পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লার বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসকের অবহেলায় রোগী মুত্যুর ঘটনা বেড়েই চলেছে। এসব ঘটনার বেশির ভাগ শিকার হচ্ছেন হৃদরোগী, নবজাতক ও গর্ভবতীরা। কেবল অবহেলায় মৃত্যুই নয়, অনেক ক্লিনিকের বিরুদ্ধে সেবার নামে রোগীর সাথে প্রতারণারও অভিযোগ রয়েছে। গত এক বছরে কুমিল্লার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় ১৫ জনের বেশি রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেও পাচ্ছেন না কোনো প্রতিকার। বরং অভিযোগকারীরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা চিকিৎসকের হুমকির শিকার হয়েছেন। সম্প্রতি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ ও মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: শেখ মারুফুজ্জামানের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলায় এক মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তিনি সরকারি চাকরির পাশাপাশি কুমিল্লা নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চেম্বার করেন। ওই মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের পক্ষ থেকে ডা: মারুফুজ্জামানের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছেও অভিযোগ করা হয়েছে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এলে পাচ্ছে না চিকিৎসকের দেখা। ফোনকলে আসতেও চিকিৎসকের হয় বিলম্ব। আবার চিকিৎসক পেলে জরুরি চিকিৎসার বদলে শুরু হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার দৌড়ঝাঁপ। ততক্ষণে রোগী ওপারে। আবার গর্ভবতী মহিলার চিকিৎসা নিয়েও কম টানাহেঁচড়া হয় না। সন্তান জন্ম দিয়ে হয় মা মারা যায়, নয়তো নবজাতক। এসবই ঘটে ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসকের কর্তব্যের অবহেলার কারণে। গত এক বছরে কুমিল্লার লাকসাম, মুরাদনগর, ব্রাহ্মণপাড়া, দাউদকান্দি, চান্দিনা, বরুড়া ও কুমিল্লা নগরীর বেশ ক’টি বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসকের অবহেলায় ১৫ জনের বেশি রোগী মারা গেছে। এসব ঘটনা ঘিরে থানা বা আদালতে মামলাও হয়েছে। আবার ভুক্তভোগীরা হুমকি-ধমকিতে মামলা প্রত্যাহার করতেও বাধ্য হয়েছেন।
সম্প্রতি কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলায় বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান মুন হাসপাতালের খ-কালীন চিকিৎসক কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের হৃদরোগ ও মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: শেখ মারুফুজ্জামানের চিকিৎসাজনিত অবহেলায় মৃত্যুবরণ করেন কুমিল্লা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার গিয়াস উদ্দিন খান। তিনি ৬ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তার পরিবারের লোকজন তাকে মুন হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ডা: শেখ মারুফুজ্জামানের কাছে এলে তিনি কিছু ওষুধ লিখে রোগীকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন। পরদিন সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন আবারো খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে আবারো তাকে হাসপাতাল নেয়া হয়। তখন ওই চিকিৎসককে ফোনে জানালে তিনি হাসপাতাল আসতে অপারগতা প্রকাশ করে জানান রোগীকে সিসিইউতে ভর্তি করানোর জন্য। কিন্তু গিয়াস উদ্দিনের পরিবার থেকে তাকে হাসপাতাল আসার জন্য বার বার অনুরোধ করা হলেও তিনি আসেননি। আর এমনি দুর্ভাগ্যজনক অবস্থার মধ্যেই চিকিৎসক মারুফুজ্জামানের অবহেলা ও গাফিলতির কারণে মুহুর্তের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন খান। গতকাল রোববার কুমিল্লা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে সংবাদ সম্মেলন করে এভাবেই চিকিৎসকের অবহেলায় এক পিতার করুণ মৃত্যুর বর্ণনা তুলে ধরেন অসহায় মেয়ে মাহমুদা আক্তার নিপা। সংবাদ সম্মেলনে তার ছোট বোন আফরোজা আক্তার মুন ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার নন্দন চৌধুরী, সহকারী কমান্ডার ফজলুর রহমান সরকার, মনির হোসেন, হাজী আবদুল ওহাব, আজিজুল বাসার সেলিম ও মুক্তিযোদ্ধা মো: মোহন মিয়াসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে নিহত মুক্তিযোদ্ধার কন্যা নিপা জানান, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ন্যায়বিচার চেয়ে কুমিল্লা বিএমএকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু চার মাস ধরে বিএমএর কোনো সাড়াশব্দ নেই। ওই চিকিৎসকের সনদ বাতিল ও তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছেও অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি কমান্ডার নন্দন বলেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে কুমিল্লার মুক্তিযোদ্ধারা বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে। আজকে একশ্রেণির বেসরকারি হাসপাতাল ও কতিপয় অসাধু চিকিৎসকের কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হবে। না হয় এভাবে ভুল চিকিৎসা নতুবা চিকিৎসকের অবহেলায় মানুষ মরতেই থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।