Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিনিয়োগকারীদের হতাশার কারণ হতে পারে

| প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ায় চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বাজার। এতে করে মৌলভিত্তিসম্পন্ন শেয়ারের দাম ও লেনদেন বাড়ছে। তবে বিনিয়োগকারীদের জন্য হতাশায় বিষয় সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই কিছু দুর্বল কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে। এছাড়া কিছু কোম্পানির আগাম মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আগেই জেনে যাচ্ছেন মুষ্টিমেয় বিনিয়োগকারী। তারা অতিরঞ্জিত করে ওই তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছেন শেয়ারবাজারে। এতে করে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে। তবে এই ধরনের কোম্পানির শেয়ারদর বেশদিন বাড়তি অবস্থানে থাকে না। পরে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বাঁচানো নিয়ে সংকটে পড়তে হয়।
এই বিষয়ে শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে লেনদেন বাড়ছে। এটি অবশ্যই ইতিবাচক। এর অর্থ হল বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। তবে দুর্বল মৌলভিত্তির কিছু কোম্পানির শেয়ারের দামও বাড়ছে। দুর্বল কোম্পানির ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এদিকে বিএসইসি বলছে, এ ব্যাপারে বাজারে তাদের যথেষ্ট নজরদারি রয়েছে।
তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রায় ২০ টা কোম্পানির শেয়ার দর ওঠানামায় বেশ অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে। ১৮ অক্টোবর সোনালী আঁশের শেয়ার দর ছিল ১৫৯ দশমিক ৩ টাকা। এর ৫ কার্যদিবস পর ৪৭ দশমিক ৬ টাকা বেড়ে ২৫ অক্টোবরে দাঁড়ায় ২০৬ দশমিক ৯ টাকায়। এই দর গত এক বছরের মধ্যে সর্Ÿোচ্চ। এই কোম্পানির এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন শেয়ার দর নেমেছিল ১১২ টাকা। গত বৃহস্পতিবার আবার তা ১৯১ টাকায় ফিরেছে। সোনালী আঁশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সম্প্রতি তাদের কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার পেছনে কোন অপ্রকাশিত মূল্যসংবেদনশীল তথ্য নেই।
সম্প্রতি মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে। গত ১৭ নভেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৩৭ দশমিক ৭ টাকা। ১ ডিসেম্বর লেনদেন শেষে ৫২ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ড্রাগণ সোয়েটারের শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণে ৭১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১৫ নভেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৯ দশমিক ৪ টাকা। যা ৮ কার্যদিবস পর ১৬ দশমিক ১ টাকায় পর্যন্ত উঠেছিল। বর্তমানে আবার ১৪ টাকায় অবস্থান করছে।
ঝিল বাংলা সুগার মিলসের শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় বর্তমানে কোম্পানির শেয়ার দর ২৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত ২২ নভেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ১৬ টাকা। ৪ অক্টোবর স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের শেয়ার দর ছিল ৫০ দশমিক ১ টাকা। যা ৮ কার্যদিবসে ২০ দশমিক ২ টাকা বেড়ে ১৮ অক্টোবর দাঁড়ায় ৭০ টাকায়। বর্তমানে আবার তা ফিরে এসেছে ৫৯ টাকায়। এদিকে ৪ অক্টোবর দেশ গার্মেন্টসের শেয়ার দর ছিল ২২৯ টাকা। যা ২১ কার্যদিবসে ১০১ টাকা বেড়ে ১ ডিসেম্বর দাঁড়িয়েছে ৩৩০ টাকায়।
খাদ্য খাতের কোম্পানি গোল্ডেন হারভেস্ট কোম্পানি শেয়ার লেনদেন ও দরের ওঠানামা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত এক মাসে শেয়ারটির দর ২৪ টাকা থেকে বেড়ে ৪২ টাকা ছাড়িয়েছে। কোম্পানিটির পর্ষদ গত হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পর এর লভ্যাংশ নেয়ার জন্য রেকর্ড ডেটও শেষ হয়েছে। তার পরও বাড়ছে শেয়ারটির দর। ডিএসইতে বুধবার এ কোম্পানির ২০ কোটি ৩১ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, গত দুই মাসে শেয়ারটির লেনদেন ১০ গুণ বেড়েছে। শুধু গতকালই শাশা ডেনিমস লিমিটেডের শেয়ারদর ১০ শতাংশ বেড়েছে। দিন শেষে দরবৃদ্ধির তালিকায় ১ নম্বরে উঠে আসে বস্ত্র খাতের কোম্পানিটি। বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ডিএসইতে গতকাল এ শেয়ারের সর্বশেষ দর ১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬ টাকায়। এটাই এই কোম্পানি এই বছরের সর্বোচ্চ শেয়ার দর।
এছাড়া আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে সেগুলো হল- আজিজ পাইপ, রহিমা ফুড, জেমিনি সিফুড, কাসেম ড্রাইসেল, শাহজিবাজার পাওয়ার, এপেক্স স্পিনিং এবং খুলনা পাওয়ার কোম্পানি। এর মধ্যে বেশির ভাগ কোম্পানি কাছে জবাব চেয়েছে কর্তপক্ষ। সব কোম্পানিই জানিয়েছে, শেয়ার দর অস্বাবিকভাবে বাড়ার মতো অপ্রকাশিত কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
কিছু কোম্পানির লেনদেনের এমন প্রবণতার জন্য মঙ্গলবারের ৮০০ কোটি টাকার লেনদেনের পর বুধবার ডিএসই’র লেনদেন ৬০০ কোটিতে নেমে আসে। আবার বৃহস্পতিবার ৮০৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এতে প্রায় ১৪ মাস পর সূচকটি আবারও ৪৮০০ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ ৪৮২৩ পয়েন্টে ডিএসসি’র পয়েন্টে। এদিকে গত এক মাসে ডিএসইতে ১৪ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এ হিসাবে ২৩ কার্যদিবসে প্রতিদিনের গড় লেনদেন ৬শ’ কোটি টাকা। এ সময়ে ডিএসই’র মূল্যসূচক প্রায় ১শ’ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৭৯০ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া আলোচ্য সময়ে ডিএসই’র বাজারমূলধন বেড়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। বিশেষ করে বিদেশী এবং বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ৭ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। এ হিসাবে আলোচ্য সময়ে বিদেশীদের লেনদেন ১ হাজার ৩ কোটি টাকা বেড়েছে। শতকরা হিসাবে যা ১৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন জানিয়েছেন, সরকারের বিভিন্ন হস্তক্ষেপের ফলে পুঁজিবাজার এখন স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে আস্থা ফিরেছে। এখন বাজার তার আপন শক্তিতে চলছে। বাজারকে আরো স্থিতিশীল রাখতে দেশব্যাপী বিনিয়োগকারীদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হবে। পাঠ্যবইয়ে পুঁজিবাজার নিয়ে রচনা থাকবে বলে জানান তিনি।
পুঁিজবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর আবু আহমেদ বলেছেন, দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে দাম কম দেখে কম পুঁজির মালিকেরা এই ধরনের কোম্পানির শেয়ার বেশি কেনে। এতে করে মাঝে মাঝে শেয়ার দর বেড়ে যায়, আবার কমেও। এটা অনেক সময় বাজারের ভালো ইঙ্গিত দেয় না। এসব ক্ষেত্রে অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য থাকতে পারেও বলে তিনি মন্তব্য করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেয়ারবাজার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ