পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : রোহিঙ্গা মুসলিমদের জাতিগত নিধনের ঘটনায় মিয়ানমার সফরে রয়েছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান। গতকাল তিনি সরেজমিনে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের সামগ্রিক অবস্থা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সেখানকার উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন।
গতকাল (শুক্রবার) সকাল ৮টার দিকে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিটুয়ে’তে পৌঁছান কফি আনান। এ সময় বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান রাখাইন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এ সময় বিমানবন্দরের বাইরে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন কয়েকশ’ বিক্ষোভকারী। তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘কফি আনান কমিশন নিষিদ্ধ কর’, ‘আমরা কফি আনান কমিশন চাই না’ ইত্যাদি। এর আগেও মিয়ানমার সফরকালে দেশটির উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের এমন বিক্ষোভের মুখে পড়েন জাতিসংঘের সাবেক এ মহাসচিব।
শুক্রবারের বিক্ষোভে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের একজন বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে যা ঘটছে সেটা আমাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এখানে আমরা বিদেশিদের হস্তক্ষেপ চাই না।’
বিক্ষোভে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন মং খিন নামের একজন কৃষক। তিনি বলেন, ‘রাখাইন ইস্যু একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে আমরা বাইরের কারও হস্তক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি না। আমাদের এর প্রয়োজন নেই।’
এমন প্রতিবাদের কারণ সম্পর্কে কথা বলেন মিয়ানমারের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ কমিটির চেয়ারপারসন ইউ থান তুন। তিনি বলেন, আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি কারণ কমিশন এখনও ‘বাঙালি’দের জন্য ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ ব্যবহার করে।
এদিকে কফি আনানের এ সফরের প্রেক্ষিতে মিয়ানমারে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি। সফরে কফি আনানের সঙ্গে তার নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা রাখাইন রাজ্যে (আরাকান) স্থানীয় মুসলমানদের গণহত্যার স্থান পরিদর্শন করেন। সরকারিবাহিনীর অগ্নিসংযোগ করা ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তূপ পরিদর্শন করেন। কথা বলেন নির্যাতনের শিকার মানুষজনের সঙ্গে।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বিষয়ক কমিশনের দায়িত্ব পাওয়ার পর দেশটিতে এটা তার দ্বিতীয় সফর। এর আগে অব্যাহত রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনায় গত সেপ্টেম্বরে দেশটি সফর করেন কফি আনান। গত ১৬ নভেম্বর এক বিবৃতিতে কফি আনান রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ জানান। এ সময় তিনি মিয়ানমারের সেনাদের হাতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মিয়ানমার সরকার অবশ্য এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছে। দেশটির দাবি, ‘সন্ত্রাসী’দের খুঁজতে সেখানে অভিযান চালানো হচ্ছে।
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মাত্রায় যে জাতিগত নিধন চালাচ্ছে সংবাদমাধ্যমেও তার সরেজমিন বিস্তারিত প্রতিবেদন আসছে না। কারণ রাখাইন রাজ্যে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে রোহিঙ্গা নিপীড়নের ব্যাপারে সরেজমিনে তদন্ত করতে চায় এই কমিশন। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার মিয়ানমার সফরে যান জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সদস্যরা। এ কমিশনে মিয়ানমারের ছয়জন এবং কফি আনানসহ তিনজন বিদেশি প্রতিনিধি রয়েছেন। রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তীব্র আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি এই কমিশন গঠনে বাধ্য হন।
মিয়ানমারের সেনাদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর হত্যা, ধর্ষণ, গণধর্ষণের মতো বর্বরোচিত অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ জানিয়েছে, প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে রোহিঙ্গাদের বহু গ্রাম। জাতিসংঘের হিসাবে, চলমান সহিংসতায় শুধু বাংলাদেশেই আশ্রয় নিয়েছেন কমপক্ষে ১০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী। এদিকে দেশটিতে অব্যাহত রোহিঙ্গা নির্যাতন ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে’র শামিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা। সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করতে মিয়ানমার সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
মিয়ানমার সরকারের হিসাবে, দেশটির রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর চলমান অভিযানে ৮৬ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। বেসরকারি হিসাবে, চলমান সহিংসতায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৪০০ রোহিঙ্গা। চলমান জাতিগত নিধন থেকে জীবন বাঁচাতে রাখাইন রাজ্যের হাজার হাজার রোহিঙ্গার দৃষ্টি এখন বাংলাদেশ সীমান্তে। মাথায় একটাই চিন্তা; কীভাবে নরক থেকে বেরিয়ে আসা যায়?
জাতিসংঘ শরণার্থী-বিষয়ক সংস্থার কর্মকর্তা জন ম্যাককেসিক বলেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশ রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর ‘যৌথ নিপীড়ন’ চালাচ্ছে। জাতিসংঘের হিসেবে সাম্প্রতিক সহিংসতায় ৮৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ।
জাতিসংঘের দাফতরিক সংজ্ঞা অনুযায়ী এথনিক ক্লিনজিং বা জাতিগত নিধন হলো সেই প্রক্রিয়া যার মধ্য দিয়ে ‘হুমকি দিয়ে অথবা শক্তি প্রয়োগ করে কোনও একটি নির্দিষ্ট ভূখ- থেকে কোনও জাতিগত অথবা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে নির্মূল করে অপর কোনও জাতির একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়।’ আর তাদের হত্যা-ধর্ষণ-শিশু নির্যাতন-অগ্নিসংযোগ এবং লুটতরাজ ওই নির্মূল প্রক্রিয়ারই অংশ।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে মিয়ানমার সরকারের মদদপুষ্ট উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধদের তা-বে প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা নিহত হন। ঘর ছাড়তে বাধ্য হন ১ লাখেরও বেশি মানুষ। আর এ বছর অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। আর তখন থেকেই শুরু হয় সেনাবাহিনীর দমন প্রক্রিয়া। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, এরপর থেকেই রাখাইন রাজ্যে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইসলামি চরমপন্থা দমনে কাজ করছেন বলে দাবি করছেন তারা। আর তা এমন কঠোর প্রক্রিয়ায় চালানো হচ্ছে যে সেখানে সংবাদমাধ্যমকেও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
জন ম্যাককিসিক বিবিসিকে বলেন, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে ‘মানুষকে গুলি করে হত্যা করছে, শিশুদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে, নারীদের ধর্ষণ করছে, ঘরবাড়িতে আগুন দিচ্ছে, লুটপাট চালাচ্ছে, নদী পেরিয়ে তাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করছে’।
তিনি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বলা খুব কঠিন যে তারা সীমান্ত উন্মুক্ত করে রেখেছে। কেননা এতে মিয়ানমার সরকারের জাতিগত নিধন প্রক্রিয়াকেই ত্বরান্তিত করা হবে। চূড়ান্ত অর্থে রোহিঙ্গাদের নির্মূল করার লক্ষ্য অর্জিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা হত্যাকা- এবং তাদের বিতাড়ন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবে।’ Ñসূত্র : প্রেস টিভি, রয়টার্স, কোকোনাট ইয়াঙ্গুন, বিবিসি বাংলা, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, সিএনএন
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।