বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আল্লাহর পথে মানুষকে দাওয়াত দেয়া নবী, রাসূল ও মোমিন-মুসলমানের ওপর ফরয বা অপরিহার্য। আল কোরআনে মহান আল্লাহপাক পিয়ারা নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) কে খেতাব করে আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন : হে প্রিয় রাসূল (সা.)! আপনি আপনার প্রতিপালকের পথে মানুষকে দাওয়াত দিন হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে উত্তম পন্থায় তর্ক করবেন। নিশ্চয় আপনার প্রতি পালক তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়েছে, সে সম্বন্ধে বেশি জানেন এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি ভালোভাবেই জানেন। (সূরা আন্ নাহল : ১২৫)।
এই আয়াতে কারিমায় আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়ার বিষয়টিকে ফরয বা অপরিহার্য বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। আরবী দাওয়াত শব্দের শাব্দিক অর্থ ডাকা, আহ্বান করা আমন্ত্রণ জানানো। নবী ও রাসূলগণের সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে মানব জাতিকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করা। তারপর সমস্ত নবী ও রাসূলগণের জীবন কর্ম ও শিক্ষা এই দাওয়াতেরই ব্যবহারিক ব্যাখ্যা মাত্র। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষ পদবী হচ্ছে আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী হওয়া। আল কোরআনে এই বিশেষত্বটি এভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : হে রাসূল (সা.), আল্লাহর নির্দেশক্রমে আপনি আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী এবং সমুজ্জল প্রদীপ। (সূরা আল আহযাব : ৪৬)। অন্য এক আয়াতে আরো এরশাদ হয়েছে : আপনি বলুন, হে আমার কাওমের লোকেরা, তোমরা আল্লাহর পথে আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দাও। (সূরা আল আহকাফ : ৩১)।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া উম্মতের উপর ও ফরয করা হয়েছে। আল কোরআনে এ সম্বন্ধে ইরশাদ হয়েছে : তোমাদের মধ্যে একটি দল এমন থাকা উচিত, যারা মানুষকে কল্যাণের প্রতি দাওয়াত দিবে অর্থাৎ সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজের নিষেধ করবে। (সূরা আলে ইমরান : ১০৪)। অন্য এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : কথা বার্তার দিক দিয়ে সে ব্যক্তির চাইতে উত্তম কে হবে, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়? (সূরা ফুসসিলাত : ৩৩)।
তবে, এই দাওয়াত হতে হবে হেকমতের মাধ্যমে। আরবী হেকমত শব্দটি আল কোরআনে বিশবার এসেছে এবং অনেক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এ স্থলে কোনো কোনো মুফাসসির হেকমত শব্দের অর্থ নির্দেশ নিয়েছেন কোরআন। কেউ বলেছেন, কোরআন ও সুন্নাহ। আবার কেউ কেউ হেকমত বলতে অকাটা যুক্তি প্রমাণ স্থির করেছেন। আবার কোনো কোনো মুফাসসিরের মতে বিশুদ্ধ ও মজবুত সহীহ কথাই হলো হেকমত। সুতরাং দাওয়াত কর্মে হেকমতের পরশ অবশ্যই থাকতে হবে। (তাফসিরে তাবারী, ফাতহুল ক্বাদীর)।
একইভাবে এই দাওয়াত হতে হবে মাওয়িজাতে হাসানাহ’ অর্থাৎ সদুপদেশের মাধ্যমে। আরবী মাওয়িজাতুন্্ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোন শুভেচ্ছা মূলক বাণী বা কথা এমনভাবে বলা, যাতে প্রতিপক্ষের মন বা অন্তর তা’ কবুল করার জন্য বিনম্র হয়ে যায়। (ফাতহুল কাদীর)।
মোটকথা, প্রতিপক্ষের কাছে দাওয়াত কবুল করার সওয়াব ও উপকারিতা তুলে ধরতে হবে এবং দাওয়াত কবুল না করার শাস্তি ও অপকারিতা সম্পর্কে ও প্রতিপক্ষকে অবহিত করতে হবে। (ইবনে কাসির)। আর ‘হাসানাহ’ শব্দের অর্থ হলো এই যে, আহ্বানকারীর বর্ণনাও শিরোনাম এমন হওয়া যে, প্রতিপক্ষের অন্তর যেন নিশ্চিত হয়ে যায়, বিষয় বস্তু সম্পর্কে যাবতীয় সন্দেহ দূর হয়ে যায় এবং এই অনুভব করে যে এতে আহ্বানকারীর কোন স্বার্থ নেই। বরং তিনি এই দাওয়াত শুভেচ্ছার খাতিরে করেছেন।
মনে রাখা দরকার যে, শুভেচ্ছামূলক কথা বা সদুপদেশ মাঝে মাঝে হৃদয়বিদারক ভঙ্গিতে অথবা এমনভাবে বলা হয় যে, প্রতিপক্ষ অপমান বোধ করে বা মর্মাহত হয়। এ জাতীয় পন্থা বা রীতিবর্জন করার জন্য ‘হাসানাহ’ শব্দটি সংযুক্ত করা হয়েছে। এর সারমর্ম হচ্ছে এই যে, আহ্বানকারীকে দাওয়াত দেয়ার সময় দু’টি জিনিসের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রথমত : বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার প্রতি এবং দ্বিতীয়ত : সদুপদেশের প্রতি। এ দুটিই আসলে দাওয়াত কর্মের প্রাণ শক্তি এবং এই শ্রেণির দাওয়াতের প্রভাব হয় সুদূরপ্রসারী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।