Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাডুবিতে তোলপাড়

প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬

শামসুল হক শারেক ও মুহম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর গণহত্যা ও গণধর্ষণ  থেকে  রেহাই  পেতে পলায়নরত রোহিঙ্গাবাহী নৌকায় গুলি চালিয়েছে দেশটির সীমান্তরক্ষী পুলিশ (বিজিপি)। গুলিতে তিনটি  নৌকাডুবির ঘটনায় দুই শিশু ও এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া  অর্ধশত  নিখোঁজ রয়েছেন।  রোববার দিনগত রাতে রাখাইনের মংডুর উত্তরাঞ্চলে নাফ নদীতে এই ঘটনা ঘটে।  সোমবার মিয়ানমার সময় সকাল ৭টার দিকে নাফ নদীর তীরে দুটি শিশু এবং একজন নারীর লাশ পড়েছিল। এই ঘটনায় গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সম্প্রাদায়ে ব্যাপক আলোচনা  সমালোচনা ও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা নির্যাতন কিছুতেই থামছে না বলে বলে খবর পাওয়া গেছে। আর্ন্তজাতিক বিশ্বের চাপাচাপিতে জাতিসঙ্ঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান অরাকান সফর করেছেন। কফি আনান আরাকানে মিয়ানমার সেনা-পুলিশের গণহত্যা ও পুড়ামাটি নীতি স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করে ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন। তার সফরকালীন সময়ে সেনা-পুলিশ রাখাইন মগদস্যুরা কিছুটা নমনীয় হলেও কফি অনান আরাকান থেকে ফিরে যাওয়ার পর নির্যাতনের মাত্রা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে খবর পওয়া গেছে।
সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কফি আনানের সাথে যেসব রোহিঙ্গা মুসলমানরা কথা বলেছিলেন তাদের অনেককে সেনা-পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। অনেককে গুম করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। উত্তর আরাকান থেকে সেনা-পুলিশের ছাউনী সরিয়ে নিয়ে দক্ষিণ আরাকানের গ্রাম গুলোতে নতুন করে সেনা ছাউনী স্থাপন করা হয়েছে। গ্রামের চার পাশ থেকে ঘেরাও করে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালানোর সময় গুলি করে জবাই করে অধিবাসীদের হত্যা করে। যুবতীদের ধরে নিয়ে গণহারে ধর্ষণ করে থাকে।
এই কনকনে শীতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষের মানবেতর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। জানা গেছে ইউএনএইচসিআর জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সহযোগিতা চেয়ে সরকারের অনুমতি কামনা করলেও এ পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি।
বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের জাতিসত্তা ধংস করতে নগ্ন খেলা শুরু করেছে। সেখানে গণহত্যা ও জ্বালাও পুড়াও করে মিয়ানমার রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশে ঠেলে দিয়ে বাংলাদেশের বোঝা বাড়াচ্ছে। আর বাংলাদেশ সরকার তাদের আশ্রয় না দিয়ে আবারো মিয়ারে ফেরত পাঠিয়ে সেই খেলাতে যেন অংশ নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ‘আজিজিয়া সোলতানিয়া ফাউন্ডেশনের’ নেতৃবৃন্দ।
গতকাল চট্টগ্রামস্থ ‘আজিজিয়া সোলতানিয়া ফাউন্ডেশনের’ প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম শামসুল আলম চৌধুরী (নানুপুরী), মহাসচিব প্রিন্সিপ্যাল বেলায়ত হোসেন ফিরোজী ও যুগ্ম-মহাচিব মাহমুদুল হক আনসারী গত দু’দিন ধরে উখিয়া-টেকনাফের সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করে কক্সবাজার ফিরে সাংবাদিকদের একথা বলেন। মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েও মানবেতর জীবন যাপন করছে বলে দাবি করে তাদেরকে জরুরি ভিত্তিতে আশ্রয় দিয়ে মানবিক সহযোগিতা দেয়ারও দাবি জানান।   
নেতৃবৃন্দ মিয়ানমারের গণহত্যা ও পুড়ামাটি নীতির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে নির্যাতিত নিরাশ্রয় রোহিঙ্গা মুসলিম নারী শিশু পুরুষের আশ্রয় দিয়ে তাদেরকে মানবিক সাহায্য দেয়ার জন্য জাতিসঙ্ঘ, ওআইসিসহ বিশ্ব সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানান।
‘আজিজিয়া সোলতানিয়া ফাউন্ডেশনের’ প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম শামসুল আলম চৌধুরী (নানুপুরী) বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তানী স্বৈরাশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম। এখন কথা বলছি মিয়ানমারের মানবতা বিরোধী গণহত্যার বিরুদ্ধে। তিনি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতনের ব্যাপারে আর্ন্তজাতিক বিশ্বকে সোচ্চার করার জন্য এবং নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে আশ্রয় দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আগামী ৯ ডিসেম্বর (শুক্রবার) বাদ জুমা, চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ চত্বর থেকে আরাকানে রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রতিবাদ, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়া এবং মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মহাসমাবেশ ও পীর সাহেব চরমোনাইয়ের নেতৃত্বে আগামী ১৮ ডিসেম্বর লংমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করে।
ইতোপূর্বে হেফাজতে ইসলাম কক্সবাজারে লংমার্চ ও সমাবেশের ঘোষণা দিলেও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অনুমতি না পাওয়ায় তা প্রত্যাহার করা হয়।
রোহিঙ্গা বোঝাই ৪টি নৌকা ফেরত
টেকনাফ উপজেলার তিনটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে রোহিঙ্গা নাগরিক বোঝাই চারটি নৌকা ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। সোমবার ভোরে টেকনাফের নাফ নদীর তিনটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এসব নৌকায় করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল। বিজিবি টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানান, ভোরে নাফ নদীর জাদিমুরা সীমান্তের তিনটি পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে নৌসীমার শূন্যরেখা থেকে রোহিঙ্গা বোঝাই এ চারটি নৌকা ফেরত পাঠানো হয়। প্রতি নৌকায় ১০ থেকে ১২ জন করে রোহিঙ্গা নাগরিক ছিল বলে জানান বিজিবির এ কর্মকর্তা।



 

Show all comments
  • Salim ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১:৪৬ এএম says : 0
    ar pore o ki sobi chup kore thakbe ???????????
    Total Reply(0) Reply
  • Nipa ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১০:৫৮ এএম says : 0
    আল্লাহ তুমি দয়ালু।
    Total Reply(0) Reply
  • Zahid Anwar ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১০:৫৯ এএম says : 0
    আল্লাহ তুমি সব দেখতেছ। তুমি বিচার কর।
    Total Reply(0) Reply
  • Joynal Abedin ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১১:১১ এএম says : 0
    মুসলিম আজ কত টা অসহায় !
    Total Reply(0) Reply
  • Minar alam ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১১:১৭ এএম says : 0
    He Allah Rohinga Muslimdeke Hefazot korun
    Total Reply(0) Reply
  • ফাতেমা ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:৪৩ পিএম says : 2
    এই কনকনে শীতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষের মানবেতর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আসুন তাদের পাশে দাঁড়াই।
    Total Reply(0) Reply
  • SABBIR ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:৫৯ পিএম says : 0
    এরা হাতি নয়, মানুষ। এদেরকে তো আর বঙ্গবাহাদুর নামে ডাকা যাবেনা। এদের লাইভ ভিডিও টেলিকাস্ট করার মত মানবতা হাতিবতার মতো কোন চ্যানেলের এই দেশে অন্তত নেই। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশদের গুলি খেয়ে পানিতে ভেসে আসা রোহিঙ্গা শিশুটির সম্পর্কে আমাদের মিডিয়ায় কোন নামগন্ধ পর্যন্ত নাইi
    Total Reply(0) Reply
  • Syed Mahbub ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১:৫৮ পিএম says : 0
    Of course we do not expect any sympathy from other but how about Muslim world ?
    Total Reply(0) Reply
  • Anwar ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৪:৪৪ পিএম says : 0
    এক আয়লান বিশ্ব বিবেককে এতোটাই নাড়া দিয়েছিল যে ইউরোপ তার সীমান্ত খুলে দিতে বাধ্য হয়েছিল। তাহলে রোহিঙ্গাদের বেলায় বিশ্ব বিবেক নীরব কেন?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ