মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
পাকিস্তানের চলমান বিধ্বংসী বন্যাকে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির বিষয়ে বিশ্বের জন্য একটি ‘সতর্কতা সঙ্কেত’ বলে আখ্যায়িত করছেন বিশেষজ্ঞরা। এক জলবায়ু বিজ্ঞানী বিবিসি নিউজকে বলেছেন, এমন অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত শুধু দরিদ্র দেশকেই নয় যে কোনো দেশকেই বিপর্যস্ত করে তুলবে।
শনিবার পাকিস্তানের আরও ২০০০ জনকে বন্যার পানি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। দেশটির প্রায় অর্ধেক ফসল বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার পর দেশটির মন্ত্রীরা খাদ্য সংকটের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। পাকিস্তানের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এই বন্যায় দেশটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। মৃত্যুর সংখ্যা ইতিমধ্যেই ১৩০০ ছাড়িয়ে গেছে।
ওদিকে পাকিস্তানবাসীদের মধ্যে বৈষম্যের স্বীকার হওয়ার অনুভূতিও তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে। কারণ, পাকিস্তান বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ক্ষেত্রে মাত্র ১%-রও কম অবদান রাখে। অথচ দেশটি এর ভৌগলিক অবস্থানের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি কুফল ভোগ করতে শুরু করেছে।
পাকিস্তান পৃথিবীর এমন একটি স্থানে অবস্থিত যেখানে দুটি প্রধান ধরনের আবহাওয়ার প্রভাব রয়েছে। এর একটি উচ্চ তাপমাত্রা এবং খরার কারণ হতে পারে, যেমন মার্চ মাসের তীব্র তাপপ্রবাহ, এবং অন্যটি মৌসুমী বৃষ্টি নিয়ে আসে।
পাকিস্তানের জনসংখ্যার অধিকাংশই সিন্ধু নদীর তীরে বাস করে। নদীটি বর্ষার বৃষ্টিতে ফুলে যায়। ফলে প্রায়ই বন্যা হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভারতীয় উপমহাদেশে গ্রীষ্মকালীন বর্ষা মৌসুমে গড় বৃষ্টিপাত বাড়বে। তবে পাকিস্তানের বেলায় বৃষ্টিপাত ছাড়াও আছে, এর বিশাল বিশাল হিমবাহের বিপদ।
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলকে কখনও কখনও পৃথিবীর ‘তৃতীয় মেরু’ বলেও উল্লেখ করা হয়। কারণ দুই মেরু অঞ্চলের বাইরে পৃথিবীর যে কোনও জায়গার চেয়ে বেশি হিমবাহী বরফ রয়েছে সেখানে।
পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে হিমবাহের বরফ গলে যাচ্ছে। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি বিবিসি নিউজকে জানিয়েছে, পাকিস্তানের গিলগিট-বালতিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলের হিমবাহগুলো দ্রুত গলছে, যার ফলে ৩,০০০-এরও বেশি হ্রদ তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৩৩টি আকস্মিক বিস্ফোরণের ঝুঁকিতে রয়েছে। যেখান থেকে লাখ লাখ ঘনমিটার পানি এবং বর্জ্য বেরিয়ে আসতে পারে। যার ফলে ৭০ লাখ মানুষের জীবন জীবিকা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে।
অতীতে দেখা গেছে, দুর্বল বন্যা প্রতিরক্ষা বা নিম্নমানের আবাসনের কারণে দরিদ্র দেশগুলো অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেনি।
কিন্তু জলবায়ু বিজ্ঞানী ফাহাদ সাঈদ বিবিসি নিউজকে বলেছেন, চলতি গ্রীষ্মের বিপর্যয়কর বন্যায় এমনকি একটি ধনী দেশও বিপদে পড়ে যাবে।
ড. সাঈদ পাকিস্তানের ইসলামাবাদ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন, ‘এটি এক ভিন্ন ধরণের বন্যা, বন্যার মাত্রা এত বেশি এবং বৃষ্টি এতটাই চরম যে, এমনকি খুব শক্তিশালী বন্যা প্রতিরক্ষাও এর মোকাবিলা করতে পারবে না’।
এই প্রসঙ্গে তিনি ২০২১ সালের জার্মানি এবং বেলজিয়ামের বন্যার দিকেও ইঙ্গিত করেন। ওই বন্যায় কয়েক ডজন মানুষ মারা গিয়েছিল।
পাকিস্তানে গত জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশটির গত ৩০বছরের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের থেকে প্রায় ১৯০% বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
এবার এমন এলাকায়ও বন্যা হয়েছে, যা সাধারণত শুষ্ক এবং আধা-শুষ্ক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত। যেমন, সিন্ধু প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চল এবং বেলুচিস্তান।
ড. সাঈদ বলেন, এই বন্যা বিশ্বব্যাপী সরকারগুলোর প্রতি এখনই সাবধান হওয়ার জন্য ‘একটি সতর্কতা সঙ্কেত’। যারা একের পর জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে, কিন্তু এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
তিনি বলেন, ‘শিল্পবিপ্লবের আগের সময়ের চেয়ে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তেই এমন দুর্যোগ দেখা যাচ্ছে। এর চেয়ে বেশি বাড়লে তা পাকিস্তানের অনেক মানুষের জন্যই মৃত্যুদণ্ড বয়ে আনবে’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।