Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যে কটুকথা শুনেও সবর করে-১

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যে মুমিন মানুষের সাথে মেশে এবং তাদের পক্ষ থেকে পাওয়া কষ্টের ওপর সবর করে, সে ওই মুমিনের চেয়ে উত্তম, যে মানুষের সাথে মেশে না এবং তাদের দেয়া কষ্টের ওপর সবর করে না। (আলআদাবুল মুফরাদ, বুখারী : ৩৮৮)।

এই হাদীসের ওপর ইমাম বুখারী রাহ.-এর শিরোনাম : ‘যে ব্যক্তি মানুষের দেয়া কষ্টের ওপর সবর করে।’ অর্থাৎ, তার ফজিলত ও মর্যাদা। এ শিরোনামে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে, তাতে ওই মুমিনের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণিত হয়েছে, যে মানুষের সাথে মেশে এবং ধৈর্য ধারণ করে। হাদীসটি মানুষের সাথে মেলামেশার নীতি ও বিধান সংক্রান্ত একটি হাদীস। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, মানুষের সাথে মেলামেশার ক্ষেত্রেও শরয়ী নীতিমালা আছে, যা রক্ষা করে চলতে হবে।

মানুষের সাথে মেলামেশা হলে অনেক সময় তাদের কাছ থেকে নানা ধরনের কটূক্তি, কটু কথাও শুনতে হতে পারে। বিভিন্নভাবে কষ্ট পাওয়ারও ব্যাপার ঘটতে পারে। বিশেষত যারা দাওয়াতের অঙ্গনে কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে তো এমনটা ঘটতেই পারে। এসব ক্ষেত্রে সবর করতে হবে। মানুষের সাথে মেশার শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ সবর। এ প্রসঙ্গে ‘আযান’ শব্দটি এসেছে। আরবি ভাষায় শব্দটি যদিও যে কোনো কষ্ট কিংবা কষ্টদায়ক বস্তু বা ব্যাপারকে নির্দেশ করে, কিন্তু সাধারণত শব্দটি কটু কথা, কষ্টদায়ক কথা বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। কষ্টদায়ক কথাকে বিভিন্ন জায়গায় ‘আলআযা’ বলা হয়েছে।

আবু মূসা আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেন : আল্লাহপাকের চেয়ে কটু কথার ওপর অধিক সবরকারী আর কেউ নেই। লোকেরা তাঁর জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে, অথচ তিনি তাদেরকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখেন এবং তাদেরকে রিযিক দান করেন। (সহীহ বুখারী : ৬০৯৯)।

আল্লাহ তাআলার জন্য সন্তান সাব্যস্ত করা ভয়াবহ রকমের কটূক্তি! কারণ তিনি তো ওই সত্তা, যিনি নিজের ব্যাপারে বলেছেন : আল্লাহ এক। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন। সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী। কেউ তাঁর সন্তান নয়, তিনিও কারো সন্তান নন এবং তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। সন্তান সাব্যস্ত করার অর্থ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য সমকক্ষ সাব্যস্ত করা। কারণ পিতা ও সন্তান পরস্পর সমশ্রেণির হয়ে থাকে। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হলেন ওই সত্তা, যাঁর মতো আর কেউ নেই।

আমরা পৃথিবীতে অনেক শ্রেণির মাখলুক দেখে থাকি। মানুষ একটি শ্রেণি। আল্লাহপাকের একটি সৃষ্টি। এই শ্রেণির অনেক সদস্য পৃথিবীতে রয়েছে। লক্ষ-কোটি মানুষ আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন। সবাই পরস্পর সমশ্রেণির। কিন্তু আল্লাহ তাআলা হলেন ওই সত্তা, যার মতো আর কেউ নেই। তিনি এক ও একক। তাঁর জন্য ‘ওয়ালাদ’ বা সন্তান সাব্যস্ত করার অর্থ হলো, তাঁকে তাঁর সৃষ্টির সমশ্রেণির সাব্যস্ত করে দেয়া। এর চেয়ে বড় কটূক্তি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শানে আর কী হতে পারে?

তো বহু মানুষ আল্লাহপাকের জন্য সমকক্ষতা সাব্যস্ত করে, অথচ এর পরও তিনি তাদেরকে রক্ষা করেন। রিযিক দান করেন। তাই কটূক্তির ওপর সবরকারী তাঁর চেয়ে বেশি আর কেউ নেই। এখান থেকে আমরা আল্লাহ তাআলার একটি সিফাত ও বৈশিষ্ট্য জানলাম যে, তিনি কটূক্তির ওপর সবর করেন। তাঁর সবর করার অর্থ, তিনি বান্দাকে তৎক্ষণাৎ শাস্তি দেন না; বরং রিযিক দিতে থাকেন। তাকে আফিয়াত ও সালামতি দিতে থাকেন, রক্ষা করতে থাকেন।



 

Show all comments
  • Engr Amir Hamja ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:৩৫ এএম says : 0
    মানুষের জীবনে সবর বা ধৈর্যধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দুনিয়া ও পরকালে সবরের নেয়ামতও অনেক বেশি।
    Total Reply(0) Reply
  • Rabbul Islam Khan ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:৩৫ এএম says : 0
    জীবনে বিপদ-মুসিবত নেমে এলে অস্থিরতা প্রকাশ না করে ধৈর্যধারণ করাই উত্তম। আর তাতে আল্লাহর কাছে পাওয়া যাবে অনেক প্রতিদান।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Parves Hossain ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:৩৬ এএম says : 0
    মানুষের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। মুমিনের প্রতিটি পদক্ষেপে ধৈর্যের প্রয়োজন। আল্লাহর নির্দেশের সামনে ধৈর্যের প্রয়োজন। আল্লাহর পথে দাওয়াতের ক্ষেত্রে ধৈর্যের প্রয়োজন। কারণ এ পথে নিজেকে পরিচালিত করলে অনেক বেশি কষ্ট-বিপদের মুখোমুখি হতে হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ali Azgor ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:৩৬ এএম says : 0
    সবর করার সময় কোনাভাবেই ক্ষোভ, হতাশা ও অস্থিরতা প্রকাশ করা যাবে না। নিজের ভাষা ও আচরণকে সংযত রাখাও জরুরি।
    Total Reply(0) Reply
  • Jahangir Khan ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:৩৭ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের সব নেয়ামত ও সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ বাতেনুর রহমান ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৯:২৫ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তুমি আমাকে ঈমানের সাথে সহজ মৃত্যু দিও।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন