গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রাজধানীর ব্যস্ত একটি রাস্তায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কংক্রিটের বিশাল গার্ডার ক্রেন দিয়ে তোলার সময় চলন্ত গাড়ির ওপর পড়ে পাঁচ জন নিহত হয়েছেন।
গতকাল সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে উত্তরা জসীমউদ্দীন রোডের মোড়ে বিপণিবিতান আড়ংয়ের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এর প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর গার্ডারটি সরিয়ে মরদেহগুলো বের করে আনেন উদ্ধারকর্মীরা। নিহতদের সবাই একই পরিবারের সদস্য বলে জানা গেছে। তারা একটি বউভাতের অনুষ্ঠান শেষে ঢাকার কাওলা থেকে আশুলিয়ার দিকে যাওয়ার পথে গার্ডারটি ধসে পড়ে।
গার্ডারের নীচে পিষ্ট হয়ে যাওয়া গাড়িটি থেকে আহত অবস্থায় নবদম্পতিকে উদ্ধার করা হয়। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও শঙ্কামুক্ত আছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন বরের বাবা, কনের মা, খালা ও খালাতো ভাইবোন।
জানা যায়, ট্রানজিট সিস্টেম’র (বিআরটি) প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডারটি গাড়িতে তোলার সময় হঠাৎ বিকট শব্দে প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে। এতে প্রাইভেটকারে থাকা একই পরিবারের পাঁচ আরোহীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। কী নিষ্ঠুর, কী নির্মম মৃত্যু! এর দায় নেবে কে? আর কতকাল এভাবে সংহার হবে তরুণ-তাজা প্রাণ। স্বজনদের আহাজারি কি থামবে না? দুর্ঘটনার সময় রাস্তা খোলা ছিল, কাজও চলছিল স্বাভাবিকভাবে। ছিল না কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনি। প্রাইভেট কারের পেছনে একটি বাস ছিল, বাসটি দ্রুত ব্রেক কষে বামে সাইড করে ফেলে। তা না হলে আরো বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারতো। এ নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় চলছে তুমুল সমালোচনা।
আদ্রিলা ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, এই দুর্ঘটনার জন্য প্রকল্পের লোকজনকে শাস্তি দেওয়া উচিত। কাজের ক্ষেত্রে তারা কতটা অবহেলা ছিল, তাদের সেটা ভিডিওতে ফুটে উঠেছে। উন্নয়নের নীচে চাপা পড়ছে আজ জনগণ।
জিল্লুর রহমান নামে একজন লিখেছেন, এটা নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়, দায়িত্বে অবহেলাজনিত হত্যাকাÐ। দায়ীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার।
মিজানুর রহমান নামে একজন লিখেছেন, কে বলেছে এটা দুর্ঘটনা। যেই ক্রেন গার্ডারকে তুলতে পারে না, ওই ক্রেন ব্যবহারের অনুমতি কে দেয়। ক্ষমতাবানরা সেফটি সিকিউরিটির তোয়াক্কা করবে না শুধু টাকার ধান্দা করবে, তাহলে তো এমন দুর্ঘটনা ঘটবেই।
অনামিকা বাবলি নামে একজন লিখেছেন, এই দেশে মানুষের জীবনের ন্যুনতম মূল্য নেই। তাই কাজ করার সময় সর্তকতারও প্রয়োজন হয় না! বন্ধের দিন না হলে হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি হত। এর দায় কেউ নিবে, যে হারিয়েছে সে বুঝবে।
মো. শাখাওয়াত হোসাইন নামে একজন লিখেছেন, চারদিকে উন্নয়ন আর উন্নয়ন। উন্নয়নের নীচে চাপা পড়েছে আজ জনগণ।
কেয়া ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা দেশের উন্নয়ন করা হয়েছে। উন্নয়নের নীচে চাপা পড়ে আছে কয়েকটি তাজা প্রাণ।
ইঞ্জিনিয়ার মো. সারোয়ার হোসাইন নামে একজন লিখেছেন, এতো ব্যস্ত একটা রাস্তায় কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনি ছাড়া কিভাবে ক্রেন দিয়ে গার্ডার উঠানো হয়। ক্রেনের সক্ষমতা কতটুকু ছিল? এই দুর্ঘটনা কোনো ভাবেই মানা যায় না। সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
মিথুন সরকার নামে একজন লিখেছেন, একজনের দ্বায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে একটা পরিবার শেষ, সাথে ৫টা মানুষের জীবন। ঠীকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত। আইনের আওতায় এনে দ্রæত শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
শাহজাহান বিক্রম নামে একজন লিখেছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজের জন্য একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে গেল। এই দায় কে নিবে?
অনেকেই লিখেছেন, এমন কাজ করতে হলে নিরাপত্তা বেষ্টনি দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল না। এর দায় কী সরকার এড়াতে পারে?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।