Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতীয় বাহিনীর নৃশংসতার কথা তুলে ধরতেন কাশ্মীরের সাংবাদিক শায়খ তাজাম্মুল-উল-ইসলাম

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১০:৩৮ পিএম

২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কাশ্মীরের একজন সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন শায়খ তাজাম্মুল-উল-ইসলামের ১ম মৃত্যুবার্ষিকী। চলমান কাশ্মীর স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান মস্তিষ্ক, প্রখ্যাত সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী এবং কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিসের নির্বাহী পরিচালক শেখ তাজাম্মুল-উল-ইসলাম এক মাসেরও বেশি সময় ধরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার পর গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন। তার বক্তৃতায় তিনি কাশ্মীর বিরোধের বিভিন্ন দিক এবং ভারত কতৃক অবৈধভাবে দখলকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের উপর ভারতীয় নৃশংসতার কথা তুলে ধরতেন।–কেএমএস নিউজ, ডেইলি কাশ্মির পোস্ট

১৯৫৪ সালে শ্রীনগরে জন্মগ্রহণ করেন শেখ তাজাম্মুল-উল-ইসলাম। তিনি যথাক্রমে ১৯৭৫ এবং ১৯৮০ সালে শ্রীনগরে অবস্থিত (ভারতের অবৈধভাবে দখলকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী) কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং এমএ উর্দু সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন একজন বিপ্লবী ছাত্র নেতা, হিসেবে তিনি ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীরে ইসলামী জমিয়ত-ই-তালাবার নাজিম-ই-আলা (সভাপতি) ছিলেন। অধিকৃত অঞ্চলে তার সাংবাদিকতা জীবনে, তিনি অন্যতম প্রধান সম্পাদক হিসাবে কাজ করেছিলেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দৈনিক আজানসহ বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক পত্রিকার সম্পাদক এবং কাশ্মীর আন্দোলনে প্রচুর অবদান রেখেছিলেন। তিনি ১৯৭৫-১৯৮৪ সাল পর্যন্ত শ্রীনগরে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।

তিনি তার কয়েক দশকের কর্মজীবনে কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের একজন সত্যিকারের উকিল ছিলেন। একজন জন্মগত স্বাধীনতা সংগ্রামী, শেখ তাজাম্মুল-উল-ইসলাম সক্রিয়ভাবে এবং কার্যত জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতের অবৈধ দখলের বিরোধিতা করেছিলেন। তাকে ভারতীয় রক্তচক্ষুর সম্মুখীন হতে হয়েছিল এবং জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় অবৈধ দখলকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত, তার স্বাধীনতার স্বপক্ষে এবং ভারত বিরোধী অবস্থান এবং কার্যকলাপের কারণে ভারতীয় বাহিনী তাকে নির্যাতন করলে তিনি পাকিস্তানে চলে যেতে বাধ্য হন।

১৯৭১ সালের পরে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি বিদ্বেষপূর্ণ প্রচার শুরু করেছিল এবং দাবি করেছিল যে, দেশটি কাশ্মীরিদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন করতে সক্ষম নয়। এই ঘটনাটি কাশ্মীরি মুসলমানদের মধ্যে ধাক্কা দিয়েছিল এবং তারা মরিয়া বোধ করেছিল এবং পরে, ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা-আব্দুল্লাহ চুক্তির দীর্ঘশ্বাস এই হতাশাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এই সংকটময় সময়ে, কাশ্মীরি জনগণের একজন দূরদর্শী ব্যক্তির প্রয়োজন ছিল যে তাদেরকে এই পরিস্থিতিতে পথ দেখাতে পারে এবং নেতৃত্ব দিতে পারে এবং শাইখ তাজাম্মুল-উল-ইসলাম তাতে পরিপূর্ণতা অর্জন করেছিলেন। তাদের মনোবল বাড়াতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

তিনি ১৯৮২ সালে কাশ্মীর নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পরিকল্পনা করেন। যদিও, ভারত সম্মেলনটি প্রত্যাখ্যান করেছিল, তবুও অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিগুলি কাশ্মীরি জনগণকে, বিশেষ করে যুবকদের সংগঠিত করেছিল এবং তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের জন্য তাদের সংগ্রামকে যেকোন মূল্যে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাঙ্গা করেছিল। জম্মু ও কাশ্মীরের অবৈধ দখলকে শেখ তাজাম্মুল-উল-ইসলাম একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করেন। নয়াদিল্লি তাকে শিকার করার জন্য তার কৌশলগুলিকে আরও তীব্র করে তোলে। যার ফলে তার জন্য জম্মু ও কাশ্মীরে তার অবস্থান চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে তাকে নেপালে স্থানান্তরিত করা হয়। তিনি নেপালে থাকার সময় ইসলামিক সেবক সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম থেকে যোগ্য মুসলিম ছাত্রদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করেন। এখন এটি নেপালি মুসলমানদের বৃহত্তম মুসলিম সংগঠনে পরিণত হয়েছে।

কাঠমান্ডুতে অবস্থানকালে তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফেডারেশন অফ স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন-এর অধীনে দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলিম ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তানে অভিবাসনের পর, শেখ তাজাম্মুল-উল-ইসলাম ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ইনস্টিটিউট অফ কাশ্মীর অ্যাফেয়ার্সের প্রধান ছিলেন। তিনি ১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান টেলিভিশনের নিউজ সেকশনে (পিটিভি) কাজ করেন এবং ১৯৯৯ সালে নির্বাহী পরিচালক হিসাবে কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিসে যোগ দেন এবং শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এর সাথে যুক্ত থাকেন। তিনি কাশ্মীর ইনসাইট ম্যাগাজিনেরও প্রধান সম্পাদক ছিলেন। তিনি কাশ্মীর নিয়ে ইংরেজি ও উর্দুতে প্রবন্ধ ও বিশ্লেষণ লিখেছেন।

প্রবীণ এই সাংবাদিক নেপাল, বাংলাদেশ, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ, ইরান, সউদি আরব, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং ইউরোপের অনেক দেশ সহ পাকিস্তানে এবং বিদেশে কাশ্মীর সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি সম্মেলন ও সেমিনারে অংশ নেন। তাঁর প্রচেষ্টা এবং নেতৃত্বের কারণেই কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিস নিপীড়িত কাশ্মীরিদের জন্য একটি শক্তিশালী এবং খাঁটি কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। শায়খ তাজাম্মুল-উল-ইসলাম কাশ্মীর বিরোধের মৌলিক নীতির সাথে কখনই আপস করেননি। তিনি সর্বদা কাশ্মীরিদের আকাঙ্খা এবং প্রাসঙ্গিক জাতিসংঘের রেজুলেশন অনুসারে বিরোধের সমাধানের পক্ষে ছিলেন। তিনি তার সততা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতার জন্য সাংবাদিক মহলে অত্যন্ত সম্মানিত ছিলেন। কাশ্মীরের জন্য তার সেবা জম্মু ও কাশ্মীরের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ