Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিসোপ্রোস্টল-ফলিস ক্যাথেটার পদ্ধতি: সন্তান জন্মদানে সিজার লাগেনি ৬১ শতাংশের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৮:৪৭ পিএম

দুই পদ্ধতি প্রয়োগে সন্তান জন্মদানে বেড়েছে নরমাল ডেলিভারির হার। সন্তান জন্মদানে যারা সিজার করতেন- এই দুই পদ্ধতি প্রয়োগে গড়ে তাদের ৬১ শতাংশের সিজার লাগেনি, নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। সিজার করতে হয়েছে ৩৯ শতাংশের। শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অবস অ্যান্ড গাইনী বিভাগে ভর্তি হওয়া ২০০ জন প্রসূতির উপর এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত চলানো স্টাডির ফলাফল শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) প্রকাশ করা হয়। শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিক্যাল কলেজের আইটি রুমে ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠান হয়। অবস অ্যান্ড গাইনী বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. মুনিরা ফেরদৌসী ফলাফল উপস্থাপন করেন। ১০০ জনের উপর মিসোপ্রোস্টল এবং ফলিস ক্যাথেটার পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। আর ১০০ জনকে শুধু জুস খাইয়ে অর্থাৎ মিসোপ্রোস্টল পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

প্রফেসর ডা. মুনিরা ফেরদৌসী বলেন, একটি স্টাডির মধ্যে আমরা দুটি উদাহরণ দেখিয়েছি। যে গর্ভবতী মায়েরা আসলেই আমরা সিজারে নিয়ে যেতাম, তাদের সিজারে না নিয়ে গিয়ে অপেক্ষা করেছি। কাউন্সিলিং করেছি। অবস্থা বুঝে আমরা ইনডাকশন দিয়েছি। স্টাডির মূল যেটা ছিলো আমরা একটা মেক্যানিক্যাল মেথড ইউজ করেছি। তা হচ্ছে ফলিস ক্যাথেটার। যা আমাদের দেশে এখনো অনেকে করেন না। আমরা দেখতে চাচ্ছিলাম এর ফল কেমন আসে। আমরা যে দুটি পদ্ধতি প্রয়োগ করেছি, তাহল ফলিস ক্যাথেটার এবং মিসোপ্রোস্টেট জুস দিয়েছি। তাতে দেখা গেছে নরমাল ডেলভারির হার অনেক বেড়ে গেছে।

যাদের উপর মিসোপ্রোস্টল এবং ফলিস ক্যাথেটার পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৬৪ শতাংশের নরমাল ডেলিভারি হয়েছে অর্থাৎ তাদের সিজার করতে হয়নি। সিজার করতে হয়েছে ৩৬ শতাংশের। অথচ এদের সবাই সিজারে চলে যেতেন।

মিসোপ্রোস্টল পদ্ধতি অর্থাৎ শুধু জুস খাওয়ানো ফলে নরমাল ডেলিভারি হয়েছে ৫৮ শতাংশের এবং সিজার করতে হয়েছে ৪২ শতাংশের। সন্তান জন্মদানে যারা সিজার করতেন এই দুই পদ্ধতি প্রয়োগে গড়ে তাদের ৬১ শতাংশের নরমাল ডেরিভারি হয়েছে। সিজার করতে হয়েছে ৩৯ শতাংশের।

প্রফেসর ডা. মুনিরা ফেরদৌসী জানান, নরমাল ডেলিভারি হলে হাসপাতালে অনেকদিন থাকতে হয়না। কারো কারো রাতে ডেলিভারি হয়েছে সকালে চলে গেছেন। বেশির ভাগই একদিনে ডেলিভারি করে চলে গেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে দুই দিন পর্যন্ত তাকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। এই পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে কত ঘন্টার মধ্যে ডেলিভারি হলো আমরা তাও দেখতে চেয়েছে। তাতে দেখা গেছে- এই পদ্ধতিতে ১২ ঘন্টায় মিসোপ্রোস্টল এবং ফলিস ক্যাথেটারে ডেলিভারি হয়েছে ২১ জনের, শুধু মিসোপ্রোস্টলে হয়েছে ১১ জনের। ১২ থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মিসোপ্রোস্টল এবং ফলিস ক্যাথেটারে ডেলিভারি হয়েছে ৬৮ জনের এবং মিসোপ্রোস্টলে হয়েছে ৫৬ জনের। মিসোপ্রোস্টল এবং ফলিস ক্যাথেটারে ২৪ ঘন্টার বেশি লেগেছে ১১ জনের এবং মিসোপ্রাস্টলে ৩৩ জনের। মিসোপ্রাস্টল মানে যাদের শুধু জুস খাওয়ানো হয়েছে। আর মিসোপ্রোস্টল ও ফলিস ক্যাথেটার হচ্ছে তাদের জুসও খাওয়ানো হয়েছে, সেই সাথে ফলিস ক্যাথেটার অর্থাৎ বেলুন ক্যাথেটার দেয়া হয়েছে। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে কাউন্সিলিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সিজারের মাধ্যমে একজন গর্ভবতী মায়ের সন্তান জন্মদানে খুব একটা বেশি সময় লাগে না। অল্প সময়ে সন্তান বের করা যায়। কিন্তু এর ঝুঁকি অনেক। ক্ষতিকর অনেক দিক রয়েছে। তাই সিজারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু নরমাল ডেলিভারি করতে বেশ সময় অপেক্ষা করতে হয়। ধৈর্য ধরতে হয়। যখন নরমালি হবে না, তখন আমরা সিজারে যাই। সিজারে যাওয়ার আগে এই ধাপগুলো প্রয়োগ করলে সিজারে সন্তান জন্মদানের হার অনেক কমে যাবে। নরমাল ডেলিভারির হার বেড়ে যাবে।

প্রফেসর ডা. মুনিরা ফেরদৌসী বলেন, সবার কিন্তু নরমাল ডেলিভারি সম্ভব নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিজার করতে হবে মা এবং নবজাতকের জন্য। অপ্রয়োজনে যেটা সিজার হয়ে যেতÑ আমাদের এই দুই পদ্ধতিতে তা আমরা কমিয়ে নিয়ে আসতে পারবো। এসেই যেন সিজারে চলে না যায়, কারণ সিজারে অনেক সমস্যা আছে। যেটা সিজার করা দরকার সেটা করতে হবে। কিন্তু যেটা দরকার না, সেটা করবো না। আর এই পদ্ধতি গুলো যে প্রতিষ্ঠানে করতে হবে সেখানে পর্যাপ্ত লোকবল যন্ত্রপাতি ও সিজারের ব্যবস্থাও থাকতে হবে। যাতে কোনো প্রসূতির এই পদ্ধতিতে না হলে, প্রয়োজন বুঝে যাতে সিজার করা যায়।

ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিক্যাল কলেজের পরিচালক প্রফেসর ডা. মো. খলিলুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. এ বি এম মাকসুদুল আলম। উপস্থিত ছিলেন হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি, কোষাধক্ষ্য মুন্সী মোহাম্মদ বায়েজিদ প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ