Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা বন্ধে বিশ্বকে ব্যবস্থা নিতে হবে

রাখাইনে সেনা শক্তির অপব্যবহার করছে মিয়ানমার : ইইউ

| প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কুয়ালালামপুরে বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশে নাজিব রাজাক
ইনকিলাব ডেস্ক : মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর বর্বরোচিত গণহত্যা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের সরকারে কঠোর দমন পীড়নের ব্যাপারে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি’র নিরবতার নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। গতকাল (রোববার) কুয়ালালামপুরে এক বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। নির্যাতিত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানাতে এ বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী নাজিব বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশে বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানের ওপর সংঘটিত হত্যাকা-ের ব্যাপারে বিশ্ব অলস বসে থাকতে পারে না’। রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে নির্যাতন বন্ধে জাতিসংঘের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং ইসলামী সম্মেলন সংস্থা বা ওআইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নাজিব। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের কষ্ট এবং দুর্ভোগ লাঘবে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি কড়া সমালোচনা করেন মালয়েশিয়ার এ নেতা। সু চির নোবেল পাওয়াকে ব্যঙ্গ করে নাজিব রাজাক বলেন, ‘অং সান সু চির নোবেলের কাজ কী? আমরা তাকে বলতে চাই, যথেষ্ট হয়েছে, আমরা অবশ্যই মুসলমান ও ইসলামকে রক্ষা করব’।
এদিকে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে সহিংসতা চলছে সেটিকে জাতিগতভাবে নির্মূল করার চেষ্টা বলে অভিহিত করেছে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত শনিবার দেয়া এক কড়া বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়টি আরো বলেছে, মুসলমানদের বেছে বেছে হত্যা কিংবা নির্যাতন করে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
রাখাইনে সেনা শক্তির অপব্যবহার করছে মিয়ানমার : ইইউ
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। তারা বলেছে, রাখাইনে সেনা শক্তির অপব্যবহার করছে মিয়ানমার সরকার। এ ইস্যুতে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি তুলেছে সংস্থাটি। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মুখপাত্র ফ্রেডরিকা মেঘোরিনি বলেন, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে সেনা শক্তির অপব্যবহার করছে মিয়ানমার সরকার। সেখানকার হাজার হাজার মানুষ নিপীড়নের শিকার। অবিলম্বে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মিয়ানমারকে সরকারকে আহ্বান জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। পাশাপাশি সেখানকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত দাবি করছে ইইউ।
এদিকে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএ’র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে গত দুই মাসে সেখানে তীব্র স্বাস্থ্যসেবায় তীব্র সঙ্কটে ভুগছে রাখাইনের মংডু এলাকা। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রাজ্যটির ৭ হাজারের বেশি গর্ভবতী নারী।
যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি : রোহিঙ্গারা চরমপন্থার দিকে ঝুঁকতে পারে
মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক উত্তরণের অন্যতম সমর্থক যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সেখানে সাম্প্রতিক সেনা অভিযানে ঘরবাড়িছাড়া হাজারও রোহিঙ্গা মুসলিম চরমপন্থার দিকে ঝুঁকতে পারে। এ ছাড়া এ পরিস্থিতিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ধর্মীয় উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। পূর্ব এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড্যানিয়েল রাসেল এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর জোরালো অভিযানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এতে দেশটিতে জিহাদি চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি রাখাইনের একাধিক পুলিশ চৌকিতে গত অক্টোবরে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করে। ওই এলাকায় রোহিঙ্গা মুসলিমরা বসবাস করে। অভিযান শুরুর পর তাদের অনেকে বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। রাখাইনে সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলিমদের আগে থেকেই উত্তেজনা রয়েছে।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা-সঙ্কট নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের আহ্বান জানাতে প্রতিবেশী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ড্যানিয়েল রাসেল। তিনি বলেন, এসব দেশের আহ্বানের জেরে ধর্মীয় উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে। রাখাইনের পরিস্থিতি ঠিকমতো সামাল দিতে না পারলে জিহাদিরা সুযোগ নিতে পারে। তারা প্রতিবেশী বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
৭ ডিসেম্বর কোলকাতায় মিয়ানমার কনস্যুলেট ঘেরাও কর্মসূচি
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে আগামী বুধবার পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতায় মিয়ানমার কনস্যুলেট ঘেরাও করবে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন। সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেছেন, ‘মিয়ানমার পুলিশ, সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা রোহিঙ্গা মুসলিমদের যেভাবে গণহত্যা ও নির্যাতন চালাচ্ছে তার প্রতিবাদে মিয়ানমার কনসাল জেনারেলের দফতরে ৭ ডিসেম্বর মুসলিমদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে যৌথভাবে বিক্ষোভ দেখানো হবে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবিতে কনস্যুলেটে স্মারকলিপিও দেয়া হবে।’ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও উগ্র বৌদ্ধদের ওই তৎপরতাকে মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধ বলে অভিহিত করেছেন মুহাম্মদ কামরুজ্জামান।
কোলকাতার ওই প্রতিবাদ সমাবেশে ‘সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন’ ছাড়াও ‘অল ইন্ডিয়া সুন্নাতুল জামাত’, ‘জামায়াতে ইসলামী হিন্দ’, ‘জমিয়তে উলামায়ে বাংলা’, ‘ফুরফুরা শরীফ হেজবুল্লাহ’, ‘জমঈয়তে আহলে হাদীস’, ‘জমিয়াতুল আইম্মা অল উলামা’, ‘সারা বাংলা ইমাম-মুয়াজ্জিন কাউন্সিল’, ‘অল ইন্ডিয়া ইমাম-মুয়াজ্জিন ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন’, ‘স্টুডেন্টস ইসলামিক অর্গানাইজেশন’, ‘সংখ্যালঘু ছাত্র কাউন্সিল’সহ সংখ্যালঘু ও মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন বলেও মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন।
সম্প্রতি জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার জন ম্যাককিসিক বলেছেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে জাতিগত সংখ্যালঘু নিধনে নেমেছে। গত অক্টোবরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হামলার মুখে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী ঘরবাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী পুরুষ ও শিশুদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করছে, নারীদেরকে ধর্ষণ করছে, তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। সূত্র : বিবিসি, পার্স টুডে, এপি।



 

Show all comments
  • Chanchal ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১:৩০ এএম says : 0
    lip service na dea, kisu korun
    Total Reply(0) Reply
  • Rakib ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৮:৫৭ এএম says : 0
    মিয়ানমার বর্বর জাতি।
    Total Reply(0) Reply
  • Nipa ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:২৪ পিএম says : 1
    এই কথা বলতেই থাকেন,
    Total Reply(0) Reply
  • Jasim Uddin Akon ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:২৫ পিএম says : 0
    অবশ্য কর্তব্য
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ