পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
নাছিম উল আলম : দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গত অর্থ বছরে সর্বকালের সর্বোচ্চ প্রায় ২১১কোটি টাকা আয়কর আদায় সম্ভব হয়েছে। সাম্প্রতিক কর মেলা ও কর সপ্তাহেও বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৯৪ হাজার করদাতা সেবা গ্রহণ করেছেন। এসব মেলায় দাখিলকৃত সাড়ে ৬ হাজার রিটার্ন থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকার কর আদায় সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রাণবন্ত এসব কর মেলাগুলোতে ছিল অনেকটাই উৎসবের আবহ। সম্পূর্ণ নির্ঝঞ্ঝাট ও নির্বিবাদে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সুযোগ লাভ করে যথেষ্ঠ খুশি দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষসহ কর সেবা গ্রহণকারীগণ। গত কয়েক বছর ধরেই দক্ষিণাঞ্চলে রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ও কর আদায়ে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ অত্যন্ত সন্তোষজনক।
২০০১Ñ০২অর্থ বছরে মাত্র ১৪.৩১ কোটি টাকা আয়কর আদায় নিয়ে বরিশালে কর কমিশনারেট যাত্রা শুরু করলেও বিগত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ অঞ্চলে কর আদায়ের পরিমাণ এযাবতকালের সর্বোচ্চ ২১০ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। চলতি অর্থবছরে দক্ষিণাঞ্চলে আয়কর আদায়ের পরিমাণ আড়াইশ কোটি টাকা অতিক্রম করবে বলে অনেকটাই নিশ্চিত কর বিভাগ। বিগত ১৬ বছরে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় আয়কর আদায়ে প্রবৃদ্ধির হার হাজার ভাগেরও বেশী। তবে এখনো এঅঞ্চলের শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ অনেক উচ্চ বিত্তের আয়কর ঢাকায় দাখিল হওয়ায় এ অঞ্চলে কর আদায়ের গতি এখনো কিছুটা সøথ। বরিশালের কর কমিশনারেটের কমিশনার মোঃ জাহিদ হাসান জানান, এবারের কর মেলা ও কর সপ্তাহে কর বিভাগের প্রতিটি কর্মী অত্যন্ত আন্তরিকতা ও সেবার মনোভাব নিয়ে করদাতাদের যেকোন সমস্যা সমাধোনের চেষ্টা করেছেন। করদাতাগণও অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দে এসব মেলায় সেবা গ্রহণ করেছেন।
কর বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ২০০১Ñ০২অর্থ বছরে মাত্র ১৪.৩১ কোটি টাকা আয়কর আদায়ের পরে ২০০২Ñ০৩ অর্থ বছরে তা ২২.১২ কোটি টাকা, ২০০৩Ñ০৪ সালে ২৭.৬৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪Ñ০৫ সালে ৩৮.২৩ কোটি, ২০০৫-০৬ সালে ৪৩.২৯ কোটি, ২০০৬-০৭ অর্থ বছরে ৪৪ কোটি, ২০০৭-০৮ সালে ৬০.১১ কোটি, ২০০৮Ñ০৯ সালে ৬২.৩৯ কোটি, ২০০৯Ñ১০ সালে ৭৩.৭৫ কোটি টাকায় কর আদায় সম্ভব হয়। এরপরে ২০১০Ñ১১ অর্থ বছরে ৮৫.১১ কোটি, ২০১১-১২ সালে বরিশাল কর অঞ্চলে ৯৫.২৭ কোটি এবং ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ১১১ কোটি ৮ লাখ টাকার আয়কর আদায় হয়। যা এর আগের বছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকা বেশী ছিল। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে বরিশাল অঞ্চলে কর আদায়ের পরিমাণ ছিল ১৩৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আর ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে এর আগের বছরের চেয়ে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল আরো প্রায় ৬৭ কোটি টাকা বেশী, ২০৪ কোটি ১০ লাখ টাকা । আর গত অর্থ বছরে তা ২১০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা অতিক্রম করেছে।
এবারের কর মেলা ও কর সপ্তাহসহ গত ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ৩৫ হাজার ১২১ জন রিটার্ন দাখিল করেছেন। এসব রিটার্ন দাখিলকারীদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা কর আদায় সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০০২-এর শেষ দিকে বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার মাত্র ১৪ হাজার করদাতাকে নিয়ে বরিশাল কর অঞ্চল গঠিত হবার পরে এ অঞ্চলে এখন সক্রিয় কর হিসেব দাখিলকারীর সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার।
তবে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার চেম্বার নেতৃবৃন্দ দেশের কর আদায়কে আরো গতিশীল করার পাশাপাশি ‘জনবান্ধব কর প্রশাসন’ গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন। এলক্ষে আরো গণমুখি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি চেম্বার নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে আয়কর প্রদানকারী ও কর আদায়ের পরিমাণ ক্রমশ বাড়লেও এঅঞ্চলের উন্নয়নসহ নতুন বিনেয়োগ কাঙ্খিত মাত্রায় নয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চেম্বার নেতৃবৃন্দ। বরিশালে কৃষি ও মৎস ভিত্তিক রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠারও দাবি জানিয়েছেন ঐসব নেতৃবৃন্দ।
এবার বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি স্থানে আয়কর মেলার আয়োজন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এসব মেলায় প্রায় ৯৪ হাজার করদাতা সেবা গ্রহণ করেছেন। এসময় সাড়ে ৬ হাজারেরও বেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রিটার্ন দাখিল করেছেন। এসব মেলা থেকেই আদায়কৃত করের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকার মত। হাজার খানেক মানুষ নতুন টিঅইএন’ও গ্রহণ করেন মেলাগুলো থেকে।
তবে দক্ষিণাঞ্চলে আয়কর বিভাগের এসব সাফল্যের পরেও এখনো বরিশাল কর কমিশনারেটের নিজস্ব ভবনটি নির্মিত হয়নি। কর বিভাগের বেশিরভাগ কার্যক্রমই চলছে ভাড়াবাড়িতে। নগরীর ক্লাব রোডে নিজস্ব জমি থাকলেও কর ভবন নির্মাণের প্রস্তাবটি গণপূর্ত অধিদফতর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে গত বছর পাঁচেক ধরে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে গণপূর্ত বিভাগ এ লক্ষ্যে প্রায় ৫৫ কোটি টাকার একটি প্রাক্কলন দাখিল করলেও তা রাজস্ব বোর্ড থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আটকে গেছে বলে জানা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।