Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘ইচ্ছাকৃত’ ঋণ খেলাপিদের দমনে ব্যর্থ হলে ব্যাংকিং খাত ধ্বংস হবে

বিআইবিএমে বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলনে বক্তারা

| প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের দমন করতে ব্যর্থ হলে ব্যাংকিং খাত শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করেন খাত বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের নেতিবাচক প্রভাব বিনিয়োগে পড়ছে। বিশেষ করে অবকাঠামো খাতে বেশি পড়ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশে যারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি তাদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় সম্মেলনটি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান ও বিআইবিএমের প্রফেসর ড. শাহ মো. আহসান হাবিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস স্টাডিজের ডিন ও প্রফেসর শিবলি রুবায়েত উল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াসিন আলী, ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির স্কুল অব বিজনেসের ডিন ও প্রফেসর ড. সারওয়ার উদ্দিন আহমেদ এবং বিআইবিএমের পরিচালক ও প্রফেসর ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি প্রমুখ।
গভর্নর ফজলে কবির বলেন, দেশের ব্যাংক খাত নানা চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে ২০১৬ সাল পার করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে ছিল বৈশ্বিক মন্দা, আর্থিক অনিয়ম ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সংকট। এসব কারণে ব্যাংকের প্রতি সাধারণ মানুষের খারাপ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যেও ব্যাংক ও আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতের চেষ্টা করা হয়েছে। চুরি যাওয়া রিজার্ভের অর্থ উদ্ধারে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, মামলা করার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। তবে যা করার ভেবে-চিন্তে করা হবে বলে জানান তিনি।
সম্মেলনে প্রথম প্যানেল আলোচনার প্রধান ছিলেন প্রফেসর শিবলি রুবায়েত উল ইসলাম। তিনি বলেন, বিনিয়োগসহ সব ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে অবকাঠামো খাতে সবচেয়ে বেশি।
ইয়াসিন আলী বলেন, ব্যাংক খাতে বড় বিপদ খেলাপি ঋণ। বর্তমানে অবলোপনসহ মোট খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪২ হাজার কোটি টাকার অবলোপন বাদ দিলে খাতা-কলমে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যা মোট ঋণ বিতরণের ১০ শতাংশের বেশি। তার প্রশ্ন, একটা দেশের ব্যাংক খাতে ১০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ থাকলে কীভাবে চলবে। তার থেকেও ভয়াবহ ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ। তার মতে, এ ধরনের মন্দ ঋণ কোনো দিন ফেরত আসবে না। ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা সংসদ সদস্য। এদের কেউ রাজনীতি করে। তাদের অভ্যাস হলো- ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আর ফেরত দেয় না। এটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে নিতে হবে। ইয়াসিন আলী বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। একই আদলে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে যারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি তাদের তালিকা জনসাধারণের মাঝে প্রকাশ করার দাবি জানান তিনি। আবার এসব খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যাংক মামলা করে। সে মামলা বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। কোনো নিষ্পত্তি হয় না।
বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বড় গ্রæপগুলো ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়। এসব গ্রæপের কিছু হলে পুরো ব্যাংকিং পদ্ধতি থেমে যাবে। তার মতে, কোনো গ্রæপ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গেলে তার প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার শর্ত দেয়া যেতে পারে। দেশের ব্যাংক খাতে প্রচুর উদ্বৃত্ত তারল্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে ইয়াসিন আলী বলেন, নতুন বিনিয়োগ নেই। ঋণের চাহিদা কম। সে কারণে ব্যাংকে উদ্বৃত্ত তারল্য জমছে।
খেলাপি ঋণের বিষয়ে আরফান আলী বলেন, দেশে সুন্দর আইন আছে, কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে ব্যাংকের লাভ ঋণ অবলোপনের পেটে যাবে। এক সময় পুরো ব্যাংকই শেষ হয়ে যাবে। কারণ ঋণ অবলোপন করতে হলে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখতে হয়। এতে ব্যাংক মূলধন সংকটে পড়ে। তিনি বলেন, ক্লাস ব্যাংকিং বা কিছু বিষয় এবং পণ্যে ব্যাংকিং করা। এ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে হবে। ব্যাংকের ৭০ শতাংশ টাকা ঢাকা-চট্টগ্রামে আটকে আছে। এটা অনেক ভয়াবহ ঝুঁকি। কয়েকজন গ্রাহকের মধ্যে সীমিত থাকা যাবে না। নতুন ব্যাংকসহ সব ব্যাংককে ইথিকস মেনে চলার আহŸান জানান তিনি।
প্যানেল আলোচনায় বক্তারা বলেন, ব্যাংকে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। এটা থামাতে হবে। বেশিরভাগ ব্যাংকের রিটার্ন নি¤œমুখী।
সরকারি ব্যাংকের তুলনায় বেসরকারি ব্যাংক ভালো। আবার সাধারণ ব্যাংকিংয়ের তুলনায় ইসলামী ব্যাংকিং ভালো করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ