নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বাংলাদেশ-ভারত কিংবা পাক-ভারত ম্যাচ ঘিরে দেশগুলোর ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝে দারুণ উদ্দীপনা নজরে পড়ে। ঠিক একই ধরনের চিত্তচাঞ্চল্যে আফগানিস্তানের মানুষ থেকে শুরু করে ক্রিকেটাররাও নাকি আজকাল অনুভব করেন বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচের আগে। বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে তারা আইসিসি ও টেস্ট খেলুড়ে দেশ গুলো থেকে। এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের জাত চেনাবার অনেক পরে পেয়েছে টেস্ট মর্যাদা। সেই আফগানরা আজকাল টাইগারদের সাথে সব সংস্করণে টক্কর দিচ্ছে সমানে সমান। এটাই কি বাড়তি উত্তেজনার কারণ? হতেও পারে। তাইতো এশিয়া কাপে আজ রাতে শারজায় বাংলাদেশকে কঠিন এক পরীক্ষাই দিতে হবে আফগানদের সামনে।
আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে তারা শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে ৫৯ বল ও ৮ উইকেট হাতে রেখে। যা বলের হিসেবে আফগানদের দ্বিতীয় বড় জয়। তিতা হলেও সত্যটা হচ্ছে, এই ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দল অভিজ্ঞতা ছাড়া আর কোন বিভাগেই এগিয়ে নেই মোহাম্মদ নবীর দলের তুলনায়। আফগানদের বৈচিত্রপূর্ণ বোলিং ও পাওয়ার হিটার ব্যাটারদের বিপক্ষে মাঠে নামবে চোট জর্জরিত, ক্লান্ত ও মাত্র অনেক পদে রদবদল আসা একটা দল।
গত বছর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে নিজেদের হোম গ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার করছে রশিদ-নবীরা। তবে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামেও প্রচুর ম্যাচ খেলে দলটি। মাঠের ব্যাপারটা উঠলে আফগান অধিনায়ক নবী জানান, ‘পিচ কেমন হবে তা জানি না। কখনো ব্যাটিং সহায়ক থাকে আবার কখনো বা স্পিনাররা সহায়তা পায়। তবে আমরা প্রচুর খেলেছি শারজাহ স্টেডিয়ামে।’ এই স্টেডিয়াম যে আফগানিস্তানের হাতের মুঠোর মত চেনে তা পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার। এর আগে এখানে ১৩ টি-২০ খেলে ১০টিতে জয়ের দেখা পেয়েছে আফগানরা। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় এই মাঠে দুটি ম্যাচ খেলেও জয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ দল। তাছাড়া এই সংস্করণে এখন পর্যন্ত ৮টি ম্যাচ হইয়েছে এই দুই দলের মাঝে। যেখানে বাংলাদেশের ৩ জয়ের বিপরীতে আফগানরা ম্যাচ জিতেছে ৫ বার। সর্বশেষ ৫ দেখাতেও জয়ের (৩টি) পাল্লা রশিদ- ভারী নবীদের। শারজাহ পৃথিবীর ছোট মাঠগুলোর মধ্য অন্যতম। আফগান ব্যাটসম্যান হজরতউল্লাহ, গুরবাজ, নাজিবুল্লাহ ও নবীদের হাতে আছে অসামান্য সব শটের ফুলঝুরি। যে স্টাইলে তারা ব্যাটিং করে তাতে এই ছোট মাঠের বাহিরে বল আছড়ে ফেলতে অসুবিধা হবার কথা নয়। অন্যদিকে গত এক বছরে টি-টোয়েন্টির দলগত স্ট্রাইকরেটে টাইগারদের অবস্থান (১১০.৭ ও আফগানদের ১১৯.৫৯) এই আসরের বাকি সব দলের নিচে। তবে টাইগার শিবিরে আশার আলো হয়ে দেখা দিতে পারে এই মাঠের প্রথমে ব্যাটিং করা দলের গড়টা (১৪৩)।
বাংলাদেশ দল অবস্থান করছে দুবাইয়ের হাবতুর সিটির হিলটন হোটেলে। হোটেল রুমের টিভি থাকলেও, এশিয়া কাপের ম্যাচ দেখার উপায় নেই। আফগানদের বিপক্ষে লঙ্কানদের অসহায় আত্মসমপর্ণ তাই টিম রুমে ভিন্ন ব্যবস্থায় জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখেছে টাইগাররা। বিজয়-সাকিবদের দুশ্চিন্তার নতুন কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে দুই দিকেই বল সুইং করাতে পারা বাঁহাতি পেসার ফযল হল ফারুকী। গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে এই পেসার ওয়ানডে সিরিজে গতি ও সুইংয়ের সাথে বাংলাদেশের বিপক্ষে পেয়েছিলেন ৬ উইকেট এরপর দুই টি-২০তে শিকার ৫টি। এই আসরে লঙ্কান মেন্ডিস-আসালাঙ্কাদের যেভাবে ভুগিয়েছেন তাতে টাইগার টিম মিটিংয়ের উল্লেখযোগ্য আলোচনা এই ২২ বছর বয়সী পেসারকে নিয়েই। তাকে নতুন বলে যোগ্য সহায়তা দেন নাভিন উল হক। একই সাথে মুজিব, রশিদ ও নবীরা স্পিনের ভয়ংকর জালতো মেলবেনই মাঝের ওভারগুলোতে।
রশিদ এর নিচে ইকোনমিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭ ম্যাচে ১৪ উইকেট শিকার করেছেন। তাছাড়া নবী ও মুজিবও টাইগার ব্যাটারদের বিপক্ষে পেয়েছেন যথাক্রমে ৫ ও ৭ উইকেট। এই দুজনের ইকোনমি রেটও পাঁচের কিঞ্চিত উপরে। স্পিনে বর্তমানে সেরা দলটির ঘূর্ণির জাদুকরদের সামলানোর দায়িত্বটা থাকবে বাংলাদেশের তিন অভিজ্ঞ সাকিব, মুশফিক ও রিয়াদের কাঁধেই। এই প্রতিপক্ষেরর বিপক্ষে ৭ ম্যাচে প্রায় ২৫ গড়ে ১৪৯ রান করে মুশফিকই আছেন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শীর্ষে । এদিকে ক্রিকেট ধারভাষ্যকার ও সাবেক ব্যাটসম্যান সঞ্জয় মাঞ্জরেকার সবমিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং গভীরতাকে কিছুটা এগিয়ে রাখছেন, ‘টি-টোয়েন্টির ভাগ্য আসলে নির্ভর করে ব্যাটিং গভীরতার উপর। আফগানিস্তানের হয়তো ব্যাটিং গভীরতা ততটা বেশি না। এই জায়গাটায় পিছিয়ে থাকবে ওরা। সেটা আছে বাংলাদেশের। সাকিব আল হাসান নেতৃত্ব ফিরেছে, বাংলাদেশ দল ভালো করবে।’
সর্বশেষ ১১ ম্যাচে মাত্র ২টি জয় নিয়ে এশিয়া কাপে এসেছে বাংলাদেশ। চোটের জন্য পাচ্ছে না লিট দাস ও নুরুল হাসানের মত দুইজন নিয়মিত ক্রিকেটারকে। এরপরও মেহেদী মিরাজ বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের অভিজ্ঞতাকে সামনে রাখলেন, ‘একটা জিনিস দেখেন, ওদের বোলিং আক্রমণ খুবই ভালো। আমাদের ব্যাটসম্যানরাও অনেক ভালো। শেষ কয়েক দিন আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি ওদের বোলারদের নিয়ে। ওদের যে কয়জন বোলার আছে, তাদের কীভাবে খেলতে হবে, এটা নিয়ে সবাই পরিষ্কার।’ টাইগারদের টি-টোয়েন্টির নতুন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর শ্রীরাম আফগান স্পিনের কথা মাথায় রেখে চেন্নাই থেকেও দুইজন রিস্ট স্পিনার উড়িয়ে নিয়েছেন দুবাইয়ে। অনুশীলনে এই দুইজনের সাথে রিশাদ হাসানকে খেলেই প্রস্তুতি সারছে সাকিবের দল। গত সিরিজেও ব্রাত্য থাকা শেখ নাঈম ও সাব্বির রহমানের সামনে সুযোগ চলে আসতে পারে এই ম্যাচের একাদশে থাকার। সঙ্গে দীর্ঘদিন পরে দলে ফিরছেন চোতকে হারানো মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ফেনীর এই অলরাউন্ডার দুই ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন পূর্বে, ব্যাট-বলে হতে পারেন এই ম্যাচের এক্স ফ্যাক্টর। টাইগার একাদশের আরেক পেসার নিঃসন্দেহে মুস্তাফিজুর রহমান। শারজাহর গত এক বছরের পরিসংখ্যান বলছে স্পিনাররাই উইকেট পাওয়া ও রান আটকানোতে পেসারদের চেয়ে এগিয়ে এই মাঠে। এই ম্যাচ দিয়েই মাহমুদউল্লাহ ও মুশির পর ১০০তম আন্তর্জাতিক টি-২০ খেলতে নামবেন টাইগারদের নতুন কাপ্তান সাকিব। এই সংস্করণে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে যেকোন প্রতিপক্ষকে গুড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা অন্য টাইগারদের তুলনায় সাকিবের বহু বেশি। টাইগার ক্রিকেটপ্রেমীদের ধারণা আফগানবধের মন্ত্র লুকিয়ে আছে ‘বাংলাদেশের জান ও প্রাণ’ সাকিব আল হাসানেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।