বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যে মুমিন মানুষের সাথে মেশে এবং তাদের পক্ষ থেকে পাওয়া কষ্টের ওপর সবর করে, সে ওই মুমিনের চেয়ে উত্তম, যে মানুষের সাথে মেশে না এবং তাদের দেয়া কষ্টের ওপর সবর করে না। (আলআদাবুল মুফরাদ, বুখারী : ৩৮৮)।
এই হাদীসের ওপর ইমাম বুখারী রাহ.-এর শিরোনাম : ‘যে ব্যক্তি মানুষের দেয়া কষ্টের ওপর সবর করে।’ অর্থাৎ, তার ফজিলত ও মর্যাদা। এ শিরোনামে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে, তাতে ওই মুমিনের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণিত হয়েছে, যে মানুষের সাথে মেশে এবং ধৈর্য ধারণ করে। হাদীসটি মানুষের সাথে মেলামেশার নীতি ও বিধান সংক্রান্ত একটি হাদীস। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, মানুষের সাথে মেলামেশার ক্ষেত্রেও শরয়ী নীতিমালা আছে, যা রক্ষা করে চলতে হবে।
মানুষের সাথে মেলামেশা হলে অনেক সময় তাদের কাছ থেকে নানা ধরনের কটূক্তি, কটু কথাও শুনতে হতে পারে। বিভিন্নভাবে কষ্ট পাওয়ারও ব্যাপার ঘটতে পারে। বিশেষত যারা দাওয়াতের অঙ্গনে কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে তো এমনটা ঘটতেই পারে। এসব ক্ষেত্রে সবর করতে হবে। মানুষের সাথে মেশার শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ সবর। এ প্রসঙ্গে ‘আযান’ শব্দটি এসেছে। আরবি ভাষায় শব্দটি যদিও যে কোনো কষ্ট কিংবা কষ্টদায়ক বস্তু বা ব্যাপারকে নির্দেশ করে, কিন্তু সাধারণত শব্দটি কটু কথা, কষ্টদায়ক কথা বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। কষ্টদায়ক কথাকে বিভিন্ন জায়গায় ‘আলআযা’ বলা হয়েছে।
আবু মূসা আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেন : আল্লাহপাকের চেয়ে কটু কথার ওপর অধিক সবরকারী আর কেউ নেই। লোকেরা তাঁর জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে, অথচ তিনি তাদেরকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখেন এবং তাদেরকে রিযিক দান করেন। (সহীহ বুখারী : ৬০৯৯)।
আল্লাহ তাআলার জন্য সন্তান সাব্যস্ত করা ভয়াবহ রকমের কটূক্তি! কারণ তিনি তো ওই সত্তা, যিনি নিজের ব্যাপারে বলেছেন : আল্লাহ এক। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন। সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী। কেউ তাঁর সন্তান নয়, তিনিও কারো সন্তান নন এবং তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। সন্তান সাব্যস্ত করার অর্থ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য সমকক্ষ সাব্যস্ত করা। কারণ পিতা ও সন্তান পরস্পর সমশ্রেণির হয়ে থাকে। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হলেন ওই সত্তা, যাঁর মতো আর কেউ নেই।
আমরা পৃথিবীতে অনেক শ্রেণির মাখলুক দেখে থাকি। মানুষ একটি শ্রেণি। আল্লাহপাকের একটি সৃষ্টি। এই শ্রেণির অনেক সদস্য পৃথিবীতে রয়েছে। লক্ষ-কোটি মানুষ আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন। সবাই পরস্পর সমশ্রেণির। কিন্তু আল্লাহ তাআলা হলেন ওই সত্তা, যার মতো আর কেউ নেই। তিনি এক ও একক। তাঁর জন্য ‘ওয়ালাদ’ বা সন্তান সাব্যস্ত করার অর্থ হলো, তাঁকে তাঁর সৃষ্টির সমশ্রেণির সাব্যস্ত করে দেয়া। এর চেয়ে বড় কটূক্তি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শানে আর কী হতে পারে?
তো বহু মানুষ আল্লাহপাকের জন্য সমকক্ষতা সাব্যস্ত করে, অথচ এর পরও তিনি তাদেরকে রক্ষা করেন। রিযিক দান করেন। তাই কটূক্তির ওপর সবরকারী তাঁর চেয়ে বেশি আর কেউ নেই। এখান থেকে আমরা আল্লাহ তাআলার একটি সিফাত ও বৈশিষ্ট্য জানলাম যে, তিনি কটূক্তির ওপর সবর করেন। তাঁর সবর করার অর্থ, তিনি বান্দাকে তৎক্ষণাৎ শাস্তি দেন না; বরং রিযিক দিতে থাকেন। তাকে আফিয়াত ও সালামতি দিতে থাকেন, রক্ষা করতে থাকেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।