নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
এমন সকাল অনেক দিন দেখেনি কলম্বো। চরম আর্থিক ও রাজনৈতিক সঙ্কটে ডুবে থাকা দেশটির প্রতিটি ভোর আসে অনিশ্চয়তার আঁধার নিয়ে। জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার নতুন অধ্যায় শুরু হয় প্রতিটি সকালে। তবে গতকাল সকালটা একটু ব্যতিক্রম। চরম অর্থনৈতিক সংকটে ডুবতে বসা দেশটিতে আশার আলো বলতে ছিল না তেমন কিছু। শ্রীলঙ্কার মানুষ নিজেদের দুঃসময়ে অবশেষে উদযাপনের সুযোগ পেলেন এশিয়া কাপে। চ্যাম্পিয়ন হয়ে তাদের সেই সুযোগ করে দেওয়া জাতীয় ক্রিকেট দল দেশে ফিরে পেল বিপুল সংবর্ধনা। কলম্বো শহরজুড়ে হলো তাদের বীরবরণ। ক্রিকেট মাঠের বীরদের বরণ করে নেওয়ার পাশাপাশি ভালো লাগার পরশে মাখামাখি হওয়ার সুযোগ আসে সাধারণ মানুষের জন্যও।
এবারের এশিয়া কাপের আয়োজক ছিল শ্রীলঙ্কাই। কিন্তু জ্বালানি সংকটে নিজ দেশে টুর্নামেন্টটি আয়োজন করতে পারেনি তারা। খেলা হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। গ্রæপ পর্বে প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে বড় হারে আসর শুরু তাদের। সেই ধাক্কার পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। আর কোন ম্যাচ হারেনি। টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে নেয় ট্রফি। দুর্দান্ত নিবেদন, সাহসী ক্রিকেট, প্রবল মনোবল দেখিয়ে মানুষের মন জিতে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল। গত রোববার ফাইনালে পাকিস্তানকে ২৩ রানে হারিয়ে ৬ষ্ঠবারের মতো এশিয়া কাপ জিতে নেয় শ্রীলঙ্কা। ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের মতো শ্রীলঙ্কাও ক্রিকেট পাগল জাতি। উৎসবের আবহেই তারা বরণ করে নেন বিজয়ী ক্রিকেটারদের।
দুবাই থেকে এশিয়া কাপ ট্রফি নিয়ে গতকাল সকালেই কলম্বো নামেন দাসুন শানাকারা। এর আগে আরও পাঁচবার এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির আছে শ্রীলঙ্কার। তবে দেশের সামগ্রিক বাস্তবতায় এই ট্রফির মাহাত্ম তাদের কাছে অন্যরকম। তাইতো সাত সকালে কলম্বোর বন্দরনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নাম লঙ্কানদের সেখানেই দেওয়া হয় প্রথম দফা সংবর্ধনা। ফুলের মালা পরিয়ে দেশটির ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ক্রিকেট বোর্ড ও স্পন্সর প্রতিষ্ঠান বরণ করে দেয় ক্রিকেটারদের।
এরপর ছাদখোলা দোতলা বাসে শহর প্রদক্ষিণের পালা। কলম্বো শহর থেকে বিমান বন্দর বেশ দ‚রে। তবে বিমান বন্দর থেকে বের হতেই মানুষের ভালোবাসার উষ্ণতা টের পেতে থাকেন ক্রিকেটাররা। শত শত মানুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানান ক্রিকেটারদের। ক্রমে শহরের দিকে এগোতেই সংখ্যাটি শত শত থেকে রূপ নেয় হাজার হাজার মানুষের জোয়ারে। ঢোল আর বাদ্য বাজিয়ে চলতে থাকে ক্রিকেটারদের বয়ে নেওয়া বাস। রাস্তার দুই পাশে হাত নাড়িয়ে, পতাকা উড়িয়ে, চিৎকার আর সেøাগানে ক্রিকেটারদের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ করেন শ্রীলঙ্কার জনতা। কলম্বো শহরের নানা প্রান্ত প্রদক্ষিণ করে ক্রিকেটারদের এই বিজয় মিছিল। এমন সাত সকালেও ভীড় জমে যায় শহরের পথে পথে। কোথাও কোথাও বাস থামিয়ে ক্রিকেটাররা সরাসরি কথা বলেন মানুষের সঙ্গে। হাত নেড়ে, উড়ন্ত চুম্বনে, ব্যাটে আর পতাকায় অটোগ্রাফ দিয়ে তারা এঁকে দেন ভালোবাসার চিহ্ন। কেউ কেউ সেলফিবন্দীও করে রাখেন ঐতিহাসিক এই মুহূর্তটিকে।
শ্রীলঙ্কা দল যেদিন এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছে, সেদিন দেশটির মেয়েদের নেটবল দলও এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে। মজার ব্যপার হচ্ছে, শোভাযাত্রায় দেখা হয়ে যায় দুই ভুবনের দুই বিজয়ী দলেরও! যা এই উদযাপনকে করেছে বর্ণিল।
স্বস্তি? না, তার চেয়ে প্রেরণা শব্দটাই বেশি মানানসই। দেশটির মানুষের জন্য মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই শিরোপা প্রেরণা ছাড়া আর কী হতে পারে! জাতীয় বীরদের বরণ করে নিতে লঙ্কানরা রাস্তার চারপাশে জড়ো হয়ে লড়াইয়ে প্রেরণাই তো গায়ে মেখেছে! এভাবেই ক্রিকেট আর জীবন মিশে যায় একসঙ্গে। ক্রিকেট মাঠের ২২ গজ হয়ে ওঠে জীবনের আঙিনাও। সব দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা, যাতনা কিছুক্ষণের জন্য এক পাশে সরিয়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত মানুষ মেতে ওঠে হাসি-আনন্দ-মজায়। বিপর্যস্ত এক জাতি লড়াইয়ের প্রেরণা পায় নতুন করে। দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে এই শিরোপা নিশ্চিতভাবেই লঙ্কানদের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতীকী-পাঠ হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।