Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মিয়ানমারে জাতিগত নিধন বন্ধে জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্ব অবরোধ এবং সামরিক হস্তক্ষেপ করুন-বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ

| প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর মিয়ানমার জান্তা ও সন্ত্রাসী বৌদ্ধদের মুসলিম গণহত্যা বর্বর অত্যাচার, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া ও ধর্ষণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন সংগঠন গতকাল পৃথক পৃথক সভা সমাবেশ ও মানব বন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। কর্মসূচিতে বক্তাগণ মিয়ানমারে অব্যাহত জাতিগত নিধন বন্ধ করতে জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্বের শান্তিকামী দেশসমূহকে নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠিন অবরোধ আরোপ অথবা সামরিক হস্তক্ষেপ করার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সরকার প্রধানের নিকট আহ্বান জানান।
রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বন্ধের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন আজ সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে বাংলাদেশস্থ মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবে। কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন দলের আমির পীর সাহেব চরমোনাই।
পীর সাহেব চরমোনাই
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নগ্ন ও সর্বাত্মক হামলা কোনো বিবেকবান মানুষ মানতে পারে না। তিনি বলেন, পৃথিবীর তাবৎ মানবতাবাদী মানুষের মাতমের দীর্ঘশ্বাস, আত্মার আহাজারি, সমর্থনপুষ্ট নৈতিকসমর্থনের কেন্দ্রবিন্দু রোহিঙ্গার জনগণ। রোহিঙ্গাদের এই আহাজারি বিশ্বের প্রতিটি মুক্তিকামী মানুষের। সর্বোপরি এ আর্তনাদ  শান্তিকামী মানুষের আর্তনাদ। রোহিঙ্গারা ইতিহাসের এক জ্বলন্ত ট্রাজেডি। নাগরিকত্বের অধিকার আদায়ের লাগাতার ইতিহাস সমৃদ্ধ এক নিগৃহীত ও নিপীড়িত জাতি রোহিঙ্গা। পীর সাহেব বলেন রোহিঙ্গাদের নিয়ে কেবল উদ্বেগ যথেষ্ট নয় এ জনগোষ্ঠি রক্ষায় বিশ্ব নেতৃত্বকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
গতকাল বিকেলে পুরানা পল্টনস্থ আইএবি মিলনায়তনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর এক জরুরি সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ-এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম, যুগ্ম মহাসচিব-অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আবদুল কাদের ও আলহাজ আমিনুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম আতিকুর রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম।
পীর সাহেব চরমোনাই ৯ ডিসেম্বর জেলায় জেলায় বিক্ষোভ ১৬ ডিসেম্বর দেশব্যাপী দোয়া ও কুনুতে নাজেলা ১৮ ডিসেম্বর মিয়ানমার অভিমুখে লংমার্চ সফলে দলমত নির্বিশেষে সকল ধর্মপ্রাণ মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
১৭০ কিলোমিটারব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত
মিয়ানমারের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর বর্বর অত্যাচার, বসতভিটায় অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও  হত্যাযজ্ঞ বন্ধ এবং হত্যাযজ্ঞে জড়িতের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের দাবিতে কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড গওহরডাঙ্গা, গোপালগঞ্জের উদ্যোগে ১৭০ কিলোমিটারব্যাপী মানববন্ধন করেছে।
গতকাল সোমবার সকাল ১১টা-১২টা পর্যন্ত টুঙ্গিপাড়া-গোপালগঞ্জ, কাশিয়ানী-মুকসুদপুর, ভাটিয়াপাড়া-গোপালগঞ্জ, কোটালিপাড়া-গোপালগঞ্জ, মোল্লারহাট-গোপালগঞ্জ, নড়াইল-কালিয়া-গোপালগঞ্জ রোডে এ মানববন্ধন করা হয়। এসব সড়কের ব্যাপ্তি ১৭০ কিলোমিটার। পুরো এ এলাকা জুড়ে বিভিন্ন মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক, মসজিদের ইমাম ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মানবন্ধনের সময় ব্যানার-ফেস্টুন হাতে দাঁড়ান।
মানববন্ধনে বক্তাগণ : বাংলাদেশেকে মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠাকল্পে জাতিসংঘকে শান্তি রক্ষীবাহিনী প্রেরণে চাপ প্রয়োগ এবং মিয়ানমারের মুসলমানদের শান্তিতে বসবাস নিশ্চিত করতে জোরদার কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানান এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের সাহায্যে দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহবান জানানোর পাশাপাশি সরকারের প্রতি ত্রাণ তৎপরতার শুরুর অনুরোধ করেন।
মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- গওহরডাঙ্গা মাদরাসার শাইখুল হাদিস আল্লামা আবদুর রউফ, বেফাকের মহাসচিব মাওলানা শামছুল হক, মাওলানা নুরুল হক, মাওলামা কবিরুল ইসলাম, মুফতি নুরুল ইসলাম, মাওলানা হাফিজুর রহমান, মুফতি শোয়াইব ইবরাহিম, মাওলানা আবুল কালাম, মাওলানা ঝিনাত আলী, মুফতি হোসাইন আহমাদ, মাওলানা হারুনুর রশীদ ও মুফতি মাকসুদুল হক প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, মায়ানমারের সেনাবাহিনী সেখানের মুসলমানদের ঘর-বাড়িয়ে পুড়িয়ে দিয়ে, পুরুষদের হত্যা, নারী ধর্ষণ ও শিশু হত্যা অব্যাহত রেখে মুসলিম নির্মূল করতে চাচ্ছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম নেতৃবৃন্দকে মায়ানমার সরকারের ওপর অবরোধ আরোপ ও কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে এবং প্রতিটি মুসলমানকে মায়ানমারের পণ্য বর্জন করতে হবে। অন্যথায় মুসলমান ভাইদের রক্ত ও জানের সাথে গাদ্দারি হবে। তিনি প্রতিটি মুসলমানকে সামর্থ অনুযায়ি তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান। তিনি মায়ানমারের সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বেঁচে আসা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মুসলমানদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে তাদেরকে মিয়ানমারে নিরাপদে নাগরিক হিসেবে বসবাস নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কুটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানান।
গতকাল সকালে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস শরীয়তপুর জেলার বর্ধিত নির্বাহী বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা সভাপতি মাওলানা হিফজুর রহমানের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন মাওলানা সাব্বির আহমদ, মাওলনা ফারুকুল ইসলাম, মাওলানা খন্দকার শহীদুল্লাহ, মুফতি কবির হোসাইন, মাওলানা ইবরাহিম খলীল, প্রমুখ।
ইসলামী ঐক্যজোট
ইসলামী ঐক্যজোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, মুসলমানদের নিকট প্রশ্নে-আর কত রোহিঙ্গা আহত, নিহত, নির্যাতিত, ধর্ষিত ও নির্বাসিত হলে মুসলিম¦ বিশ্ববিবেক ও বিশ্ব মানবতা জেগে উঠবে। ইসলামী স্বেচ্ছাসেবক সমাজ আয়োজিত “বিধ্বস্ত রোহিঙ্গা--নিস্তদ্ধ বিশ্ব” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তাগণ এসব কথা বলেন। আল্লামা আতহার আলী (রহ.) মিলনায়তনে  স্বেচ্ছাসেবক সমাজের সভাপতি মাও. কামরুজ্জামান রুকনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান, নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা আব্দুর রকিব এ্যাডভোকেট। বক্তব্য রাখেন ঐক্যজোটের মহাসচিব অধ্যাপক মাওঃ আব্দুল করিম খান, যুগ্ম মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাও. মুঃ শওকত আমীন পীর সাহেব বি-বাড়ীয়া ও মাও. মোসাব্বির রহমান মোল্লা, হাফেজ মাও. ইসমাইল ভুইয়া, মোঃ গোলাম ফাত্তাহ প্রমুখ।
মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কাউন্সিল
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা এবং নারীদেরকে পালাক্রমে ধর্ষণের ভয়াবহ পরিস্থিতির তীব্র নিন্দাও প্রতিবাদ জানিয়েছে মিয়ানমারের এ হত্যাকা-ের ঘটনায় মিয়ানমারের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে মালয়েশিয়াসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ অথবা সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কাউন্সিল চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম কবির।
তিনি রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার রক্ষায় আগামীকাল ৬ ডিসেম্বর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির পীর সাহেব চরমোনাই ঘোষিত মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি সফলে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান।
কর্মসূচি
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে মিয়ানমারে নির্বিচারে মুসলিম হত্যা, নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ ৬ ডিসেম্বর ২০১৬ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ঢাকাস্থ মিয়ানমার দূতাবাস অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান পূর্ব বিশাল জমায়েত রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে। জমায়েতে সভাপতিত্ব করবেন এবং বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিবেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সংগ্রামী আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই। জমায়েতে ওলামা-মাশায়েখ, বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অংশ নিবেন এবং বক্তব্য রাখবেন।
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, মিয়ানমারে আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশু গণহত্যার প্রতিবাদে  সুনামগঞ্জ  জেলা আইনজীবী সমিতি মানববন্ধন করেছে।
গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় কোর্ট চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শেরেনূর আলীর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন আইনজীবীর সমিতির সভাপতি এডভোকেট আব্দুল মজিদ, সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট আপ্তাব উদ্দিন প্রমুখ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র এডভোকেট ফজলুল হক আসপিয়া, লেখক ও কলামিস্ট এডভোকেট হোসেন তওফিক চৌধুরী, এডভোকেট শফিকুল ইসলাম, রবিউল লেইস রোকেশ, এডভোকেট সৈয়দ শায়েখ আহমদ, এডভোকেট মো: শামসুদ্দিন, আবুল মাজাদ চৌধুরী, এডভোকেট চান মিয়াসহ অনেক সিনিয়র ও জুনিয়র আইনজীবীবৃন্দ।



 

Show all comments
  • আবির ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১:৫২ এএম says : 0
    তাদেরকে বলে কোন লাভ নাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ