বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
একজন মুসলমানের জন্য ঈমানের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদত হচ্ছে নামাজ। কোরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় ঈমানের পরেই নামাজের কথা বলা হয়েছে। সূরা বাকারার শুরুতেই ইরশাদ হয়েছে : ‘এটি সেই কিতাব; এতে কোনো সন্দেহ নেই। মুত্তাকীদের জন্য পথপ্রদর্শক। যারা ঈমান রাখে গায়বের প্রতি, নামাজ আদায় করে এবং আমি তাদের যা দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে।’ (সূরা বাকারা : ২-৩)।
হাদীস শরীফে এসেছে : ‘ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি : ১. সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। ২. নামাজ আদায় করা। ৩. যাকাত প্রদান করা। ৪. হজ্ব করা। ৫. রমযানের রোজা রাখা।’ (সহিহ বুখারী ১/৬)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাতে যখন কেউ ইসলাম গ্রহণ করত তখন তিনি তাকে সর্বপ্রথম নামাজের অঙ্গীকার করাতেন। নবী (সা.) পূর্বের নবী-রাসূলগণও তাওহীদের পরেই নামাযের আদেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে : ‘তাদেরকে তো আদেশ করা হয়েছিল একনিষ্ঠভাবে ইখলাসের সাথে আল্লাহর ইবাদত করতে এবং নামাজ কায়েম করতে ...।’ (সূরা বায়্যিনাহ ৫)।
নামাজের অগণিত ফজিলতের মধ্যে একটি হচ্ছে নামাজ মানুষকে অন্যায় ও গোনাহ থেকে রক্ষা করে। ইরশাদ হয়েছেÑ ‘নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সূরা আনকাবূত : ৪৫)। এখানে প্রশ্ন হয়ে থাকে, নামাজ তো আমাদের গোনাহ থেকে হেফাযত করে না? এর উত্তর উক্ত আয়াতের মধ্যেই রয়েছে। বলা হয়েছে যে, ‘অবশ্যই আল্লাহর যিকর (স্মরণ) সবচেয়ে বড়’। এ অংশে আল্লাহতায়ালা গোনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখার প্রকৃত রহস্য বলে দিয়েছেন।
অর্থাৎ অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরতকারী হচ্ছে আল্লাহর স্মরণ। যার নামাযে আল্লাহর স্মরণ যত বেশি হবে নামাজ তাকে তত বেশি গোনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। আমাদের নামাজ সম্পর্কে যদি চিন্তা করি. তাহলে আমাদের নামাজের প্রকৃত অবস্থা নিজেরাই অনুধাবন করতে সক্ষম হব। আমাদের তো গাফলতের কারণে এমনই অবস্থা যে, অনেক সময় নামাজের শেষে মনেও করতে পারি না যে, কোন কোন সূরা পড়েছি। আর মোটামুটি খেয়াল করে নামাজ পড়লেও আমরা কি খেয়াল করি যে, আমার রবের সাথে আমার কী কী কথোপকথন হলো? এগুলো চিন্তা করলেই আমরা বুঝে যাব এই ফজিলত লাভের আমরা কতটুকু হক্বদার।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা কি বলতে পার যদি তোমাদের কারো দরজার সামনে একটি নদী থাকে আর সে ওই নদীতে পাঁচবার গোসল করে, তাহলে তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকবে? সাহাবীগণ উত্তর দিলেন, তার শরীরে কোনো ময়লা থাকবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও ঠিক এমনই। আল্লাহতায়ালা এর দ্বারা গোনাহগুলো ধুয়ে মুছে ছাফ করে দেন।’ (সহীহ বুখারী ১/৭৬)।
হযরত উছমান (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, যখন নামাযের ওয়াক্ত উপস্থিত হয় তখন যে মুসলিম সুন্দরভাবে অজু করে খুশু-খুযূর সাথে উত্তমরূপে নামাজ আদায় করে, তার কবিরা গোনাহ ছাড়া পূর্বের সকল গোনাহ মাফ হয়ে যায়। আর এ রকম সর্বদাই চলতে থাকে। (সহীহ মুসলিম ১/১২১)। অর্থাৎ প্রতি নামাজেই এভাবে গোনাহ মাফ হতে থাকে।
নামাজের তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। মাসায়েল মোতাবেক নামাহের রোকনগুলো আদায় করার পাশাপাশি অন্তরের ইখলাস ও খুশু-খুযূ এবং নামাজের প্রতি মুহাববত নামাযের পূর্ণাঙ্গতার জন্য অপরিহার্য। এই পূর্ণাঙ্গ নামাজের মাধ্যমে স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির নিকটতম সম্পর্ক তৈরি হয়। আল্লাহতায়ালার নৈকট্য ও মুহাববত লাভের এবং প্রেমাষ্পদের সঙ্গে যোগাযোগ ও কথোপকথনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম নামাজ। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন : ‘আমাকে স্মরণ করার জন্য নামাজ পড়।’ (সূরা ত্বহা : ১৪)।
এক হাদীসে কুদসী থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহতায়ালার নৈকট্য ও মুহাববত সবচেয়ে বেশি নামাজের মাধ্যমে, বিশেষত নফল নামাজের দ্বারা অর্জিত হয়। এজন্য নামাজ সঠিকভাবে আদায়ের সাথে সাথে অন্তরে নামাযের প্রতি মুহাববত ও ভালবাসা তৈরি করা জরুরি। নামাজের প্রতি মুহাববতের কারণেই আল্লাহর প্রকৃত নেক বান্দাগণ যখন নামাজে দাঁড়ান, তখন তাদের দিলের সব অস্থিরতা ও পেরেশানি দূর হয়ে যায়। হৃদয় ও মন শান্ত ও প্রশান্ত হয়। দিলে সুকূন ও সাকীনা অনুভব করেন। অপরদিকে কোনো কারণে নামাজ আদায়ে বিলম্ব হলে কিংবা কোনো অসুবিধা হলে তারা অস্থির ও বিচলিত হয়ে পড়েন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।