Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

‘শোষিতের গণতন্ত্র’ দর্শন প্রতিষ্ঠার মহাপুরুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু : ভিসি ড. মশিউর রহমান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০২২, ১১:২৫ এএম

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘বিশ্বে শোষিতের গণতন্ত্র দর্শন প্রতিষ্ঠার মহাপুরুষ ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিই প্রথম বলেছেন বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত- শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে। বঙ্গবন্ধু বিশ্বে নতুন অর্থনৈতিক ধারা সৃষ্টির লক্ষে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করলেন। যেটি ছিল বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠার একটি নতুন মাইলফলক।’
রোববার (২১ আগস্ট) বিকালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (আমাই) কর্তৃক আয়োজিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০২২ উপলক্ষে ‘১৫ আগস্ট ২০২২ : শোক থেকে শক্তির ক্রম-উত্থান’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘পঞ্চম শতকেরও আগে, এমন কি মৌর্য কালেরও আগে প্রাচীন বাঙলার জনপদেরা সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করিত, তাদের সমাজ ছিল, রাজা ছিল, রাষ্ট্রও ছিল। তারও আগে যখন রাজা ছিল না, কৌম সমাজ ছিল, ইতিহাসের সেই উষাকালে সেই সমাজেরও একটা শাসনপদ্ধতি ছিল। এই যে পৃথক পৃথক উপজাতি থেকে মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করছে। সেই সমাজেও নেতৃত্ব ছিল। বাঙালির একটি পৃথক জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টি হতে পারে। হাজার বছরের যে গ্লানি সেটি কাব্যে, সংগীতে, ইতিহাসে, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও প্রতিফলিত হয়েছে। ইতিহাস চর্চায় সেটি বেরিয়ে এসেছে। এই জনপদগুলোর নেতৃত্ব বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠেছে। এই অঞ্চলের মানুষ সমাজ গঠনের ক্রমবিকাশের ধাপে ধাপে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছে। স্বকীয়তার স্বপ্ন দেখেছে। একই সঙ্গে বঞ্চনা আর নিপীড়নের শিকার হয়েছে। এই বঞ্চনা আর নিপীড়নের শিকার হওয়ার যে বাস্তবতা সেটির মধ্য থেকেই নানা সময়ে সংগ্রামী মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে। সেটি আমরা ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে শুরু করে অতীত ইতিহাসে যেমন দেখি, প্রাচীন ইতিহাসেও তেমনটি দেখি। এটির ধারাবাহিকতায় সাহিত্যে, সংস্কৃতিতে, রাজনীতিতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের সকলের ভাবনাকে সম্মিলিত করে এই রাজ্যের মানুষের জন্য এক মহামানব তৈরি হয়েছিলেন। তিনিই জাতিরাষ্ট্রের স্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর অনন্য গুণ হলো তিনি সকল মানুষকে এক সঙ্গে নিয়ে আসতে পারতেন। সাধারণ মানুষের যে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা সেটিকে ধারণ করে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র সবকিছুকে ছাড়িয়ে একটি সত্তায় বাঙালিকে আনলেন। সেটির নাম বাঙালি জাতীয়তাবাদ। বাঙালি জাতীয়তাবাদের মধ্যে যে স্বকীয়তা সেটি পাকিস্তান জাতীয়তাবাদে ছিল না। ’

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বিশিষ্ট এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা একে অন্যের সঙ্গে হাত মেলালেন শুধু ক্ষমতা গ্রহণের জন্য নয়, মূলত তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রব্যবস্থাকে মনে প্রাণে চায়নি বলে ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করেছে। কিন্তু তারা জানতো না একজন ক্যারিশমেটিক লিডারকে হত্যা করা যায় না। তারা জানতো না তিনি কোন রূপে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসবেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন অনেক বেশি শক্তি এবং সাহস নিয়ে। এখন প্রশ্ন উঠেছে পদ্মা সেতু তৈরিতে বিশ্বব্যাংক কেন অর্থায়ন করেনি। এটি কী শুধুই অর্থনৈতিক কারণ ছিল, নাকি অন্যকিছু। হয়তো এর কুশীলবরা জানতো পদ্মা সেতু হলে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল তীর্থে পরিণত হবে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দিয়ে আত্মমর্যাদার পদ্মা সেতু তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে মানুষের ঢল নেমেছে, তীর্থ স্থানে পরিণত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সমাধি। এ কারণেই শিশু, কিশোর থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের মানুষেরা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে যায়। জাতির পিতার সমাধিকে এক নজর দেখতে যায়। এটি যেন আমাদের শেকড়ের টান।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি ও প্রতিশোধ পরায়ণতা এবং শোষিতের গণতন্ত্রের মতাদর্শের কারণে বঙ্গবন্ধুকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর শোষিতের গণতন্ত্রের মতবাদ পুঁজিবাদী বিশ্বের জন্য অনেক বড় হুমকি ছিল। তার এই মতাদর্শের কারণে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত ও বঞ্চিত মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস। তাই তাঁকে বিশ্ব মোড়লদের অনেকে ভয় ছিল। বঙ্গবন্ধুর রক্তকেও অনেক বেশি ভয় ছিল ঘাতকদের। তাই তাঁর পরিবারের প্রায় সবাইকে হত্যা করে তাঁকে নির্বংশ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তাদের ভয় অমূলক ছিল না। তার প্রমাণ আজকের শেখ হাসিনা। যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল।’

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. হাকিম আরিফের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এম.পি, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ