বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
পবিত্র কোরআন অনেক বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, যা অক্ষরে অক্ষরে হয় বাস্তবায়িত হয়েছে, নয়তো ভবিষ্যতে হবে। তবে সন-তারিখসহ কোনো ভবিষ্যদ্বাণী কোরআনে করা হয়নি। এসবের ইঙ্গিত অনেকটাই রূপক। কিন্তু এর বাস্তবতা বাস্তবের চেয়েও সত্য। ঠিক এমনই মহানবী (সা.)-এর হাদিসে প্রচুর ভবিষ্যদ্বাণী আছে। যেগুলো সুনির্দিষ্ট, কিছু আছে ইশারা আর অনেকগুলো প্রকৃত অর্থেই উন্মুক্ত।
যেখানে স্থান, সময়, সংখ্যা ইত্যাদি আছে, সেখানে তো আছেই। যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বাস্তবায়িত হয়ে গেছে, সেসব এখন আর অনিষ্পন্ন ভবিষ্যদ্বাণীরূপে নেই। অবশ্য বাস্তবায়িত হয়েছে কি হয়নি তা নিয়ে প্রকৃত মুহাদ্দিস, ফকীহ, মুআররিখদের মধ্যে যদি ভিন্নমত থেকে থাকে তাহলে এটি উম্মাহর আমলে নেয়ার মতো বিষয়। যেমন : গাজওয়ায়ে হিন্দ।
ইদানীং ভিন্নমত নেই এমন কিছু বিষয়েও কোনো কোনো ইসলামিক স্কলারখ্যাত ব্যক্তি মতামত দিচ্ছেন, যা উম্মাহকে দ্বিধায় ফেলছে। আলেম নন কিংবা আনুষ্ঠানিক ইসলামী শিক্ষা নেই, এমন আধুনিক শিক্ষিত লোকজন ভবিষ্যদ্বাণী-সংবলিত হাদিস বা কিতাবুল ফিতান অংশ পড়ে এমন সব ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, যা ইসলামী ঐতিহ্যের পরিপন্থী। অনেক মানুষ প্রকৃত আলেমদের কাছে না গিয়ে ভার্চুয়াল জগতে এসব কথিত ইসলামিক স্কলারের কথা হাদিসের ব্যাখ্যা মনে করে আগ্রহভরে শুনছে। শুধু যে বিশ্বাস করছে তাই নয়; বরং এসব ব্যাখ্যাকে নিজেদের আকীদা-বিশ্বাসের স্থানে জায়গা করে দিচ্ছেন।
কেউ বলছেন, নবী করীম (সা.)-এর বর্ণিত কুসতুনতুনিয়া নাকি এখনো বিজিত হয়নি। আগামী কিছুদিনের মধ্যে কুসতুনতুনিয়া বিজিত হবে। তুরস্ক ধ্বংস হয়ে যাবে। এবং পশ্চিমা জগৎ বিশেষত ইউরোপ এবং আশপাশ এলাকায় পারমাণবিক যুদ্ধ হবে। আর এর কথাই মালহামা শব্দে হাদিস শরীফে এসেছে। এ ধরনের ইসলামিক স্কলাররা ফুরাতের ভেতর থেকে সোনার খনি ওঠা এবং এ নিয়ে যুদ্ধে প্রতি একশ’জনের নিরানব্বইজন নিহত হওয়ার হাদিস নিজের মনের মতো করে ব্যাখ্যা করছেন।
কখনো বলছেন, মাটি ফুড়ে সোনা উঠবে। কখনো বলছেন, ইরাকের তেলই সেই সোনা। কখনো বলছেন, আণবিক যুদ্ধ সামনে হবে। তখন একশ’র মধ্যে নিরানব্বই জন মারা যাবে। মালহামা বলতে তারা পারমাণবিক যুদ্ধকেই বুঝে নিয়েছেন। আর সে সময় গ্রামে চলে যাওয়া, খাদ্যশস্য মজুদ রাখা, পানির সংস্থান রাখা ইত্যাদি হাদিসকে গোঁজামিল দিয়ে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।
এসব দেড় হাজার বছর ধরে উলামায়ে কেরাম পড়ছেন, পড়াচ্ছেন। গ্রহণযোগ্য ও যথেষ্ট ব্যাখ্যাও তাঁরা দিচ্ছেন। কিন্তু নিজে একপেশে ও সীমিত জ্ঞানের অধিকারী, বিজ্ঞানমনস্ক এবং অস্থিরমতি হওয়ায় যুগে যুগে ব্যর্থ ব্যাখ্যাতাদের মতো আধুনিক সময়েও এসব কথিত ইসলামিক স্কলার, যা মনে আসে তাই বলে চলেছেন। দাজ্জাল নিয়ে তাদের মনগড়া বিশ্লেষণ, ইমাম মাহদী নিয়ে ধারণা-কল্পনা ও ঈসা আ. সম্পর্কে নানা রকম ব্যাখ্যা সব সময়ের মতোই স্থূল এবং ভ্রান্ত বলে সাব্যস্ত হচ্ছে।
এসব ব্যাপারে প্রকৃত আলেম, মুহাদ্দিস, ফকীহ, মুআররিখ ও মুফাককিরগণের আলোচনা সামনে আসা খুবই প্রয়োজন। মানুষ নিজেদের চিন্তার কাছাকাছি সহজ ও সস্তা চিন্তাকে সহজে গ্রহণ করে। তবে ইসলামী বিষয় বা কোরআন-সুন্নাহর গভীর, ব্যাপক, অর্থবহ বাণীকে, তা প্রকৃত অর্থে বা রূপক অর্থে যেটাই হোক, পূর্ববর্তী ব্যাখ্যাকারগণের নির্দেশনার আলোকে বোঝাই একমাত্র নিরাপদ ও সঠিক পন্থা, যা হক্কানী আলেমগণের কাছেই কেবল পাওয়া যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।