গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
জলবায়ু ঝুঁকিগ্রস্তদের মানবাধিকার সুরক্ষায় আইনি কাঠামো প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে নাগরীক সমাজ। মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বের) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (সি.পি.আর.ডি.),এস.ডি.এস., মাসাউস. বাদাবন সংঘ- এর উদ্যোগে ‘বাংলাদেশে সফররত ইউএনএইচসিআর এর জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূতের সফর এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে নাগরিক সমাজের বক্তব্য ও গবেষণা লব্ধ ফলাফল উপস্থাপন।’ শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন, সি.পি.আর.ডি’র নির্বাহী প্রধান মো: শামসুদ্দোহা, বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, বক্তব্য রাখেন এসডিএস এর নির্বাহী পরিচালক রাবেয়া বেগম, মাসাউসের নির্বাহী পরিচালক ম্যারিনা মূর্মু, বাদাবন সংঘের নির্বাহী পরিচালক লিপি রহমান, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়কারী নীখিল চন্দ্র ভদ্র। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞ, নীতি নির্ধারক, অংশীজনেরা উপস্থিত থেকে মতামত ব্যক্ত করেন।
গবেষণা ফলাফল তুলে ধওে জনাব শামসুদ্দোহা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের স্থান, সম্প্রদায় ও ব্যক্তি পর্যায়ে ভিন্ন ও বহুমূখী বিপদাপন্নতার চিত্র অনুসন্ধানে সি.পি.আর.ডি. ও এর সহযোগী সংগঠন এস.ডি.এস. , মাসাউস ও বাদাবন সংঘ যথাক্রমে শরীয়তপুর, রাজশাহী, সাতক্ষীরার ৬০০ টি পরিবারের উপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে।
গবেষণা ফলাফলে দেখা যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত ২০ বছরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিটি পরিবার গড়ে ৪৬২৪৯১.৫৭৫ টাকা করে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে এবং প্রধানতম ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে কৃষিজমি ও বসতভিটা হারানো (মোট ক্ষয়ক্ষতির ৫০.৩%), বসতবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি (২৯.৭%), গৃহপালিত পশু-পাখির ক্ষয়ক্ষতি (৮.৪%), গৃহস্থালি-সামগ্রীর ক্ষয়ক্ষতি (৫.৮%), এবং মাছ ধরার সরঞ্জাম, গাছপালা, রান্নাঘর, শৌচাগার প্রভৃতির ক্ষয়ক্ষতি (৩.৪%)। এছাড়া অ-অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি যেমন প্রাণহানী বৃদ্ধি পেয়েছে ২.৫% পরিবারে, স্বাস্থ্য সঙ্কটে ভুগছে ১০০%, বাস্তুচ্যুতি ও স্থানান্তরণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪%, সামাজিক ও যৌন হয়রানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৩%, খাদ্য-সঙ্কটে আছে ৮৫% পরিবার, পানি-সঙ্কটে ভুগছে ৬২% পরিবার, ৩২.৫% পরিবারে শিশুরা স্কুল থেকে ঝরে পড়ছে, ১৪.৫% পরিবারে বাল্য বিবাহ হচ্ছে।
বরেন্দ্র অঞ্চলের ৯৩ শতাংশ পরিবার খাবার পানির সংকটে ভুগছেন, গত ২০ বছরে বরেন্দ্র অঞ্চলে কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পরিবারগুলো গড়ে ৩৩,৭৬৯ টাকার আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হয়েছে, এছাড়া অতিরিক্ত গরমের কারণে ৩৮.৫ শতাংশ মানুষের শ্রমঘন্টা কমে গেছে, ৪৮.৫ % কর্মজীবি বিভিন্ন মেয়াদে কর্মহীন হয়েছে, ২২.৬৮ শতাংশ মানুষ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় এবং ২৬.৮০ শতাংশ উত্তরদাতা কর্মের অনিশ্চয়তায় ভুগছেন, ৯৯.৫ শতাংশ বলেছেন তারা/তাদের পরিবারে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে রোগব্যাধি বৃদ্ধি পেয়েছে।
শরীয়তপুর অঞ্চলে গত বিশ বছরে পরিবারগুলোতে নদী ভাঙ্গনে গড়ে ২৪০০০.৮১ টাকা করে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে এবং দুর্যোগে তাদের গবাদি পশুপাখির ক্ষয়-ক্ষতি হয়ে বিগত বিশ বছরে প্রতিটি পরিবার গড়ে ২,৫৭,৩৩০ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে, ১০.৫% বলেছেন আগের তুলনায় তাদের দিন-মজুরীর (শ্রমবিক্রি) সুযোগ কমে গেছে, স্থানান্তরণের পর ৬২.৫% উত্তরদাতা পরিচয় সংকটে ভুগছেন, ৭৩% উত্তরদাতা বলেছেন তাদের উৎসব এবং মনের আনন্দ কমে গেছে, নদীভাঙ্গন এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে সৃষ্ট অভাবের ফলে ৩৫.৫% উত্তর দাতার সন্তানেরা স্কুল থেকে ঝড়ে পরেছেন, পরিবারের অর্থনীতির চাঁকা সচল রাখতে ২৬.৫% উত্তরদাতা তাদের শিশু সন্তানদের কাজে প্রেরণ করতে বাধ্য হয়েছেন, যেখানে ১৮% উত্তরদাতার সন্তান ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন।
শামসুদ্দোহা বলেন জলবায়ু পরিবর্তন ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠী খাদ্য, পানি, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা প্রাপ্তির মৌলিক অধিকার এবং সর্বোপরি মানসম্মত জীবনযাপনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। এই পরিরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদাপন্নতা অনুধাবন করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি বিবচনায় নিয়ে বাংলাদেশে সফররত টঘঐঈজ এর জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ড. ইয়ান ফ্রাই (উৎ. ওধহ ঋৎু) একটি যথাযথ প্রতিবেদন জাতিসংঘে উপস্থাপন করবেন বলে আমরা আশা করি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিগ্রস্তদের মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য একটি নতুন আইনি কাঠামোরও তিনি দাবী জানান।
শরফি জামিল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মানবাধিকার বিপর্যয় হচ্ছে এটা নিয়ে এখন আর কোন বিতর্ক নেই, আজকের গবেষণা লব্ধ ফলাফল তার আরও একটি প্রমাণ, কিন্তু মানুষের অধিকার হরণের বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা অব্যাহত রাখতে হবে এবং গবেষণা রিপোর্টগুলোকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নীতিমালায় অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। তিনি আরও বলেন বাংলাদেশের নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে বিপদাপন্ন এবং অধিকার বঞ্চিত মানুষের জন্য আরও শক্রিয় ভূমিকা না রাখলে বাংলাদেশের আগামীদিনে ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে আনবে।
নীখিল চন্দ্র বলেন, সিপিআরডিকে ধন্যবাদ এমন একটি গবেষণা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন। আমরা পত্র পত্রিকা এবং উপকূলী অঞ্চলের মানুষের মুখথেকে তাদের বঞ্চনা এবং অধিকার হরণের গল্প শুনি, কিন্তু দেশীয় এবং আর্ন্তজাতিক পর্যায় থেকে কোন উদ্যোগ দেখতে পাইনা!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।