Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অস্টিওআর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে প্রথম চিকিৎসা হচ্ছে ব্যায়াম ও ফিজিওথেরাপি

বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস পালিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:৫৬ পিএম

বিশ্বজুড়ে ৫২ কোটি মানুষ অস্টিওআর্থ্রাইটিস ভুগছে, যেটা মূলত একটি বয়স জনিত রোগ । আমাদের শরীরের হাড়ের শেষ অংশে একটা প্রতিরক্ষামূলক স্তর থাকে যাকে কার্টিলেজ বলে। বয়সবৃদ্ধি, অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস এবং রিপিটিটিভ বা ট্রামেটিক ইনজুরি এর কারণে কার্টিলেজ ক্ষয় হতে শুরু করে, এবং জয়েন্টের নড়াচড়ায় তখন ব্যাথা হয়, প্রদাহ হয় যাকে আমরা আর্থরাইটিস বলি। আর্থরাইটিস কয়েক ধরণের হতে পারে, অস্টিওআর্থ্রাইটিস তার মধ্যে অন্যতম। অস্টিওআর্থ্রাইটিস প্রতিরোধ এবং এর প্রথম চিকিৎসা হচ্ছে ব্যায়াম এবং ফিজিওথেরাপি। বাংলাদেশে একমাত্র ডক্টরেট ইন ফিজিক্যাল থেরাপি ডিগ্রিধারী আমেরিকান ফিজিওথেরাপিস্ট ড. তাজিয়া সরদার বক্তব্যে এমন তথ্য উঠে আসে।

বৃহস্পতিবার ৮ই সেপ্টেম্বর, বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর গুলশান-১ এ “ব্যাক ইন মোশন: আমেরিকান হেলথ এন্ড ওয়েলনেস সেন্টার” বিশেষ সেমিনারের তিনি এ এসব কথা বলেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ফিজিওথেরাপিস্টদের সংগঠন “ওয়ার্ল্ড ফিজিওথেরাপি” এই দিবসটি পালন করে আসছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সংগঠন এই দিবসটি পালন করে আসছে। বিকাল ৪.৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত আয়োজিত এই প্রোগ্রামের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল: “অস্টিওআর্থ্রাইটিসে ভুগছেন? ফিজিওথেরাপি দিতে পারে সমাধান”।

প্রোগ্রামের প্রধান আকর্ষণ ছিল ব্যাক ইন মোশন লিমিটেড এর চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশে একমাত্র ডক্টরেট ইন ফিজিক্যাল থেরাপি ডিগ্রিধারী আমেরিকান ফিজিওথেরাপিস্ট ড. তাজিয়া সরদার এর বক্তব্য।

ড. তাজিয়া বলেন, আর্থরাইটিস কয়েক ধরণের হতে পারে, অস্টিওআর্থ্রাইটিস তার মধ্যে অন্যতম। বিশ্বজুড়ে ৫২ কোটি মানুষ অস্টিওআর্থ্রাইটিস ভুগছে, যেটা মূলত একটি বয়স জনিত রোগ । আমাদের শরীরের হাড়ের শেষ অংশে একটা প্রতিরক্ষামূলক স্তর থাকে যাকে কার্টিলেজ বলে, আর রয়েছে সিনোভিয়াল ফ্লুইড যা জয়েন্টের নড়াচড়াকে মসৃন এবং নমনীয় করতে সহায়তা করে। বয়সবৃদ্ধি, অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস এবং রিপিটিটিভ বা ট্রামেটিক ইনজুরি এর কারণে কার্টিলেজ ক্ষয় হতে শুরু করে, এবং জয়েন্টের নড়াচড়ায় তখন ব্যাথা হয়, প্রদাহ হয় যাকে আমরা আর্থরাইটিস বলি।

আর্থরাইটিস এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বয়স ৪০ এর উর্ধে গেলেই একদিকে মাংসপেশি এবং হাড়ের ক্ষয়, অন্যদিকে শরীরে চর্বির পরিমান বাড়তে থাকায় স্থূলতা বাড়ে। এই বাড়তি ওজন শরীরের ওজন বহনকৃত যেসব জয়েন্ট আছে যেমন: হাটু, কোমর, পায়ের গোড়ালি, সেগুলোর উপর অতিরিক্ত ভার বাড়ার ফলে এই জয়েন্টগুলোতে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হবার সম্ভাবনা থাকে সব চেয়ে বেশি এবং ৬০% ক্ষেত্রেই অস্টিওআর্থ্রাইটিস সর্বপ্রথম দেখা দেয় হাঁটুতে।

তিনি আরো বলেন, আমরা যখন সমান জায়গায় হাঁটা চলা করি, তখন আমাদের শরীরের মোট ওজনের দেড় গুন চাপ পড়ে আমাদের হাঁটুর উপর। ধরুন একজন মহিলা যার ওজন ৫৫ কেজি, তিনি যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন, তার হাঁটুতে ৮২ কেজি ওজনের চাপ পড়ছে। এই মহিলার ওজন যদি ১০ কেজি বৃদ্ধি পায়, তখন উনার হাঁটুতে ৯৮ কেজি চাপ পড়বে। এই একই মহিলা যদি সিঁড়ি দিয়ে উঠা নামা করতে যান, তার শরীরের ওজনের দুই থেকে তিন গুন ওজন হাটুকে বহন করতে হয় অর্থাৎ ১১০ থেকে ১৬৫ কেজি। ক্রমাগত এই বাড়তি চাপ, জয়েন্টের হাড়, কার্টিলেজ ক্ষয় হবার পরিমান বাড়িয়ে দেয়। তাই অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোধে ওজন নিয়ন্ত্রণ অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ড. তাজিয়া আরো বলেন, অস্টিওআর্থ্রাইটিস প্রতিরোধ এবং এর প্রথম চিকিৎসা হচ্ছে ব্যায়াম এবং ফিজিওথেরাপি। একজন দক্ষ ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ রোগীর জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির বর্তমান অবস্থা যাচাই করে বিভিন্ন ব্যায়াম, ফিজিওথেরাপি মেশিন এবং হাতের সাহায্যে থেরাপির মাধ্যমে জয়েন্টের উপর চাপ কমিয়ে, এর নমনীয়তা বৃদ্ধি, শক্তি বৃদ্ধি, ব্যথা কমানো এবং জয়েন্টের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করেন।

যেসব রোগীর হাঁটুর অস্থিসন্ধির অবস্থা গুরুতর, তাদের কারো কারো ক্ষেত্রে টোটাল জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট এর প্রয়োজন হতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রেও সার্জারির সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্য সার্জারির আগে ও পরে একজন রোগীর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফিজিওথেরাপি আবশ্যক।

তিনি বলেন যাদের ইতিমধ্যে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হয়ে গিয়েছে, তারা প্রথমেই নিজে একা একা ব্যায়াম না করে, আগে একজন দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। এতে করে ভুল ব্যায়াম এর কারণে জয়েন্ট বা অস্থি ক্ষতিগ্রস্ত হবার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

সব শেষে তিনি উপস্থিত সকলকে আর্থরাইটিস এর জন্য উপকারী কয়েকটি সহজ ব্যায়াম দেখিয়ে দেন এবং বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস উপলক্ষে সকল স্তরের ফিজিওথেরাপি সেবকদের শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে ব্যাক ইন মোশনের লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চিফ মেডিকেল কনসালটেন্ট ডাঃ মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ বলেন, ফিজিওথেরাপি আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শরীরের বিভিন্ন ব্যথা ছাড়াও অর্থোপেডিক পুনর্বাসন, নিউরোলজিক্যাল পুনর্বাসন, জয়েন রিপ্লেসমেন্ট পুনর্বাসন, খেলাধুলা জনিত পুনর্বাসনে ফিজিওথেরাপির কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশে আধুনিক এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করে তুলতে হবে। এজন্য সম্মানিত চিকিৎসকগণ এবং বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে, তাহলেই বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি সেবার মান এবং উপকারিতা বিশ্বমানের হবে এবং আমাদের দেশের কাউকে পুনর্বাসনের জন্য বিদেশে পাড়ি দিতে হবেনা।

প্রোগ্রামে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ, আর্থরাইটিসে ভুগছেন এরকম রোগী, বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট ছাড়াও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ