সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপির ক্ষতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল
রহিমা আক্তার মৌ : তুলতুলির শহরে আসার প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল। দেড় বছরে অনেক বড় হয়েছে। আগে যে সুয়েটারটা ছিল, সেটাই গতবছর গায়ে দেয়। নীলাঞ্জনা ম্যাডাম একটা নতুন সুয়েটার কিনে দিতে বলেছিল গত বছর। তা শুনে তুলতুলি বলে...
-- আফা আফা, একটা কতা ছিল।
-- বলে ফেল এখুনি।
-- আমার সুয়েটার লাগবে না, যেটা আছে তাই দিয়ে হবে। সামনের বছর আফনে আমারে একটা লাল সুয়েটার কিনে দিয়েন।
-- তোর বুঝি লাল সুয়েটার খুব পছন্দ।
-- হ আফা। ওই যে মিতু আফা যেমনটা গায়ে দিয়ে ইসকুলে যায়, ঠিক অমন।
মিতুর স্কুলে পরার জন্যে লাল সুয়েটার কিনতে হয় প্রতিবছর। এই বছরেরটা ওই বছর পরতে চায় না মিতু। পুরোনো কাপড়ের সাথে সেই সুয়েটার গ্রামে পাঠিয়ে দেয় হয় প্রতিবছর। নীলাঞ্জনা তুলতুলিকে ডেকে বলে...
-- চল তোকে সুয়েটার কিনে দিব।
কিন্তু কোনোভাবেই সে এবার নিবে না। সামনের বছর নতুন টুকটুকে সুয়েটার নিবে।
-- আচ্ছা তাহলে মিতুর এটা নিয়ে যা। এটা তোর গায়ে লাগবে।
-- না, আফা আমার লাগব না। এবার পরার মতো আছে।
অনেক বলার পর ও তুলতুলি নিতে রাজি হয়নি। হয়তো ওর ভাবনা এটা নিলে পরের বছর আর দেয়া হবে না।
-- ঠিক আছে তোকে সামনের শীতে নতুন কিনে দিব।
সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে তুলতুলির ভাই হৃদয় অসুস্থ হয়, ডাক্তার দেখায়, তাতে কিছু হয়নি। সবাই ঠিক করে গ্রামে গিয়ে কি এক চিকিৎসা করাবে। তুলতুলির নানী হালিমা এসে বলে...
-- আপা মাসের ২০ তারিখে আমরা বাড়ি যাব, দিন পনেরো থেকে চলে আসব।
এইভাবেই সবাই বাড়ি যায়। তুলতুলির নানা কামাল ছিল পাশের বাড়ির দারোয়ান। কামালের জন্যেই একে একে
তুলতুলিরা সবাই শহরে আসে। ২০ তারিখে তুলতুলি ওর নানী ওর মা বাবা আর ভাইয়েরা গ্রামে যায়। ২৬ তারিখে কামালের বাড়ির মালকিন ওকে ডেকে বলে...
-- তোমার আর কাজ করতে হবে না, আমার গ্রাম থেকে লোক আসবে।
আসলে অনেকদিন থেকে এমন একটা সুযোগ খুজছিল মালকিন। কারণ কামাল বোকা ধরনের। বাধ্য হয়ে কামাল কাজ ছেড়ে গ্রামে চলে যায়। কথা ছিল অক্টোবরের মাঝামাঝিতে সবাই আবার শহরে আসবে, তা আর হলো না।
এদিকে অল্প অল্প শীত পড়তে শুরু করেছে শহরে, গ্রামে আরেকটু বেশিই পড়ে। শহরের ফুটপাত থেকে শুরু করে বিলাসবহুল শপিংমলে স্তরে স্তরে সাজানো আর ঝুলানো অনেক শীতের কাপড়। নীলাঞ্জনা ঘর থেকে বেরুলেই চোখ পড়ে সেইসব সুয়েটারের দিকে। লাল সুয়েটার দেখলেই তুলতুলির কথা মনে পড়ে। কিন্তু কিভাবে তুলতুলিকে সুয়েটার দিবে নীলাঞ্জনা। আশপাশের ছোট ছোট অনেক সংস্থা ও গ্রুপগুলো শীতের আগে থেকেই ফান্ড তৈরি করছে অসহায়দের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করার জন্যে। নীলাঞ্জনার মন ছুটে যায় তুলতুলির কাছে, ওরা আর আসবেনা এটা জানতে পারলে আগেই কিনে দিত। এখন কোন উপায় খুঁজে পায়না। বারান্দায় দাঁড়িয়ে তুলতুলির কথা ভাবছে, হঠাৎ চোখের কোনায় ভেসে উঠে অনেকগুলো ছোট ছোট মুখ, যারা শীতের কাপড়ের অভাবে কাঁপছে, রাস্তার পাশে খড়কুটো খুঁজে খুঁজে আগুন জ্বালিয়ে একটু উষ্ণতা পেতে যাচ্ছে। তখনি নীলাঞ্জনা ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে আসে, সাথে সাথে যোগাযোগ করে ঐ গ্রুপের সাথে, নিজের সামর্থ্যে থাকা কিছু নগদ অর্থ তুলে দেয় ওদের হাতে। এইভাবে ফান্ডে অনেক টাকা জমা হতে থাকে। সে টাকা দিয়ে অনেকগুলো শীতের কাপড় কিনে নিয়ে যায় বিভিন্ন গ্রামে। নীলাঞ্জনা বলে দেয় শীতের কাপড়ের সাথে যেন কিছু লাল সুয়েটার কেনা হয়।
নীলাঞ্জনা যেতে পারেনি ওদের সাথে। সবাই শীতবস্ত্র বিতরণ করে শহরে ফিরে আসে। শীতবস্ত্র বিতরণের কার্যক্রম ভিডিও করে টিভিতে দেয়ায় একটা চ্যানেল। নীলাঞ্জনা টিভির সামনে, হঠাৎ দেখতে পায় শীতবস্ত্র নিতে আসা বাচ্চাদের লাইনে তুলতুলিকে দেখা যাচ্ছে। সবার সাথে তুলতুলিও শীতের কাপড় নিচ্ছে। নীলাঞ্জনা বলে উঠে...
-- ঐ যে তুলতুলিকে দেখা যাচ্ছে। তুলতুলির হাতে একটা লাল সুয়েটার আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।