বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আম্বিয়ায়ে কেরাম কবর দেশে জীবিত আছেন : মহানবী মুহাম্মাদ (সা.) এবং অন্যান্য নবী রাসূলগণ (আ.) পার্থিব জীবনের পরিসমাপ্তিতে কবরদেশে জীবিত আছেন। তাঁদের এ জীবন বায়যাখী, হিসসী ও দৈহিক জীবন বটে।
(ক) আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন : যারা আল্লাহর পথে মরণ বরণ করেন তাদের সাধারণ মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা তা পুরাপুরি অনুধাবন করতে পারো না। (সূরা বাকারা : ১৪৫)। (খ) আল্লাহর পথে শাহাদত বরণকারীদের তোমরা মৃত ভেবো না। বরং তারা রবের সান্নিধ্যে জীবিত রিজিক প্রাপ্ত। (সূরা আলে ইমরান : ১৬৯)। (গ) যখন তারা নিজেদের উপর জুলুম ক’রে আপনার নিকট আগমন করে অনন্তর আল্লাহর দরবারে ইস্তিগফার করে এবং রাসূল (সা.) ও তাদের জন্য আল্লাহর সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তবে তারা অবশ্যই আল্লাহ পাককে তওবাকবুলকারী ও অতীব দয়ালু পাবে। (সূরা নিসা-৬৪)।
(ঘ) হাদীসে হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন : নবীগণ তাদের কবরে জীবিত, নামাজ আদায় করেন। (মুসনাদে আবু ইয়া’লা-৩/২১৬)। (ঙ) আমি বলব, নবীদের হায়াতের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন নেই। কেননা, নবীগণ শহীদগণ হতে শ্রেষ্ঠ। আর শহীদগণ তো তাদের রবের নিকট যিন্দা। সুতরাং নবীগণ তো প্রশ্নাতীতভাবেই জিন্দা থাকবেন। (উমদাতুল কারী-১১/৪০২)।
(চ) শহীদগণ যেহেতু নকলী দলিলের ভিত্তিতে জীবিত প্রমাণিত, কোরআনে তার সুস্পষ্ট বর্ণনা আছে সুতরাং নবীগণ জীবিত থাকবেন। কারণ তারা শহীদগণ হতে উত্তম। (ফাতহুল বারী- ৬/২৮৮)। (ছ) নবীগণ কবরে জীবিত ও নামাযে রত এ হাদীস সম্পূর্ণ সহীহ। (মিরকাত-২/২৬১)। (জ) হাদীসে প্রমাণিত যে, নবীগণ কবরে জীবিত আছেন। ইমাম বায়হাকী ও মুনযিরী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। নাইলুল আউতার-৩/২৬১)।
আম্বিয়ায়ে কেরাম সালাত সালাম শ্রবণ করেন উত্তর দেন : হজুরপাক (সা.) ও অন্যান্য নবীগণের কবর পার্শ্বে দাঁড়িয়ে কোনো ব্যক্তি সালাত-সালাম পড়লে তিনি নিজে তা শ্রবণ করেন ও উত্তরও দিয়ে থাকেন। (ক) হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেনÑ কোনো ব্যক্তি আমার ওপর সালাম প্রেরণ করলে আমার রুহ আল্লাহ ফেরত দেন। (সুনানু আবি দাউদ-১/২৮৬)।
(খ) হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেনÑ রাসূল (সা.) ফরমানÑ যে ব্যক্তি আমার কবর পার্শ্বে সালাম জানায়, আমি তা শ্রবণ করি। আর যে দূর হতে সালাত-সালাম জানায়, তা আমার নিকট পৌঁছে দেয়া হয়। (কানযুল উম্মাল-১/৪৯২)। (গ) আবদুল্লাহ বিন মাসউদ বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেনÑ আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে পরিভ্রমণকারী একদল ফেরেস্তা নিযুক্ত করেছেন, তারা আমার নিকট উম্মাতের সালাম পৌঁছে দিয়ে থাকেন। (সুনানু নাসায়ী-১/১৮৯)।
(ঘ) আইম্মায়ে কিরাম একমত যে, রাসূল (সা.) এর কবর জিয়ারত কালে তাঁকে তাঁর দুই সাহাবীকে সালাম করবে। দলিল, হযরত আবু হুরাইরা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত আবু দাউদ শরীফের হাদীস। রাসূল (সা.) বলেছেন : যে কোনো মুসলিম আমাকে সালাম করলে আল্লাহ আমাতে রুহ ফিরিয়ে দেন, আমি তার সালামের উত্তর দেই। এটি একটি উত্তম হাদীস। (ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়্যাহ-৪/৩৬১)।
আম্বিয়ায়ে কেরাম কবরে ইবাদতে লিপ্ত : আম্বিয়া কিরাম (আ.) আপন আপন কবরে বিভিন্ন প্রকার ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত আছেন। তবে তাদের এ ইবাদত পার্থিব জগতের ইবাদতের ন্যায় শরীয়ত কর্তৃক প্রদত্ত দায়িত্ব হিসাবে নয় বরং শুধুমাত্র আত্মিক প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তির জন্যই ইবাদত করে থাকেন। (ক) হযরত সুলাইমান তাইমী বলেন, আমি হযরত আনাস (রা.) কে বলতে শুনেছি, রাসূল (সা.) বলেছেন যে, আমি হযরত মুসা (আ.) এর নিকট দিয়া গমন করলাম, তিনি কবরে সালাতে নিমগ্ন ছিলেন। অন্য বর্ণনায় ঘটনাটি মি’রাজ রাত্রের ঘটনা বলে উল্লেখ আছে। (সহীহ মুসলিম-২/২৬৮)
(খ) ওফাতের পর নবীগণের সালাত বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। কোরআন হাদীসে এর বিবরণ বিদ্যমান। এর দ্বারাই নবীদের মরণোত্তর জীবন প্রমাণিত হয়। (ফাতহুল বারী-১/১৩০)। (গ) ইমাম কুরতুবী বলেন : নবীগণের নিকট ইবাদত বড় প্রিয়। তাই তারা নিজের আত্মিক আহ্বানেই ইবাদতে মশগুল থাকেন। তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব হিসাবে ফরজ-ওয়াজিব মনে করে ইবাদত করেন না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।