Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কুরআন মজীদে মোহর বিধান ও শিক্ষা-২

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : এবং তোমরা নারীদের দাও তাদের মোহর খুশিমনে। এরপর তারা যদি স্বেচ্ছায় সাগ্রহে ছেড়ে দেয় কিছু অংশ তোমাদের জন্য তাহলে তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করো। (সূরা নিসা : ৪)।
এই আয়াতের প্রধান কয়েকটি শিক্ষা ও বিধান এই : ১. মোহর আদায় করা ফরয। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা মোহর আদায়ের আদেশ করেছেন। ২. মোহর সম্পূর্ণরূপে নারীর প্রাপ্য। তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া অন্য কারো তাতে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। সুতরাং স্বামী যেমন স্ত্রীকে মোহর থেকে বঞ্চিত করতে, কিংবা পরিশোধ করার পর ফেরত নিতে পারে না তেমনি পিতা-মাতা, ভাই-বোন বা অন্য কেউ নিজ কন্যার, বোনের বা আত্মীয়ার মোহর তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া নিতে পারে না। নিলে তা হবে কুরআনের ভাষায় ‘আক্ল বিল বাতিল’ তথা অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করা।

৩. মুমিনের কর্তব্য খুশিমনে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে স্ত্রীর মোহর আদায় করা। কারো অনুরোধÑ উপরোধ বা জোর-জবরদস্তির অপেক্ষায় থাকা কুরআনী শিক্ষার পরিপন্থী ও অতি নিন্দনীয় প্রবণতা। ৪. স্ত্রী যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয় কিংবা গ্রহণ করার পর স্বামীকে উপহার দেয় তাহলে স্বামী তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করতে পারবে। ৫. পূর্ণ মোহর ছেড়ে দেয়ার বা পূর্ণ মোহর স্বামীকে উপহার দেয়ারও অধিকার স্ত্রীর রয়েছে, তবে সাধারণ অবস্থায় পূর্ণ মোহর না দিয়ে কিছু অংশ দেয়াই ভালো। ৬. স্বামী যদি চাপ দিয়ে বা কৌশলে পূর্ণ মোহর বা কিছু অংশ মাফ করিয়ে নেয় তাহলে আল্লাহর বিচারে তা মাফ হবে না। (তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/৪৪২; বয়ানুল কুরআন ২/৯৩)।

মোহর নারীর অধিকার। তা আদায় করতেই হবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন : হে মুমিনগণ! ঈমানদার নারীরা যখন তোমাদের নিকট হিজরত করে আসে তখন তাদের পরীক্ষা করো। আর আল্লাহই সম্যক অবগত তাদের ঈমান সম্পর্কে। যদি তোমাদের মনে হয় যে, তারা মুমিন তাহলে কাফিরদের নিকট তাদের ফেরত পাঠিও না। না এই (মুমিন) নারীরা বৈধ ওদের জন্য আর না ওরা বৈধ এদের জন্য। (তবে) কাফিররা যা খরচ করেছে তা তাদের ফিরিয়ে দিও। এই নারীদের বিয়ে করলে তোমাদের কোনো অপরাধ হবে না যদি তোমরা আদায় করো তাদের মোহরানা। ...... (সূরা মুমতাহিনা : ১০)।

এই আয়াত হুদায়বিয়ার সন্ধির প্রেক্ষাপটে নাযিল হয়েছে এবং সন্ধিকালীন পরিস্থিতির কিছু বিধানও তাতে বর্ণিত হয়েছে। বিস্তারিত আলোচনা তাফসিরের কিতাবে দেখা যেতে পারে। এখানে মোহর সংক্রান্ত শিক্ষা ও বিধানগুলো আলোচনা করছি। এই আয়াতেও মোহরকে ‘আজ্র’ বা বিনিময় বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, নারীর সাথে সম্বন্ধ করে বলা হয়েছে ‘তাদের বিনিময়’। অন্যান্য আয়াতেও এ দু’টি বিষয় পাওয়া যায়। এই শব্দ ও উপস্থাপনা থেকেও বোঝা যায়, মোহর নারীর প্রাপ্য অধিকার। সুতরাং তা পরিশোধ করা অপরিহার্য। এই আয়াতে তৃতীয় যে বিষয়টি আছে তা হলো, বিবাহবন্ধনকে মোহর আদায়ের সাথে শর্তযুক্ত করে বলা হয়েছে, ‘এই নারীদের বিয়ে করলে তোমাদের অপরাধ হবে না যদি তোমরা আদায় করো তাদের মোহরানা।’ এটিও মোহরের অপরিহার্যতা প্রমাণ করে।

স্ত্রীর ভরণ-পোষণকে অজুহাত বানিয়ে অনেকে মনে করে যে, তাঁর সব খরচই তো বহন করছি, কাজেই আলাদা করে মোহর না দিলে কী হয়? কিংবা তার সব খরচই যখন এখান থেকে হচ্ছে তো মোহরের তার কী প্রয়োজন?! এটা শয়তানের ওয়াসওয়াসা। মোহর ও ভরণ-পোষণ দু’টি আলাদা দায়িত্ব। সুতরাং দুটোই স্বামীকে বহন করতে হবে। একটির অজুহাতে অন্যটি পালন না করার সুযোগ নেই। আর স্ত্রী তার মোহর দিয়ে কী করবেÑ সেটা তার ইচ্ছা। যে কোনো জায়েয খাতে সে তা ব্যয় করতে পারে। স্বামীর কর্তব্য হচ্ছে মোহর পরিশোধ করা। এরপর স্ত্রী যদি অনুগত ও বুদ্ধিমতি হয় তাহলে নিশ্চয়ই স্বামীর সাথে পরামর্শ করেই তা খরচ করবে।

কারো মনে হতে পারে, জীবনে তো কত কিছুই স্ত্রীকে দিয়েছি। সবকিছু তো আমার ওপর অপরিহার্যও ছিল না। সুতরাং বিয়ের সময় সামান্য যে ক’টি টাকা ধার্য করা হয়েছিল তা নিয়ে এত চুলচেরা হিসাব-নিকাশের কী প্রয়োজন? এই ধারণাও ঠিক নয়। মোহর আদায়ের নিয়ত ছাড়া নিছক উপহার হিসেবে যা কিছু দেয়া হয় তার দ্বারা মোহর আদায় হয় না। তেমনি টাকা-পয়সা ও সোনা-রুপা ছাড়া অন্যান্য বস্তু যেমন কাপড়-চোপড়, জমিজমা ইত্যাদি যদি আকদের সময় মোহর সাব্যস্ত করা না হয় তাহলে শুধু মনে মনে মোহরের নিয়ত করাও যথেষ্ট নয়, স্ত্রীর সম্মতিরও প্রয়োজন।

কাজেই উপরোক্ত ভুল ধারণার কোনো অবকাশ নেই। আর পাওনাদারের পাওনা পরিশোধের ক্ষেত্রে চুলচেরা হিসাব করা দোষের বিষয় নয়; বরং হক্ব আদায়ে সতর্কতার কারণে হলে তা প্রশংসনীয়ও বটে। তেমনি পাওনাদারও যদি চুলচেরা হিসাব করে পাওনা বুঝে নিতে চায় তাহলেও তার নিন্দা করার অবকাশ নেই। কারণ এটা তার অধিকার। তবে কুরআন-হাদিসে উভয় পক্ষকেই সহজ ও উদার হওয়ার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।



 

Show all comments
  • Nazimuddin Uddin Tito ৩০ আগস্ট, ২০২২, ৬:৫২ এএম says : 0
    মোহর আল্লাহর বিধান হলেও সেটি ধার্য করার কর্তব্য বর-কনে কিংবা তাদের অভিভাবকদের। আমাদের সমাজে সাধারণত উভয়পক্ষের মুরব্বিরা তা নির্ধারণ করেন। এ ক্ষেত্রে তারা বর-কনে উভয়ের নিকটাত্মীয় মা-বাবা-ভাইবোন ও ভাবী, খালা, ফুফুকে প্রদত্ত মোহরের সঙ্গে তুলনা করে সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এটি নির্ধারণ করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • ROMJAN LOSKAR ৩০ আগস্ট, ২০২২, ১১:২৪ এএম says : 0
    মোহরানা একটি শরীয়তের বিধান। এখানে মানুষের মনগড়া সামাজিকতার স্থান নেই। কারো মধ্যে তাকওয়া থাকলে সে এটা নিয়ে কোনো চাতুরীর আশ্রয় নিবে না। তাই সব সামাজিকতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আমাদের উচিত বর-কনে এবং তাদের অভিভাবকদের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে এবং বরের বর্তমান আর্থি ক অবস্বা ও সামর্থ্য বিবেচনায় নিয়ে মোহরানা নির্ধারণ করা ও নগদে পরিশোধ করা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন