Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাষ্ট্রীয় সংগঠন ও আ.লীগ অভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে: রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:২৭ পিএম

রাষ্ট্রীয় সংগঠন ও আওয়ামী লীগ এখন অভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিএনপি’র ওপর আক্রমণ করার জন্য অবৈধ অস্ত্রধারী যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং রাষ্ট্রীয় সংগঠন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। এভাবেই অবৈধ শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশকে এক বিপজ্জনক চোরাবালির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। ক্ষমতার সীমাহীন লিপ্সায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে সরকার।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলীয় স্বার্থে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর সর্বনাশা অভ্যাস হয়ে গেছে সরকারের। এরা জনগণের ইচ্ছাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়। বিনা নির্বাচনে বারবার ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে ওরা আত্মবিশ^াস হারিয়েছে। আওয়ামী নিশিরাতের সরকার যে গুম-খুনের হোতা সে বিষয়টি সুপ্রতিষ্ঠিত জনগণের মুখে মুখে। সকল অপকর্ম করে মিথ্যার বাড়াবাড়ি দিয়ে কোন বিজয় অর্জন হতে পারে না। উন্নয়নের ফানুস ও মায়াজালও এখন মানুষের কাছে হাস্যকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসলে দেশের ওপর চলছে আওয়ামী বেপরোয়া দখলদারী।

তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের একট নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ স্থান গড়ে উঠতে না দিয়ে এটিকে একদলীয় কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসকে টিকিয়ে রাখার জন্য তারা গুম এবং ক্রসফায়ারকে অলিখিতভাবে রাষ্ট্রীয় নীতির অঙ্গীভুত করেছে। তারই সর্বশেষ বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল সিলেটে- রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সকল মামলায় জামিনে থাকা সত্বেও গতকাল সিলেটে জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদকে বিনা ওয়ারেন্টে গতকাল গভীর রাতে তার বাড়ীর দরজা ভেঙ্গে উঠিয়ে নিয়ে গেছে র‌্যাব। তাকে র‌্যাব তুলে নিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত তাকে আটকের বিষয়টি ঘোষণা করেনি। অথচ এলাকার অনেকেই দেখেছে মকসুদ আহমেদকে র‌্যাব-ই উঠিয়ে নিয়ে গেছে এবং এখন মকসুদ আহমেদ র‌্যাবের হেফাজতে আছে বলে নানাভাবে জানা গেছে।

রিজভী বলেন, গুম ও ক্রসফায়ার এই শতকে গণতন্ত্র ও সভ্যতার প্রতি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণকে রেখেছে শঙ্কা ও সংশয়ের মাঝে। দুঃস্বপ্নের অতীত এক অভিঘাত গুম ও ক্রসফায়ার। গতকালও জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার নাদা আল নাসিফ বাংলাদেশের গুম-খুন-মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। সুতরাং জনগণের নিরাপত্তার জন্যই এই সরকারের পতন এ মূহুর্তে জরুরী।

তিনি বলেন, আজকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়েই হত্যা, জখম আর পঙ্গুত্বের সারি প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে। চলছে দুবৃত্তায়ন ও ইতরায়নের জয়জয়কার। নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেই এই ভোট ডাকাত সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার জন্য রাষ্ট্রশক্তির নিষ্ঠুর অপব্যবহারে মত্ত হয়ে ওঠে। আওয়ামী দু:শাসনের ভয়ংকর শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে দুর্বার আন্দোলনের সারাদেশে জনজোয়ার দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে সরকার। বিশেষ করে গত জুলাই ও আগস্ট থেকে মিটিং-মিছিল-¯েøাগান প্রতিরোধে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশের চিত্র দেখে অবৈধ সরকার রাষ্ট্রশক্তির চূড়ান্ত অপব্যবহারের মাধ্যমে শ্বেতসন্ত্রাস শুরু করেছে। পুলিশ র‌্যাবসহ রাষ্ট্রীয় আইন-শৃংখলা বাহিনী এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিশেষ সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা মামলা হত্যা নির্যাতনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে শেখ হাসিনা। পরনির্ভর গণবিচ্ছিন্ন পাপেট সরকার ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি পেতে বিভিন্ন জায়গায় ধর্না দিয়েও ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে এখন উন্মাদ হয়ে সরাসরি প্রতিবাদ মিছিলে গুলী করে হত্যা করছে। চোখে গুলি করে অন্ধ করে দেয়া হচ্ছে যাতে দেখতে না পায়। পায়ে গুলি করে সাহসী নেতাকর্মীদের চিরতরে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে যাতে তারা রাজপথে নামতে না পারে। বুকে-মুখে-মাথায় গুলী করে ঝাঁজরা করে দেয়া হচ্ছে যাতে কথা বলতে না পারে। রংপুরের গঙ্গাছড়ায় তুলিপ, মোরসালিন আহমেদ, হাজানুর রহমান হারেস, নারায়ণগঞ্জে আলিফ, সিরাজগঞ্জের রনি ইমরান, চট্টগ্রামের ইব্রাহিমসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীকে চোখে গুলি খেয়ে এখন অন্ধ হতে বসেছে। এদের চোখের আলো কেড়ে নিয়েছে শেখ হাসিনা। কিশোরগঞ্জে ছাত্রদল নেতা শ্রাবনের পেটে-বুকে অসংখ্য গুলিতে সে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তার শরীর থেকে গুলিও বের করা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রাণ কেড়ে নেয়া, চোখ কেড়ে নেয়া, হাত-পা কেড়ে নেয়া শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। খেলা হবে বলে শেখ হাসিনার নেতা-মন্ত্রীরা যে বক্তব্য দিয়েছেন এটি সেই খেলারই নির্দয় নমূণা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুলিশ দিয়ে হামলা করে বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের গুলি করে পঙ্গু করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এই মাফিয়া সরকার রাষ্ট্রক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার সব অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই উদ্দেশ্য পূরণে সরকার দিন-দিন দানবীয় রূপ ধারণ করছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীসহ নির্বিচারে মানুষ হত্যা, গুম, অপহরণ ও গণগ্রেফতার করে সরকার নিজের নিরাপদ অবতরণের পথকেই ক্রমশ সংকুচিত করে যাচ্ছে। সরকারের উন্নয়নে মহাসড়ক এখন লাশ, গুম, খুন, চোখ হারানো অন্ধ, হাত-পা হারানো পঙ্গুসহ ভয়াবহ নৈরাজ্যের মহাসাগরে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, বিচারপতিরা ন্যায়বিচার করতে ভয় পান, সরকার ও তাদের মদদে আইন আদালতের নির্মম প্রবঞ্চনা ও কপটতা অব্যাহতভাবে চলছে। সাধারণ মানুষ বাসে-ট্রেনে পাবলিক প্লেসে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছে। তবে সকল ভয় ভেঙ্গে জনগণের কন্ঠ জোরালো হচ্ছে, সরকারের পাতা ঝরতে শুরু করেছে। ক’দিনের মধ্যেই এরা ঝরাপাতায় পরিণত হবে।

রিজভী মকসুদ আহমেদকে অন্যায়ভাবে আটক ও এখনও পর্যন্ত গুম রাখার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং তাকে আটকের বিষয়টি ঘোষনা এবং অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জোর আহবান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন,গত ৮ সেপ্টেম্বর রংপুর জেলাধীন গঙ্গাছড়া উপজেলায় বিএনপি’র বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়ে ১৫০ জন নেতাকর্মীকে গুলিবিদ্ধ করে, এসময় জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নেওয়াজ জোহার বুকে এবং পায়ে গুলি করে। পুলিশ বিক্ষোভ মিছিল থেকে ৮জন বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে গঙ্গাছড়া উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মীর কাসেম মিঠুকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করে বর্বরোচিত নির্যাতন চালায়। বর্তমানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় রেখেছে। এই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উল্টো ৫০ জন বিএনপি নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১৫৫০ জনকে আসামী করে ১টি মামলা দায়ের করে। এই মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীসহ এসএসসি পরিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষকেও পুলিশ হয়রানী করছে এবং প্রতিদিনই পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সন্ত্রাসীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি ভাংচুর এবং হয়রানী করছে। এছাড়া কুমিল্লা উত্তর জেলার মুরাদনগরসহ দেশের অধিকাংশ জায়গায় পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে তল্লাশির নামে ভাংচুর চালাচ্ছে এবং পরিবারের সদস্যদের হয়রানী করছে। আমি এসব ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও আহতদের দ্রæত সুস্থতা কামনা করছি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ