বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আমরা জুয়া, মদ, গানবাদ্যের ক্ষেত্রে অন্যদেরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার উন্মাদ প্রতিযোগিতায় নেমেছি। নারীদের উলঙ্গ করেছি। চারিত্রিক অধঃপতনের মেলা বসিয়েছি। গায়ক দলের গলায় মালা দিয়ে তাদের স্বাগত জানিয়েছি। নগ্নতা ও অশ্লীলতার প্রসারে লক্ষ-কোটি টাকা খরচ করেছি। প্রতিটি ঘর থেকে এখন নাচ-গানের সুর ভেসে আসে। বাজার-ঘাটে উলঙ্গ-অর্ধউলঙ্গ নারীদের অঙ্গপ্রদর্শনের মেলা বসে। কুফর ও নাস্তিকতার ধারকরা বুক ফুলিয়ে চলে। আমরা সবকিছুই করেছি। সত্যের গলাটিপে ধরে মিথ্যার জয়গান গেয়েছি। ঘুষের বাজারকে গরম করেছি।
ন্যায়কে অন্যায় আর অন্যায়কে ন্যায় বানানোর জন্য সব ধরনের কূটচাল চেলেছি। জালেমদের কুর্ণিশ করে গরিব, মজদুর ও মজলুমের সম্পদ ছিনিয়ে তাদের পায়ের নিচে পিষে ফেলেছি। মসজিদ বিরান করে সিনেমা হল আবাদ করেছি। আল্লাহর ওয়াস্তে বলুন, আল্লাহর শাস্তিকে ত্বরান্বিতকারী কোন্ পাপকর্মটি আমরা করিনি? এরপরও কি আমরা পাপাচারে লিপ্ত এ অন্ধকার জীবনে খোদায়ী রহমতের শুভ্র শিশির নেমে আসার দিবাস্বপ্ন দেখি?
আল্লাহতায়ালার নিয়মনীতি অলঙ্ঘণীয়। যে বিষ খাবে সে মারা যাবে। যে আগুনে ঝাঁপ দেবে সে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাবে। আর যে জাতি খোদার অবাধ্য হয়ে বিদ্রোহের পথে চলবে তার উপর খোদায়ী গজব নেমে আসবে।
আজ কৃতকর্মের ফল আমরা ভোগ করছি। শান্তি যেন আজ সোনার হরিণ। কৃষক, শ্রমজীবী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, দোকানদার কারো মনে শান্তি নেই। সুখের স্পর্শ নেই। হৃদয়ের সবুজ বাগানে যেন চৈত্রের খরা। সবকিছু থেকে বরকত উঠে গেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সাধ ও সাধ্যের মাঝে কোনো সামঞ্জস্য নেই। দুর্ঘটনার যেন প্লাবন নেমেছে। হাসপাতালে ও আদালতে গিয়ে একটু দেখুন, মনে হবে পুরো শহরবাসী এখানে এসে ভিড় জমিয়েছে। চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, অপহরণ এবং আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির কারণে জান-মাল, ইজ্জত-আব্রু কোনো কিছুরই আজ নিরাপত্তা নেই।
কিন্তু আফসোস! আমরা এখনো প্রবৃত্তির পূজায় আকণ্ঠ ডুবে আছি। কোনো ঘটনার প্রবল ঝাঁকুনিও মুসলমানদের গাফলতের ঘুম ভাঙাতে পারছে না। উপদেশ গ্রহণ করার জন্য কোনোভাবেই চোখ মেলে তাকাচ্ছে না। এ অবস্থা খুবই হৃদয়বিদারক, হতাশাব্যঞ্জক। আল্লাহতায়ালা গোটা জাতির ওপর রহম করুন।
সমাজের ছোট-বড় সবার কাছে হাত জোড় করে মিনতি করছি, আল্লাহর ওয়াস্তে আল্লাহর আজাবকে আর টেনে আনবেন না। শরয়ী পর্দা করা ফরয। বেপর্দা, অর্ধনগ্ন হয়ে রাস্তা-ঘাটে বের হওয়া ইসলামী শরীয়ত ও ইনসানী গায়রত উভয় দিক থেকেই কবীরা গোনাহ। এই ধারা বন্ধ করুন। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা সকল অশ্লীলতার মূল। আর গান-বাদ্য এ অশ্লীলতার ইন্ধন! আল্লাহর ওয়াস্তে এ থেকে বিরত হোন।
রেডিও-টেলিভিশন ইত্যাদির লা‘নত গোটা সমাজের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে বের করুন। আযাবে এলাহীর প্রবল স্রোতে আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। তা থেকে বাঁচার একটিই মাত্র উপায়। তা হচ্ছে নিজের জীবনে পরিবর্তন আনুন। আল্লাহর দরবারে সমর্পিত হোন। আহকামে এলাহীর পাবন্দি করুন। অশ্লীলতার আড্ডা বন্ধ করে আল্লাহর ঘরকে আবাদ করুন। ইয়া আল্লাহ! এই দেশ, এই জাতির উপর দয়া করুন। ইয়া আল্লাহ! আমাদের সকল ভুলভ্রান্তি ও গোনাহ ক্ষমা করে দিন। আমাদের আপনার আজাব ও গজব থেকে হেফাজত করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।