পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি/ এ জীবন মন সকলি দাও/ তার মতো সুখ কোথাও কি আছে/ আপনার কথা ভুলিয়া যাও’ (কামিনী রায়)। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষদের একজন হচ্ছেনÑ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। কিছুদিন আগে তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে রয়েছে। দেশের মানুষ থাক না থাক, তিনি বেহেশতেই আছেন। সারাজীবন বিদেশে চাকরি করে দেশে ফিরে অবসর জীবনে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের এমপি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়া এবং প্রতি মাসে দু’তিনবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করা ‘বেহেশতে থাকা’ নামান্তর। তবে তিনি যে কবি কাহিনী রায়ের কবিতার মতোই ‘নিজ দেশের (বাংলাদেশ) স্বার্থ ভুলে গিয়ে মন প্রাণ দিয়ে পরের (ভারত) স্বার্থে কাজ করছেন তা পরিষ্কার হয়ে গেছে।
ড. মোমেনের ‘ভারতকে বলেছি আওয়ামী লীগকে যেভাবেই হোক ক্ষমতায় রাখতে হবে’ এ বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ব্লগ, টুইটার, ইউটিউবে নেটিজেনরা বিতর্কের ঝড় তুলেছেন। দেশের বিভিন্ন দলের নেতারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন মোমেনের বক্তব্যকে। দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত করেছেন ড. মোমনে এমন মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। দেশ বিদেশের গণমাধ্যমে এ নিয়ে খবর গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করা হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেছেন, ‘তিনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) তো আমাদের দলের (আওয়ামী লীগ) কেউ না। আমাদের দল তার এই বক্তব্যে বিব্রত হওয়ার প্রশ্নই আসে না’। আওয়ামী লীগ নেতার এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনরা হাজারো প্রশ্ন ছুঁড়ে জানতে চেয়েছেন ড. মোমেন যদি আওয়ামী লীগের কেউ না হয়ে থাকে, তাহলে কার প্রতিনিধি হিসেবে তাকে মন্ত্রিসভার সদস্য করা হয়েছে? কার স্বার্থে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী করে তাকে সিলেট-১ আসনের এমপি করা হয়েছে? তাকে কি দিল্লির প্রতিনিধি হিসেবে ভারতের স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে? এমন অসংখ্য প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা। জাপার জিএম কাদের বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের দায় সরকার এড়াতে পারে না।
ভাদ্র মাসের তালপাকা গরমে অতিষ্ঠ নাগরিক জীবন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সংসার চালতে হিমশিম খাওয়া মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় দেশের পেশাজীবী অনেক পরিবার নিত্যদিনের খাবার কমিয়ে দিয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট ঢাকা সফরে এসে স্বাধীন কমিশন গঠন করে দেশের গুম, খুনের তদন্তের দাবি করেছেন। একইসঙ্গে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজপথে আন্দোলনকারী দলগুলোর উপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘অতি বলপ্রয়োগ’ না করার পরামর্শ দিয়েছেন। জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়গুলো নিয়ে কয়েকদিন ধরে তোলপাড় চলছে, আলোচনা-সমালোচনা বিতর্ক হচ্ছে। জনগুরুত্বপূণ্য এসব বিতর্ক ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ‘ভারতকে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে’ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি যেন জনগুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়কে কার্পেটের নিচে চাপা দিয়েছেন। ভারতের অনুকম্পা প্রত্যাশায় তার বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক চলছে সর্বোত্রই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনরা ড. মোমেনকে দিল্লির প্রতিনিধি হিসেবে অবিহিত করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। টেলিভিশন, ইউটিউবে সংলাপে তার বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক চলছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে তার কর্মকাণ্ড ও কথাবার্তা নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ-পর্যালোচনা। দেশের বিশিষ্টজনরা বলছেন, ড. মোমেন দেশের সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছেন। গত বছর স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করা বাংলাদেশকে ভারতের ‘বাফার স্টেট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ড. মোমেন। মাঠের বিরোধীদল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়েছেন। জাসদের আ স ম আবদুর রব, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ বেশিরভাগ নেতাই ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্যকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে অবিহিত করেছেন। কেউ কেউ আবার সত্য কথা বলার জন্য মোমেনকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘ভারতের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আওয়ামী লীগ এক যুগ ধরে ক্ষমতায় রয়েছে’। জাগপার সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান ‘দিল্লির সঙ্গে বাংলাদেশের সব গোলামীর চুক্তি’ জনসন্মুখে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনের বক্তব্য আওয়ামী লীগের দলীয় বক্তব্য নয় বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ভারতকে অনুরোধ করতে শেখ হাসিনা এমন দায়িত্ব কাউকে দেয়নি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন কার্যত দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অস্তিত্ব নিয়ে টান দিয়েছেন। ফলে দেশপ্রেমী মানুষ তার বক্তব্যের প্রতিবাদ করছেন। জন্মের পর দীর্ঘ ৫০ বছরে বাংলাদেশে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে নিম্নআয়ের দেশ অতঃপর মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে হাঁটছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সাফল্য দেখিয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো এবং টিকা কার্যক্রমে সাফল্য দেখিয়েছে। দেশের নাগরিকের ভোটের অধিকার, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সেগুলো রাজনৈতিকভাবে সমাধান যোগ্য। কিন্তু দেশের সার্বভৌমত্ব যদি ভূলুষ্ঠিত হয়, তাহলে গণতন্ত্র দিয়ে মানুষ কি করবে? ভারতের তাঁবেদার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের বক্তব্য নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুগলোতে ড. মোমেনের বক্তব্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তার পুরো বক্তব্যজুড়ে অতিস্পর্শকাতর কথা বলেছেন। তার বক্তব্যে পরিষ্কার যা কিছু করা হচ্ছে সবগুলো ভারতের স্বার্থে। এমনকি ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ দিল্লির মোদীর কাছ থেকে যে স্বার্থ রক্ষা করতে পারে; বাংলদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হয়ে তা পারছে না। বরং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা দিল্লি বন্দনায় ব্যস্ত সময় পার করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
চট্টগ্রামে যে জন্মাষ্টমী উৎসবে ড. মোমেন বক্তৃতা দিয়েছেন, তাদের প্রতিনিধি বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিন্দু সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে এমন বক্তব্য দিয়ে আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন। বাংলাদেশের মানুষ এখন মনে করবে এদেশের হিন্দুরা হয়তো ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। এটা দুঃখজনক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. পিনাকি ভট্টাচার্য তার ইউটিউবে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের প্রতিটি কথায় প্রমাণ মেলে বর্তমান সরকার যা করছে সবকিছু ভারতের স্বার্থে। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে তারা কিছুই করছে না। আওয়ামী লীগ সরকারের এ মন্ত্রীর বক্তব্যে পরিস্কার সরকার ক্ষমতায় এসেছে ভারতের অনুকম্পায়। তাই ভারতের স্বার্থের বাইরে সবকিছু করছে। রাশিয়া যেমন অস্ত্র দিয়ে সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকারকে এবং যুক্তরাষ্ট্র অর্থ-অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনের ভলোদমির ঝেলোনস্কির সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে; ড. মোমেন সেভাবেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতের মোদীকে অনুরোধ করেছেন। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ. অথচ ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলো ভোট দিয়ে তাদের সরকার গঠন করতে পারলেও স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গঠন করা হয় ভারতের সহায়তায়।
আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্রনীতি ভারতঘেঁষা এটা সর্বজন বিধিত। ভারতের অসুবিধা হয় এমন কোনো পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেনি আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ একযুগেও। আবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারত বিব্রত হতে পারে এমন কিছু করেনি। তারপরও বাংলাদেশ স্বাধীন এবং সার্বভৌম। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয় ঘটে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে কারা পর্দার আড়ালে থেকে ক্ষমতায় এনেছে সে তথ্য সবাই জানে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকজন লিখেছেন, ২০১৪ সালের সে সময়ের ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদকে দেয়া প্রস্তাবের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। এইচ এম এরশাদ সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, ‘সুজাতা সিং তাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছেন। বলেছেন, আওয়ামী লীগ যাতে ক্ষমতায় থাকতে পারে, সে জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন, দিল্লি আপনার কাছে এ প্রত্যাশা করে।’
দেশে তার বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় চললেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মোটেই নিজের অবস্থানে অটল। ‘দেশের মানুষ বেহেশতে আছে’ বক্তব্যের জন্য তিনি সাংবাদিকদের দায়ী করে ‘আপনার আমাকে খেয়ে দিলেন’ মন্তব্যের মাধ্যমে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘আমি জেনে বুঝেই ভারতের কাছে সহায়তার চাওয়ার কথা বলেছি। আমি আমার বক্তব্য থেকে সরছি না। আমি ভুল কিছু বলিনি’। আমি বলেছি যে শেখ হাসিনা যদি সরকারে থাকেন, তাহলে স্থিতিশীলতা থাকে। আর স্থিতিশীলতা থাকলেই উন্নয়নের মশাল আমরা পাই। আমি ভারতে গেলে আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি বলেছিলাম, কেন? তিনি বলেছিলেন, শেখ হাসিনার সন্ত্রাসবাদ বিরোধিত জিরো টলারেন্সের কারণে আসাম, মেঘালয়সহ এ অঞ্চলে সন্ত্রাসী তৎপরতা নেই। আমি বলেছি, কিছু কিছু দুষ্টু লোক আমার দেশেও আছে, আপনার দেশেও আছে। তারা উস্কানিমূলক কথা বলে তিলকে তাল করে। আমার সরকারের দায়িত্ব আছে, আপনার সরকারেরও দায়িত্ব আছে, তিলকে তাল করার সুযোগ সৃষ্টি না করা। আমরা এটা করলে, আমাদের মধ্যে সম্প্রীতি থাকবে, কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা থাকবে না।
দেশকে খাটো করে, দেশের মানুষের আত্মপরিচয়ের ওপর কালিমা লেপন করে ড. মোমেন কতদিন সুখে (তার ভাষায় বেহেশত) থাকেনÑ সেটাই এখন দেখার বিষয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।