বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, গত ১৩ বছর ধরে আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা আর জ্বালাও-পোড়াও করে বিএনপি এখন খাদের মধ্যে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। কোন রকমে তাদের নাকটা ভেসে আছে। এখনও যদি তারা সঠিক পথে না আসে, নির্বাচনে না আসে, মুক্তিযুদ্ধের-স্বাধীনতার চেতনা-আদর্শের রাজনীতি না করে, তাহলে ভেসে থাকা নাকটাও ডুবে যাবে। আর কোন দিন খাদ থেকে উঠতে পারবে না।
শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে শেখ রাসেল স্টেডিয়ামে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপি নানা রকম ষড়যন্ত্র করছে। তারা আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শেষ লড়াই, মরণপণ লড়াই এর হুমকি দিচ্ছেন। আমি বলতে চাই, এখন পর্যন্ত কোন লড়াইয়ে বিএনপি জিততে পারে নাই, ভবিষ্যতেও আর পারবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ লড়াইয়ে কখনও হারে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও হারে না।
বিএনপির উদ্দেশে মন্ত্রী আরও বলেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করুন। এছাড়া, ক্ষমতায় আসার দ্বিতীয় কোন পথ খোলা নেই।
তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই দলের খুঁটি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, নেতৃত্ব নিয়ে কোন কোন্দল থাকলে তা ভুলে যেতে হবে। দলের আদর্শই আমাদের কাছে সবচেয়ে বড়। আমাদের শক্তি হলো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, ত্যাগ ও সাহস। আর দলের নেতৃত্ব জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে। এই দুটিকে আঁকড়ে ধরে আমাদের সকল নেতাকর্মীকে কাজ করতে হবে। তাহলে কোন শক্তিই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারাতে পারবে না। আবার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসবে, ইনশাল্লাহ।
আন্দোলন-সংগ্রামের জন্যও নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, যে কোন পরিস্থিতিতে আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হোন। বিএনপি-জামায়াত যদি দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাহলে রাজপথে থেকে আমরা তা মোকাবেলা করব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও আমরা সহযোগিতা করব।
আরো বলেন , বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজদের জায়গা হবে না। দেশের মানুষ সুখে থাকলে, শেখ হাসিনা সুখী হয়। বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে আয়োজন করা হয়। শুরুতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন-ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, এখনও অনেকে পরীক্ষা নেয়ার কথা বলেন। অনেকে বলেন অবস্থান পরিষ্কার করেন। কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জে জনসভা ডেকেছিলাম। সেটা অনেকেরই পছন্দ হয়নি। তারা বলেছিল শামীম ওসমানের জনসভা। আমি শেখ হাসিনার কর্মী শেখ হাসিনার কর্মী হয়েই মরতে চাই। ভাইয়ে ভাইয়ে অনেক বিরোধ থাকে। সকলের কাছে অনুরোধ জানাতে চাই, আসুন ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা এক থাকি। কারণ বাংলাদেশ বাঁচাতে হবে। সেজন্য শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে হবে। আমরা খেলবো সমস্ত অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে।
শামীম ওসমান বলেন, সামনে আঘাত আসবে। এ আঘাত মোকাবিলা করতে সুশৃঙ্খল দল দরকার। আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ সোনারগাঁ গড়ব। প্রয়োজনে ঘরে ঘরে গিয়ে কাজ করব।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, বিগত দিনে আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের ভূমিকা ছিল সব সময়ে গুরুত্ব। এ জেলা থেকে জোহা চুনকার মিছিল না গেলে ঢাকার সমাবেশ হতো না। কিন্তু এখন এক নেতার এক দেশ হয়ে গিয়েছে নারায়ণগঞ্জ। আমি নারায়ণগঞ্জের নেতাদের বলছি সকলকে সমান সম্মান দেওয়া উচিত। এ দল টিকে আছে তৃণমূলের জন্য। দুঃসময়ে যারা দলের হাল ধরে তাদের অসম্মান করার অধিকার নারায়ণগঞ্জের কোন বড় নেতার নাই। আওয়ামী লীগের সসুময়ে যারা ছিল তাদেরকেই শুধু পদায়ন করলে চলবে না। বরং যারা দুঃসময়ে ছিল তারাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক দলপ্রেমিক।
আইভী আরো বলেন, সোনারগাঁয়ে কি এমন হয়েছে যে বার বার এখানে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিতে হবে। নারায়ণগঞ্জে না হয় কারণ ছিল যে জোহা কাকার ছেলেকে (নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান) দিতে হবে। কিন্তু সোনারগাঁয়ে যার নাম ছিল না, নিশানা ছিল না তাকে কেন দিতে হবে। সোনারগাঁয়ের আওয়ামী লীগের নেতারা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না নারায়ণগঞ্জের হস্তক্ষেপের কারণে। এখন অনেকেই অমুক ভাই তমুক ভাইয়ের নামে স্লোগান দেয়। কিন্তু ক্ষমতা না থাকলে আর কেউ থাকে না। তাই স্লোগান দিতে হবে আমাদের দলের ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি বলেন আমি প্রার্থী দিলাম আওয়ামীলীগে মধ্যে আপনার আবার গ্রুপিং করে নৌকাকে ডুবাবেন, তার চেয়ে জাতীয় পাটিই ভালো।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারের কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নবিউল্লাহ হিরু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মৃণাল ক্রান্তি দাস, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাত, সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত শহিদ মোঃ বাদল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আনিসুর রহমান দিপুসহ প্রমুখ। সোনারগাঁ
পৌর এলাকার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে দ্বিতীয় দফা তিন কমিটি সদস্য ঘোষনা করে।
সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুইয়াকে সভাপতি, সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সারকে সাধারণ সম্পাদক ও পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে সহ-সভাপতি করে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। পৌর এলাকার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপির উপস্থিতিতে কমিটির নাম ঘোষনা করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।