Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এলগারে আটকে গেল স্টোকস-ম্যাককালামের ‘বাজবল’

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

দক্ষিণ আফ্রকার টেস্ট ক্যাপ্টিন ডিন এলগার ক্রিকেটিয় কৌশলে যেমন সিদ্ধহস্ত, একই সঙ্গে মাঠের বাহিরের মস্তিষ্কের লড়াইয়েও প্রখর। গত এপ্রিলে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে নিজেদের মাঠে সিরিজ হেরে বেকায়দায় পরে প্রোটিয়ারা। এরপর প্রথম টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের হঠাৎ করেই এলগার বাহিনী এমন স্ল্যাজিং শুরু করলো যার উত্তর মুমিনুল-মুশফিকদের ছিল না। এই ব্যাপারে টাইগাররা অভিযোগ করলে দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগে গণমাধ্যমে এলগার বলেন,’টেস্টে আসলে পুরষীয় আবহওয়া থাকে।‘ ম্যাচ শুরুর আগে, ঠিক সেই সময়ই বাংলাদেশ হেরে বসে। প্রোটিয়া কাপ্তান সেই টোটকাতেই এবার লর্ডস টেস্টের আগে নাড়িয়ে দিল ইংলিশদির। ম্যাককালাম-স্টোকসসের যুগে ৪টি টেস্ট খেলে সবগুলোতে জয় পায় ত্রি লায়ন্সরা। তাও আবার আগ্রাসনের পূর্ণ পরিচয় দিয়ে। ইংল্যান্ডের সেই ‘মারকাটারি’ ক্রিকেট ব্র্যান্ডকে ইঙ্গিত করে এলগার ম্যাচ শুরুর আগের দিন বলে বসলেন ‘বাজবল’ এর মতন সাহসী ক্রিকেট কতটা টেকসয় সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত নন। এই খোঁচায় কাজও হল চমৎকার। নিউজিল্যান্ড ও ভারতকে উড়িয়ে দেওয়া ইংল্যান্ড এবার নিজেরাই উড়ে গেল লর্ডসে। এই টেস্টে মাত্র আড়াই দিনে ইনিংস ব্যবধানে ১২ রানে ম্যাচ হেরে ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে গেল স্বাগতিকরা। ক্রিকেটের ‘মক্কা’ লর্ডসে এটি স্বাগকদের ইনিংস ব্যবধানে মাত্র চতুর্থ হার। তবে এই ম্যাচের আগের এই তীক্ত স্বাদটিও তারা পেয়েছিল একই প্রতিপক্ষের কাছ থেকে, ২০০৩ সালে। এই ম্যাচে মোট ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা কাগিসো রাবাদা।
সফরকারীরা এই ম্যাচটি খেলেছিল চার পেসার ও এক স্পিনার নিয়ে। তবে গতির হিসেব করলে ২০০৬ সালের পর কোন বিদেশী দল হিসেবে ইংল্যান্দের মাটিতে সবচেয়ে বেশি গতিতে বল ছুড়েছেন প্রোটিয়া পেসাররা। এই আগুনের গোলা মোকাবেলা করতে গিয়েই প্রথম ইনিংসে ১৬৫ রানে প্যাকেট হয়ে যায় ইংলিশরা। নিজেদের একমাত্র ইনিংসে ৩২৬ রান করে সফরকারীরা। লিড পায় ১৬১ রানের। এই রকম ক্রিকেট কন্ডিশনে যা বিশাল। সর্বশেষ ৪ ম্যাচে ইংল্যান্ড যেমন ক্রিকেট খেলেছিল, তা দেখেই হয়ত বা ক্রিকেটপ্রেমীরা ভেবেছিল স্টোকরা ফিরে আসতে পারে ম্যাচে। কিন্তু সেই সুযোগই দিল না নর্কিয়া-রাবাদারা। স্বাগতিকদের দ্বিতীয় ইনিংসের ৮ম ওভারেই ক্রলিকে ফেরান ক্যাশব মহারাজ। বিরতির ঠিক আগে আবারো আঘাত হানেন এই বাঁহাতি স্পিনার। প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ করা পোপকে ফেলেন লেগ বিফোরের ফাঁদে। যদিও উইকেটটি আসে রিভিউ নেওয়াতে। হাতে ৮ উইকেট নিয়ে ও ১২৩ রানে পিছিয়ে থেকে লাঞ্চে যায় ইংলিশরা। বিরতির পরে শুরু হয়ে যায় সফরকারী পেসারদের আক্রমণ। এনগিডির বলে স্লিপে ক্যাচ দেন রুট। যার ফলে দীর্ঘ ৬ বছর পর ঘরের মাঠে দুই ইনিংসেই ২ অংকে পৌঁছাতে ব্যর্থ এই ব্যাটার। এরপরই নর্কিয়ার সেই দুর্দান্ত স্পেল। এই সময় ৩ উইকেট তুলে ইংলিশ ব্যাটিংয়ের হৃদপিণ্ডই শেষ করে দেন এই পেসার। মজার ব্যাপার হচ্ছে ৩টি উইকেটই আসে কট বিহাইন্ড থেকে। যার শুরু বেয়ারস্টোকে ফিরিয়ে দিয়ে। ঘন্টায় ১৪৯ কিলোমিটার ছিল সেই ওভারের গড় গতি। পরের ওভারে এসে তিন বলের মধ্যে তিনি ফিরিয়ে দেন লিস ও বেন ফোকসকে। তৃতীয় ওভারে রাবাদার বলে জীবন পাওয়া লিস ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৫ করেন। টানা ১০ বলে কোন রান না দিয়ে ওই তিন উইকেট নেন নর্কিয়া। বিধ্বস্ত স্বাগতিকরা যখন একশর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শংকায় তখন কাপ্তান স্টোকসের সাথে স্টুয়ার্ট ব্রড ৫৫ রানের জুটি গড়েন। লিসের সমান ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৫ করে ব্রড কাটা পড়েন রাবাদার স্লোয়ারে। এর পরের ওভারে এসেই ২০ রান করা স্টোকসকেও ফেরান রাবাদা। ৮ রানের ব্যবধানে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে ১৪৯ রানেই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। নর্কিয়ার ৩ উইকেটের পাশাপাশি রাবাদা, মহারাজ ও জেনসেন নেন ২টি করে উইকেট। ২৫ আগস্ট
মার্ক বাউচারের অধীনে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট যে নতুন যুগে প্রবেশ করছে ধীরে ধীরে, এই দাপুটে জয় তারই প্রমাণ। এই ম্যাচে বেশ কিছু ব্যাক্তিগত মেইলফকও স্পর্শ করেছেন দুই দলের দুই পেসার। বোলিং স্ট্রাইকরেটে সর্বকালের সেরা হতে কিসিগো রাবাদা বেঁছে নিয়েছিলেন এই ম্যাচকে। আর ক্রিকেটের তীর্থস্থান লর্ডসে স্টুয়ার্ট ব্রড অর্জন করলেন ১০০ উইকেট নেওয়ার কৃতী। তার আগে এই সংস্করণে মুত্তিয়া মুরালিধরন ৩ মাঠে (এসএসসি, ক্যান্ডি ও গল) পেয়েছিলেন ১০০টি করে উইকেটের দেখা। মুরালির স্বদেশী ও বর্তমান বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথও গলে শিকার করেছিলেন ১০০ উইকেট। এবং সর্বশেষ বোলার হিসেবে এই লর্ডসেই লাল বলে উইকেটের সেঞ্চুরি করেছিলেন ব্রডের বোলিং সঙ্গী জেমস অয়ান্ডারসন (১১৭* উইকেট)। ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান মিরপুরে পেয়েছেন ২২৮টি উইকেট। দলের পারফ্রম্যান্স অনুজ্জ্বল হলেও ব্রড তার স্মৃতি থেকে এই ম্যাচ মুছতে পারবেন না। ওল্ড ট্রাফোর্ডে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট অনুষ্ঠিত হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ