পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা ও অমানবিক নির্যাতন বন্ধ এবং রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে ঢাকাস্থ মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতের নিকট আল্লামা শাহ আহমদ শফি তার স্মারকলিপিতে বলেছেন, আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন যে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আরাকানের মুসলমানরা মিয়ানমারের নাগরিক হিসাবে বসবাস করে আসছে। সমাজ-রাষ্ট্র ও সংস্কৃতিতে মুসলমানরা অনস্বীকার্য অবদান ও প্রভাব রেখে আসছে। ২০০ বছরেরও বেশি সময় আরাকান মুসলিম রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলো। সতের শতকের প্রায় শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গা রাজ্যে মুসলিম বৌদ্ধ মিলেমিশে শান্তিপূর্ণভাবে স্বাধীনতা ভোগ করছিলো। অথচ ১৯৮২ সালে মিয়ানমারের তৎকালীন সামরিক সরকার নাগরিকত্ব আইন করে তাদের নাগরিক স্বীকৃতি বাতিল করে দেয়। অথচ রোহিঙ্গারা এক হাজার বছর ধরে এখানকার বৈধ অধিবাসী।
আজ মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় নির্যাতনে রোহিঙ্গাদের উপর মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। জনপদের পর জনপদ পরিণত করা হচ্ছে পোড়া ভূমিতে। রাখাইন মগদস্যু এবং সামরিক বাহিনীর যৌথ বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী আরাকানে নিরস্ত্র, নিরীহ মুসলমান নিধন উৎসবে মেতে উঠেছে। ভয়াল গণহত্যা চালানো হচ্ছে। পুড়িয়ে, গলাকেটে, গুলি করে, লোমহর্ষক নানা নির্যাতনে হত্যা করা হচ্ছে অসংখ্য রোহিঙ্গাকে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা কেউই বাদ পড়ছে না অমানবিক নিপীড়ন থেকে। জীবন্ত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, জ্যান্ত মানুষের উপর দলবদ্ধ মগদস্যুরা পৈশাচিক নৃত্য করছে। মানুষ নামের পশুরা ধর্ষণ করছে এবং হত্যা করছে অসহায়, নিরীহ মা-বোনদের। হাত-পা বেঁধে ফেলে দিচ্ছে সাগরে। মসজিদগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে। কাঁচা-পাকা ঘরসমূহ মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে, সাজানো জনপদগুলো বধ্যভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে। ফসলের ক্ষেত, বাগান আগুনে জ্বালিয়ে ছাই করে দিচ্ছে। মুসলমানদের সবুজ নিঃসর্গে বইছে রক্তস্রোত। অমানবিকতা ও নৃশংসতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শিত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের জীবনকে করে তুলেছে অসহনীয়, যন্ত্রণাদায়ক।
রোহিঙ্গারা হারিয়েছে সব ধরনের মানবিক অধিকার। তারা হয়ে আছে নিজদেশে পরবাসী। তারা বঞ্চিত নাগরিক অধিকার থেকে। প্রতীয়মান হচ্ছে, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সুচির নেতৃত্বে পরিচালিত মিয়ানমারের প্রশাসনই রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যা এবং অমানবিক সন্ত্রাসী কার্যকলাপের হোতা।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিচালিত রাষ্ট্রীয় হত্যাযজ্ঞ ও বর্বরতার নিকট প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিকদেরকে স্পর্শ করেছে। তাছাড়া মুসলমান হিসাবে আমরা অন্য মুসলমান ভাই-বোনদের কঠিন বিপদে নিশ্চুপ থাকতে পারি না। তাই আমাদের দাবীÑ এক- রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা বন্ধ করুন। রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করুন। দুই-রোহিঙ্গাদের জন্য নিজ দেশ মিয়ানমারে স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। যাদেরকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে এবং যারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে, তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করুন। তিন- রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষার নিশ্চয়তা বিধানকল্পে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। চার- রোহিঙ্গাদের গণহত্যায় জড়িত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করুন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিন। পাঁচ- আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা গুলোকে সেখানে নির্বিঘেœ কাজ করার সুযোগ দিন।
বার্মিংহাম আল-ইসলাহের প্রতিবাদ সভা ও দোয়ার মাহফিলে বক্তারা
মিয়ানমারের বিপন্ন রোহিঙ্গাদের সাহায্যে মুসলিম দেশগুলোর এগিয়ে আসা জরুরি
বার্মিংহাম থেকে, হুসাম উদ্দিন আল হুমায়দী : মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা নির্যাতন ও সে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়ার প্রতিবাদে আনজুমানে আল ইসলাহ ইউকে বার্মিংহাম শাখার উদ্যোগে গত ৩০ নভেম্বর দুপুরে স্থানীয় লজেলস বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টারে এক প্রতিবাদ সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
বার্মিংহাম আল ইসলাহর প্রেসিডেন্ট মাওলানা কাজী সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও জেনারেল সেক্রেটারি মাওলানা হুসাম উদ্দিন আল হুমায়দীর উপস্থাপনায় সভায় বক্তারা বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে, অসংখ্য নারী-পুরুষ ও শিশুদের হত্যা করে তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি নিরীহ মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে।
বক্তারা আরো বলেন, রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের চিত্র সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছালেও জাতিসংঘসহ বিশ্বের সকল ক্ষমতাধর রাষ্ট্র এবং প্রতিষ্ঠানগুলো নির্যাতনে প্রতিবাদ না করে নীরব ভূমিকা পালন করছে। মিয়ানমার সরকারকে এই জঘন্য অমানবিক কাজ বন্ধ করে রোহিঙ্গা মুসলিমদের পূর্ণ নিরাপত্তা ও যথাযথ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার জন্য বিশ্বের কোনো প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্র কোনো রকম চাপ প্রয়োগ করছেনা বলেও তারা অভিযোগ করেন।
শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সাং সুচির নীরবতাকে রাষ্ট্রপরিচালিত নির্যাতনে তার সম্মতি বলেও তারা অভিযোগ ব্যক্ত করেন। বক্তারা আরো বলেন, পৃথিবীর কোনো জাতিই নির্যাতন করে টিকে থাকতে পারে নাই এবং কোন জাতিকেই নির্যাতন, হত্যা ও দেশ ছাড়া করে ধ্বংস করা যায় না। বরং, নির্যাতনকারীরাই যুগে যুগে ধ্বংস হয়ে গেছে।
মিয়ানমারের নির্যাতনকারীরাও এক দিন সমূলে ধ্বংস হবে উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, নির্যাতনের জন্য এক দিন অবশ্যই তাদেরকে মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। বক্তারা এ নির্যাতন বন্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখার জন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সভায় অন্যন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের ক্যাশিয়ার হাজী মো: সাহাব উদ্দিন, ওরগেনাইজিং সেক্রেটারি মো: রাহয়ান আহমদ চৌধুরী, প্রেস এন্ড পাবলিসিটি সেক্রেটারি মাওলানা এহসানুল হক, এডুকেশন এন্ড কালচারাল সেক্রেটারি মাওলানা বদরুল হক খান, নির্বাহী সদস্য হাজী তেরা মিয়া, মাওলানা বুরহান উদ্দিন আহমদ, হাজী সৈয়দুর রহমান, মাস্টার আবুল বাসির, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা বসির উদ্দিন ও মাশুক মিয়া।
সভা শেষে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মিলাদ শেষে মিয়ানমারসহ সমগ্র বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানদের শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ মুনাজাত করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।