পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের একক আধিপত্য। ক্যাম্পাস-হল, সিট নিয়ন্ত্রণ, মিছিল-মিটিংয়ে জোরপূর্বক অংশগ্রহণ করানো, গেসরুম টর্চার সেল এখন শিক্ষার্থীদের কাছে এক আতঙ্কের নাম। অপছন্দ সত্ত্বেও কেবল হলে-ক্যাম্পাসে থাকার স্বার্থেই মুখবুজে এসব মেনে নিচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া আধিপত্য বিস্তারে একই সংগঠনের একাধিক গ্রুপের সংঘর্ষ, অন্য সংগঠনের উপর হামলা-সংঘর্ষও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিত্যদিনের চিত্র। দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এতোদিন এর বাইরে থাকলেও এখন সেখানেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে ছাত্রলীগ।
সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দলের এই ছাত্র সংগঠনটি জঙ্গি কার্যক্রম মোকাবিলা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও প্রগতিশীলতার চর্চা করতে ৩৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি গঠন করেছে। আর এরপর থেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থী-অভিভাকরা। তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা জানিয়ে ইতোমধ্যে প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ নিজ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা চিঠি দিয়েছেন। কোনভাবেই যেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিণতি না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা বলছেন, ছাত্র রাজনীতি এখন আর আদর্শিক জায়গায় নেই। এগুলো একেকটি রাজনৈতিক দলের পেশিশক্তিতে পরিণত হয়েছে। রাজনীতি অনুপস্থিত থাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। এখন যদি এখানেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয় তাহলে একদল কমিটি দিলে অন্যরাও দিবে। শুরু হবে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা। ঘটবে সংঘর্ষ, সংঘাত, বন্ধ হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা, বাড়বে সেশন জট। তাই তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এরই প্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে তাদের ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির সুযোগ নেই। অনুমতি ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো কোন রাজনৈতিক প্রোগ্রামে ব্যবহারও করতে পারবে না। ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
তবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত সোমবার বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজ চাইলে, সচেতন মানুষ চাইলে, দায়িত্বশীল সুনাগরিক-বিশ্ব নাগরিক গড়তে চাইলে রাজনৈতিক সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। তবে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না, তা সেই প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তিনি বলেন, রাজনীতি করা মানুষের মৌলিক অধিকারের একটি অংশ। এখন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কী নিয়মকানুন করল, কোন রাজনৈতিক দলের কী ব্যবস্থা হলো, সেটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলের বিষয়। সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঠিক করে না। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপও করে না।
জানা যায়, ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পরপরই আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এআইইউবি), ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছে নোটিশ পাঠিয়েছে। এছাড়া শিক্ষার পরিবেশ এবং সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা বজায় রাখার স্বার্থে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি করার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি প্রফেসর এম এম শাহিদুল হাসান।
এআইইউবি’র নোটিশে শিক্ষার্থীদের জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসে যে কোনো রকম দলীয় সংগঠন চর্চা বা কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে যে কোনো সংগঠনের কমিটি গঠনের জন্য ব্যবস্থাপনার পূর্বানুমতি প্রয়োজন। অনুমতি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বা বাইরে যে কোনো কার্যকলাপ ও কর্মসূচিতে এআইইউবির নাম, লোগো বা অন্য কোনো প্রতীক ব্যবহার নিষিদ্ধ। নোটিশে আরও বলা হয়, আচরণবিধি লঙ্ঘন একটি বড় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সংশ্নিষ্ট শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত বা বহিস্কারও করা হতে পারে। ড্যাফোডিল ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ও শিক্ষার্থীদের একই নোটিশ দিয়েছে।
এ বিষয়ে ইউল্যাবের ভিসি প্রফেসর ইমরান রহমান বলেন, এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো উদ্যোগ না। এটা মেনে নেব, কি নেব না সেটা আমাদের সিদ্ধান্ত। এটা শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু না। এ ক্ষেত্রে বাইরের কোনো সংগঠনের রাইট নেই হুট করে কিছু বলবে আর সেটা মেনে নিতে হবে। এটা আমাদের অনুমোদন ছাড়া হবে না। তা ছাড়া আমাদের ছাত্ররা বাইরে গিয়ে তাদের পছন্দের সংগঠনে যুক্ত হতে পারে। সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।
তিনি বলেন, ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী, তাদের বাবা-মা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছাত্ররাজনীতি চান না। অনেক শিক্ষার্থী আমাকে ই-মেইল করেছে। স্যার, আমি ভয় পাচ্ছি।
আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মুহাম্মদ ফাজলী ইলাহী বলেন, অনেক অভিভাবক এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সংঘর্ষ-মারামারি হবে। তা ছাড়া আমি মনে করি না এর প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য খুব একটা ভালো হবে।
বিভিন্ন বিষয়ে চর্চার জন্য কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক ধরনের ক্লাব আছে, অনেক সোসাইটি আছে। তারা নানা ধরনের এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস করছে। সেটা ভালোই চলছে। তা ছাড়া আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে যা দেখছি, তাতে আমরা কিছুটা ভীত। এতে শিক্ষার পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।