কাজের ‘সন্তোষজনক‘ নয় মর্মে বিএফআইইউ‘র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২টি কার্যাদেশের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ব্যাংক গ্যারান্টির অর্থ নগদায়নের জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করায় সামগ্রিকভাবে কার্যাদেশের বিপরীতে বিল-মূল্য প্রাপ্তির বিষয়টি এখন অনিশ্চিত।
সাধারণত: কার্যাদেশের বিপরীতে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কার্যাদেশের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে অগ্রগতির হার অনুযায়ী ঋণ বিতরণের নিয়ম। কিন্তু ডলি কনস্ট্রাকশনকে ঋণ দেয়ার ২ বছর অতিবাহিত হলেও কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। কার্যাদেশে মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও প্রাপ্ত বিলের পরিমাণ সন্তোষজনক না হওয়া, কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে সেই হারে ঋণ ছাড় না করা গ্রাহকের ইচ্ছে অনুযায়ী ঋণের অর্থ ছাড় করা, গ্রাহকের ঋণ অনাদায়ী থেকে বিএফআইইউ নিশ্চিত হয়েছে যে, ডলি কনস্ট্রাকশনের মালিক, ব্যাংকটির শাখা কর্তৃপক্ষ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত্ব অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক লি: এবং রূপালি ব্যাংক লিমিটেড থেকে গৃহিত ফান্ডেড ঋণের পরিমাণ ৫১৭ দশমিক ৬৯ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোতে দেয়া ওয়ার্ক অর্ডারের মূল্য প্রায় ১০৮৪ দশমিক ৭৭ কোটি টাকা। বিপরীতে ডলি কনস্ট্রাকশনকে ৭৪০ দশমিক ১২ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। এর ফলে কার্যাদেশের মোট মূল্যের প্রায় ৭০ শতাংশ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তদুপরি কার্যাদেশের মোট মূল্যের একটি বৃহৎ অংশ সম্পাদন করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ব্যর্থ হয়েছে। ঋণের বাকি টাকা কোথায় খরচ করা হয়েছেÑ সেই প্রশ্নেরও কোনো উত্তর নেই।
অন্যদিকে কার্যাদেশ সম্পাদনের লক্ষ্যে ডলি কনস্ট্রাকশনের প্রয়োজনীয় ইক্যুইটির যোগান দেয়ার কোনো প্রমাণও নেই। এ ছাড়া কার্যাদেশের বিপরীতে প্রাপ্য বিলের অংশ থেকে ঋণের অর্থ আদায়ও এখন অনিশ্চিত। আবার কার্যাদেশের বিপরীতে দেয়া ঋণের অর্থ ডলি কনস্ট্রাকশনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে পরিচালিত অ্যাকাউন্টে লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে অন্যত্র সরানো হয়েছে। যা নিশ্চিত এক ব্যাংকের ঋণের টাকা দিয়ে অন্য ব্যাংকের ইক্যুইটির যোগান দেয়ার বড় প্রমাণ। অন্য ব্যাংকের স্থানান্তরিত অর্থ থেকে একটি অংশ নগদ উত্তোলনের মাধ্যমে অর্থের গতিপ্রকৃতি আড়াল করা হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে ডলি কনস্ট্রাকশন ব্যাংকগুলোর শাখা এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ব্যাংক ঋণের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। ঋণের নামে সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেয়া এবং তা অন্য ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ২(শ) অনুসারে দণ্ডনীয় অপরাধ। দুদক তাই ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার, ডলি কনস্ট্রাকশনের অর্থ আত্মসাৎ, আত্মসাৎকৃত অর্থ অন্যখাতে স্থানান্তর, স্থানান্তরে সহযোগিতাসহ একাধিক ধারায় অপরাধ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রামাণিকভাবে চিহ্নিত করা এবং দায়-দায়িত্ব নির্ণয়ে নতুন করে অনুসন্ধান করছে।
অনুসন্ধানের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আবু জাফর সাদেক শিবলী এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। তবে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, অনুসন্ধানটি চলমান রয়েছে। শেষ হলেই সব কিছু জানতে পারবেন।
এদিকে কার্যাদেশের বিপরীতে ঋণ উত্তোলন, আত্মসাৎ এবং অর্থ অন্যত্র স্থানান্তরের বিষয়ে জানতে মেসার্স ডলি কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের ফোন নম্বরে রিং হলেও কেউ ধরেননি। পরে গত ৭ সেপ্টেম্বর অভিযোগটির বিষয়ে বক্তব্য চেয়ে ই-মেইল পাঠানো হয়। গতকাল ১৭ সেপ্টেম্বর এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো প্রতি-উত্তর আসেনি। সেনাকল্যাণ ভবনস্থ মেসার্স ডলি কনস্ট্রাকশন লি:’র অফিসে গেলে জনাব রায়হান নামক একজন এমপ্লয়ী জানান, এমডি সাহেব অফিসে নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।