Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মংডুতে ফের সেনা তান্ডব

| প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কফি আনানের পরিদর্শনকৃত এলাকার নদীতে ভাসছে লাশ
মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ : এদিকে মংডুর রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জনপদে কফি আনান পরিদর্শন শেষে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ফের তা-ব চালাচ্ছে। আর সীমান্তে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে নেমেছে সে দেশের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। গত বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তাদের গুলিতে প্রায় ৬০ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। আটক হয়েছে ৯০ জন।
জানা গেছে, প্রতিনিয়ত নাফ নদে রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুবাহী নৌকায় নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে তারা। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ও ভয়ে নৌকা থেকে লাফিয়ে পড়ে পানিতে ডুবে মারা গেছে কমপক্ষে ৬০ জন। নৌকা থেকে লাফ দেয়ার পর কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক রোহিঙ্গা যুবক প্রতিবেদককে কাছে এমন মর্মান্তিক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। সীমান্তের ওপার থেকেও এমন তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।
নাফ নদের ওপারের বাসিন্দা ও এপারে অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমারের মংডুতে সে দেশের সেনাবাহিনীর তা-ব থেকে বাঁচতে হাজারো রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষ নাফ নদের ওপারে অবস্থান করছে। নদের উভয় তীরে থাকা দুই দেশের দালালরা অর্থের বিনিময়ে তাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছে।
বরইতলী এলাকার দালাল নুরুল আলম বিয়াই জানান, শুক্রবার রাতে নাফ নদের মিয়ানমার অংশ থেকে একটি বড় নৌকা বোঝাই হয়ে লোকজন নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য রওনা হয়। নৌকাটি লক্ষ্য করে বিজিপি সদস্যরা উপর্যুপরি গুলি চালাতে থাকে। নদের ধারে বাড়ি হওয়ায় তিনি স্পষ্টই গুলির শব্দ শুনতে পান। আর তিনি নদের ওই অংশে সারি সারি লাশ ভাসতে দেখেন। পরে তিনি ও স্থানীয় অনেকে গণনা করে ভাসমান অবস্থায় কমপক্ষে ৬০টি লাশ দেখতে পেয়েছেন।
তিনি আরো জানান, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে বিজিপি ৬৬ জনকে আটক করে মংডু শহরে নিয়ে গেছে বলে তিনি শুনতে পেয়েছেন। এছাড়া বরইতলী এলাকার মো: উল্লাহ, সাদেক, সেলিম নামে ৩ দালালকে আটক করেছে মিয়ানমারের বিজিপি।  
এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, বুধবার রাত ৮টায় নাফ নদের মিয়ানমার প্রান্ত থেকে একটি নৌকাযোগে অনেক শিশু, নারী ও পুরুষ বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয়। দুই ছেলে সলিম উল্লাহ (১৮) ও সালামত উল্লাহ (১৪) নিয়ে তিনিও ওই নৌকায় ছিলেন। নৌকাটি সামনের দিকে আধকিলোমিটার এগোনোর পর হঠাৎ গুলির শব্দ শোনা যায়। গুলি ছুড়তে ছুড়তে নৌকাটির দিকে স্পিডবোট ছুটে আসতে থাকে। এ সময় নৌকার আরোহীদের অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়। তিনি অন্ধকারের মধ্যেই দেখেন, গুলিবর্ষণকারীরা বিজিপির সদস্য। উপর্যুপরি গুলিবর্ষণের মুখে তাদের বহনকারী নৌকাটি আংশিক ডুবে গিয়ে পানি প্রবেশ করতে থাকে। এ সময় অনেকেই নাফ নদে লাফিয়ে পড়ে। আবার শিশুসহ কেউ কেউ নৌকায়ই রয়ে যায়। তিনিও নদে লাফ দেন। ওদিকে বিজিপি সদস্যরা কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে নৌকাটি তাদের স্পীডবোটের সঙ্গে বেঁধে মিয়ানমারের দিকে নিয়ে যায়। নৌকাটি বিজিপি নিয়ে গেলেও যারা নদে লাফ দিয়েছিল তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা ইমাম হোসেন জানেন না। তবে তাকে উদ্ধার করেছে নাফ নদে মাছ ধরার একটি নৌকা। ওই নৌকার মাঝি রশিদ আহমদ তাকে টেকনাফের কেরুনতলী এলাকার একটি বাড়িতে পৌঁছে দেন। ওই বাড়িতেই বৃহস্পতিবার উদ্ধার হওয়া ইমাম হোসেনের সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়। তার দুই ছেলে সলিম উল্লাহ ও সালামত উল্লাহর ভাগ্যে কী ঘটেছে তা তিনি জানেন না।
বিজিপির গুলিতে ৬০ জনের মৃত্যু এবং ৬৬ জনকে আটকের বিষয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ভাসমান লাশের মধ্যে কতজন গুলিবিদ্ধ আর কতজন পানিতে ডুবে মারা গেছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যও পাওয়া যায়নি।
নাফ নদে গুলির শব্দের বিষয়ে জানতে চাইলে কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লে. নাফিউর রহমান বলেন, প্রতি রাতে লোকজনের কাছে নাফ নদে চিৎকার হচ্ছে শুনে একটি টিম পাঠানো হয়। কিন্তু কোস্টগার্ড টিম গিয়ে কোনো রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকা পায়নি। রোহিঙ্গারা অন্য স্থানে সরে গেছে বা তাদের বিজিপি নিয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি নিজে গুলির শব্দ শুনিনি, তবে স্থানীয়রা শুনেছে বলে জানিয়েছে।
রোহিঙ্গা বোঝাই ৪টি নৌকা ফেরত
এদিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নাফনদী পার হয়ে তিনটি পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে রোহিঙ্গা বহনকারী চারটি নৌকাকে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি সদস্যরা। শনিবার ভোরে তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিল।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল ছিদ্দিকী জানান, ভোরে নাফ নদীর পার হয়ে সীমান্তের তিনটি পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা বহনকারী চারটি নৌকা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছিল। এসময় বিজিবির টহল দলের সদস্যরা তাদের বাধা প্রদান করে। পরে তাদের ফেরত পাঠায়।
তিনি আরো জানান, যেসব পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা বার বার অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে সেসব পয়েন্টে বিজিবির আরো নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এদিকে ৯ অক্টোবর মিয়ানমারে নতুন করে সহিংসতার পর থেকে রাখাইন সৈন্যদের নির্যাতনের কারণে পালিয়ে আসা প্রায় ১২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
ফিশিং ট্রলার লক্ষ্য করে মিয়ানমারের গুলি
সেন্টমার্টিনদ্বীপের মাছ ধরার ফিশিং ট্রলার ও জেলেকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করেছে মিয়ানমারের নৌবাহিনী। এসময় সেন্টমার্টিনদ্বীপের বাসিন্দা শামসুল আলমের ছেলে মোহাম্মদ আলম (৩০) গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন। ৩ ডিসেম্বর ভোররাতে প্রতিদিনের ন্যায় সেন্টমার্টিনের পূর্ব পাড়ার আব্দুল হাসিমের ছেলে মোহাম্মদ আজিমের ফিশিং ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরের মাছ শিকারে যায়।
ঐসময় কিছু বুঝার আগে বাংলাদেশ সমুদ্র সীমানায় মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজ তাদেরকে পেছন থেকে ধাওয়া করে এবং এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। জেলেরা প্রাণে রক্ষাতে পালিয়ে আসে এবং আহত জেলেকে দ্রুত উদ্ধার করে সেন্টমার্টিন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। সেন্টমার্টিনদ্বীপের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুর রব বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ