গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে পাঁচজন নিহত হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান হৃদয় ও রিয়া মনি। দুর্ঘটনায় মারা গেছেন হৃদয়ের বাবা, রিয়ার মা, খালা ও খালাতো ভাই এবং বোন। চোখের সামনে দেখা সেই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি হৃদয় ও রিয়া। রিয়া কিছুটা সুস্থ হলেও হৃদয়ের পায়ে এখনো ব্যাথা আছে। বিভীষিকাময় সেই সময়েরর কথা মনে পরতেই সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায় তাদের। স্তব্ধ হয়ে যায় সব। হাসতে হাসতে চোখের সামনেই শেষ হয়ে যায় সব।
হৃদয় বলেন, এ ঘটনায় আমি আব্বুকে হারিয়েছি। আমি আর মা এখন একা। তবে আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে রিয়ার জন্য, এখন ওর মা বাবা কেউ নেই। একমাত্র ছোট ভাইটাও একা। রিয়া সারাক্ষণই এসব নিয়ে মন খারাপ করে রাখে। কারও সঙ্গে কথাও বলতে চায় না।
গার্ডার চাপায় ৫ জন নিহতের ঘটনায় করা মামলার বাদী ও রিয়ার মামা হাসান মন্ডল বাবু ইনকিলাবকে বলেন, ঘটনার পর থেকে তারা কোন কথা বলতে চায় না। কিছুক্ষণ পর পর কান্না করে। চুপ হয়ে বসে থাকে।
দুর্ঘটনায় তারাও আহত হয়েছিলেন, এখন কেমন আছেন জানতে চাইলে হাসান মন্ডল বলেন, রিয়া শারীরিকভাবে সুস্থ আছে তবে হৃদয়ের পায়ে এখনো ব্যথা আছে।
মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে আর কোন তথ্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব সেটা তো জানেন। তাদের রিমান্ড নিয়েছে।
এই ঘটনার পর আপনাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করেছেন কিনা বা কোন চাপ আসছে কিনা জানতে চাইলে হাসান মন্ডল বলেন, বিআরটির কাজ করছেন চায়না কোম্পানি। তবে আমাদের সাথে তারা কোন যোগাযোগ করেননি। সেতু মন্ত্রণালয় থেকে লোক এসেছিলো। তারা আশ্বাস দিয়েছেন এঘটনায় সুষ্ঠু বিচার হবে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এর আগে হৃদয় বলেন, আমি আর আমার বাবা সামনে ছিলাম। আর পেছনে আমার স্ত্রীসহ বাকিরা ছিলেন। এয়ারপোর্ট রোডে ক্রেনে একটা বক্স গার্ডার ঝুলছিল। আমরা দূর থেকে এটা দেখেছি। একের পর এক গাড়ি এর নিচ দিয়ে চলে যাচ্ছিল। ভাবলাম, আমরাও যেতে পারবো। যখনই পার হতে গেলাম তখনই গার্ডারটা গাড়ির ওপর পড়লো।
তিনি বলেন, আমি বাবার বামপাশে ছিলাম, আমার স্ত্রী পেছনের সিটে বামপাশে ছিলেন। আমার বাবাসহ বাকিরা ডানপাশে ছিলেন। বাবা, রিয়ার মা, খালা ও খালাতো ভাই এবং বোন। তারা সবাই ঘটনাস্থলেই মারা যান
হৃদয় বলেন, ভাবতেও পারিনি এটা আমাদের ওপর পড়বে। ঝুঁকির কাজ রাস্তায় কেন করবে? ঝুঁকি নেই দেখেই তো সেখানে যানবাহন চলছিল। সব গাড়ি যাচ্ছে, এজন্য আমরা রানিংয়ে গাড়ি টান দিয়েছিলাম। ক্রস করার সময় ওইটা গাড়ির ওপর পড়ে। দুই/এক সেকেন্ডের মধ্যেই ক্রেন কাত হয়ে যায়। সেখানে তো আরও গাড়ি থাকতে পারতো।
আমি আর আমার বাবা সামনে ছিলাম। আর পেছনে আমার স্ত্রীসহ বাকিরা ছিলেন। এয়ারপোর্ট রোডে ক্রেনে একটা বক্স গার্ডার ঝুলছিল। আমরা দূর থেকে এটা দেখেছি। একের পর এক গাড়ি এর নিচ দিয়ে চলে যাচ্ছিল। ভাবলাম, আমরাও যেতে পারবো। যখনই পার হতে গেলাম তখনই গার্ডারটা গাড়ির ওপর পড়লো।
তিনি বলেন, আমি বাবার বামপাশে ছিলাম, আমার স্ত্রী পেছনের সিটে বামপাশে ছিলেন। আমার বাবাসহ বাকিরা ডানপাশে ছিলেন। তারা সবাই ঘটনাস্থলেই মারা যান।
ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফেরা হৃদয় বলেন, ভাবতেও পারিনি এটা আমাদের ওপর পড়বে। ঝুঁকির কাজ রাস্তায় কেন করবে? ঝুঁকি নেই দেখেই তো সেখানে যানবাহন চলছিল। সব গাড়ি যাচ্ছে, এজন্য আমরা রানিংয়ে গাড়ি টান দিয়েছিলাম। ক্রস করার সময় ওইটা গাড়ির ওপর পড়ে। দুই/এক সেকেন্ডের মধ্যেই ক্রেন কাত হয়ে যায়। সেখানে তো আরও গাড়ি থাকতে পারতো। সরকারের কাছে এই ঘটনার বিচার চাই যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে।
দুর্ঘটনার পর উত্তরা পশ্চিম থানায় এ দুর্ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অবহেলাজনিতভাবে ক্রেন পরিচালনাকারী চালক, প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রজেক্টের ঠিকাদারি চাইনিজ প্রতিষ্ঠান সিজিজিসি’র দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটে। অবহেলাজনিত কারণ উল্লেখ করে সিজিজিসি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা অভিযোগে বলা হয়।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তিনি এ ঘটনায় শোক এবং নিহতের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
এ সময় চীনের রাষ্ট্রদূত গার্ডার দুর্ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনও আপত্তি থাকবে না বলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবকে জানান।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, ঘটনা তদন্তে কমিটিতে বুয়েটের একজন বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে প্রাইভেট কারে করে আশুলিয়া যাবার পথে উত্তরায় গার্ডারের চাপায় ৫ জন নিহত হন। এ সময় অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান প্রাইভেটকারে থাকা নব দম্পতি রিয়া ও হৃদয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।